বিশ্বের কোন দেশে কে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হবেন, ট্রাম্প কি সেটারও নিয়ন্ত্রক হতে চান

ট্রাম্প বরাবরই প্রকাশ্যে বর্ণবাদী কথা বলেছেন। এতে অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান নিজেদের বর্ণবাদী মনোভাব প্রকাশে সাহস পেয়েছে।ছবি: এএফপি

বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধানই সাধারণত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলেন। যদিও কয়েক দশক ধরে পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খেলা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একজন নেতা, যিনি এসব রাখঢাক বা ভণিতার ধার ধারেন না।

রিপাবলিকান পার্টিকে একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক আদর্শে রূপান্তর করা ট্রাম্পের কাছে রাজনীতি মানেই হলো প্রভাব খাটানোর এক মোক্ষম হাতিয়ার। আর এই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা তিনি কেবল নিজ দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ রাখছেন না।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথা ভাঙার আরও একটি নজির গড়ে ট্রাম্প এখন প্রকাশ্যে তাঁর পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন। এমনকি তাঁদের অনুকূলে সংশ্লিষ্ট দেশের রাজনৈতিক ও বিচারব্যবস্থাকে নমনীয় করার চেষ্টাও করছেন।

ট্রাম্পের এমন সমর্থন যে কেবল মৌখিক নয়, তার প্রমাণ মেলে হোয়াইট হাউসের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে। সেখানে নথিপত্রেই মিত্রদেশের নেতাদের হটিয়ে কট্টর ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদী নেতাদের ক্ষমতায় আনার প্রচ্ছন্ন সমর্থনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প যেন এক বিশ্বজনীন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, দক্ষিণ কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আটলান্টিকের ওপারের দেশগুলোর রাজনীতিকেও তিনি নিজের ছাঁচে গড়তে চাইছেন।

মূলত যেসব নেতা তাঁর মতো জনতুষ্টিবাদী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যাঁরা তাঁর স্তুতি করেন কিংবা যাঁরা তাঁর মতোই আইনি লড়াইয়ে জর্জরিত, তাঁদের ভাগ্য বদলাতেই ট্রাম্প বেশি আগ্রহী।

গত সোমবার ট্রাম্প আবারও ইসরায়েলের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। দেশটিতে তিনি বেশ জনপ্রিয় এবং আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের আগে সেখানে তাঁর ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে ঘুষ ও জালিয়াতির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, নেতানিয়াহুর জন্য তিনি যে ক্ষমাপ্রার্থনা অনুরোধ করেছেন, সেটি ‘প্রক্রিয়াধীন’। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে কথা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি (যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠা নেতানিয়াহু) একজন যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বীর। তাঁকে কেন ক্ষমা করা হবে না?

অবশ্য হারজোগের দপ্তর দ্রুতই এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে এমন কোনো আলাপ হয়নি এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনেই নেওয়া হবে।

নেতানিয়াহুকে যদি ফৌজদারি বিচার থেকে রক্ষা করা যায়, তবে সেটি তাঁর ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তা লাঘবের পাশাপাশি নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেও সাহায্য করবে। বিনিময়ে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ঋণী হয়ে থাকবেন।

ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে গত সোমবার নেতানিয়াহুর দেওয়া স্তুতির জবাবে ট্রাম্পও যেভাবে তাঁর প্রশংসা করেছেন, তাতে এই সমীকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। এটি আমার হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে আসা।’ সেই সঙ্গে যুদ্ধবাজ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ট্রাম্পই প্রথম বিদেশি হিসেবে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ইসরায়েল প্রাইজ’ পেতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ‘শান্তি’ বিভাগে এই পুরস্কার ট্রাম্পের জন্যই প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পাম বিচে ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে এক বৈঠকে যোগ দিতে আসার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পকে খুশি করার কৌশলে নেতানিয়াহু বেশ পারদর্শী। এর আগে এক সফরে তিনি ট্রাম্পের বহু আকাঙ্ক্ষিত ‘নোবেল শান্তি পুরস্কারের’ জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন।

যদিও গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে ইসরায়েলের গড়িমসিতে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনেরা নেতানিয়াহুর ওপর কিছুটা বিরক্ত বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ট্রাম্পের এই প্রকাশ্য সমর্থন নেতানিয়াহুর জন্য এক অমূল্য রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
ট্রাম্পের ভাষায়, নেতানিয়াহুর জায়গায় অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী থাকলে ইসরায়েল হয়তো আজ অস্তিত্ব হারাত। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ইসরায়েলকে টেনে তুলতে তাঁর মতো একজন বিশেষ মানুষেরই প্রয়োজন ছিল। মাত্র কয়েক বাক্যে ট্রাম্প যেন নেতানিয়াহুর পরবর্তী নির্বাচনের প্রচারপত্রই লিখে দিলেন।

কূটনৈতিক শিষ্টাচার

ঐতিহাসিকভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বিদেশি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধাবোধ করেন। প্রথমত এটি একধরনের ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’। কোনো প্রেসিডেন্টই চাইবেন না, অন্য দেশ এসে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে সাহায্য করে সেই শিষ্টাচার লঙ্ঘনের প্রতিশোধ নিক।

এটি গণতন্ত্রের এক মৌলিক নীতি যে ভোটাররাই ঠিক করবেন তাঁদের নেতা কে হবেন। (যদিও ২০২০ সালের পরাজয় মেনে নিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বীকৃতিই বলে দেয় যে তিনি এই নীতিতে কতটা বিশ্বাসী)।

এ ছাড়া নির্দিষ্ট কোনো নেতাকে সমর্থন দেওয়ার নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশে মার্কিনবিরোধী মনোভাব তৈরি হতে পারে কিংবা নতুন কোনো নেতা ক্ষমতায় এলে শুরুতেই তাঁর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিদেশি রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা থেকে খুব কমই বিরত থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, গত সপ্তাহে হন্ডুরাসের রক্ষণশীল ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী নাসরি আসফুরাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ভোট গণনার পর আসফুরা জয়ী না হলে এর ফল ‘খুবই ভয়াবহ’ হবে বলে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প।

পরাজিত মধ্য ডানপন্থী প্রার্থী সালভাদর নাসরল্লার দাবি, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপই তাঁর পরাজয়ের মূল কারণ। এর মধ্যে মাদক পাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ বছরের জেল খাটা হন্ডুরাসের এক সাবেক প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘটনাটিও অন্তর্ভুক্ত।

পশ্চিম গোলার্ধের রাজনীতিকে নিজের ভাবমূর্তিতে ঢেলে সাজাতে ট্রাম্প বারবার মার্কিন ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। বন্ধু ও ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগে বিচার শুরু হওয়ায় ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প।

এই ঘটনা দেখিয়ে দেয়, ট্রাম্প আমদানি শুল্ককে কেবল বাণিজ্যের অনুষঙ্গ নয়; বরং পররাষ্ট্রনীতির ‘অস্ত্র’ হিসেবেও ব্যবহার করছেন।

বর্তমানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিশাল এক নৌবহর মোতায়েন করে চাপ প্রয়োগ করছেন। যদিও এর প্রকাশ্য অজুহাত হলো মাদক ব্যবসা বন্ধ করা। মাদুরোর বিদায় হয়তো দারিদ্র্যপীড়িত লাখ লাখ ভেনেজুয়েলানের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের আসল উদ্দেশ্য কারাকাসে নিজের আদর্শের অনুসারী সরকার বসিয়ে ক্ষমতা বাড়ানো।

আগামী বছর কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপরও ট্রাম্পের কড়া নজর রয়েছে। ক্রিসমাসের ছুটিতে তিনি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে সোজাসাপটা ভাষায় ‘সাবধান’ হওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পেত্রো অবশ্য সিএনএনকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ওপর ট্রাম্পের এই চাপ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নয়; বরং তেলের নিয়ন্ত্রণের জন্য।

আর্জেন্টিনার রাজনীতিতেও ট্রাম্প তাঁর অর্থনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন। দেশটির ২০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজের শর্ত হিসেবে তিনি তাঁর বন্ধু ও ‘মাগা হিরো’ হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে চান।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ কোরিয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দাবার চাল কেবল পশ্চিম গোলার্ধেই সীমাবদ্ধ নয়। গত মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা যখন ওভাল অফিসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন ট্রাম্প একটি বিতর্কিত ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে নিজ দেশেই অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করেন।

ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা গণহত্যার শিকার হচ্ছে, যা দেশটিতে বর্ণবাদী উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালার শামিল ছিল।

একইভাবে আগস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ুং যখন ওভাল অফিসে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি উসকানিমূলক বার্তা দিয়ে বসেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় গির্জায় তল্লাশির অভিযোগ তুলে তিনি দেশটিকে অস্থিতিশীল বলে ইঙ্গিত দেন।

যদিও লি জে মিয়ুং চাতুর্যের সঙ্গে ট্রাম্পকে দুটি ‘মাগা’ কাউবয় হ্যাট এবং একটি ব্যক্তিগত গলফ পুটার উপহার দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। তবে এই ঘটনা ছিল এক সতর্কবার্তা। অন্য নেতাদের মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করতে ট্রাম্প যেকোনো সীমা অতিক্রম করতে পারেন, এটি তারই প্রমাণ।

ইউরোপের স্থিতিশীলতায় হানা

ট্রাম্প প্রশাসন এখন ইউরোপের মধ্যপন্থী ও মধ্য বামপন্থী সরকারগুলোকে অস্থিতিশীল করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। নতুন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, মুসলিম অভিবাসনের কারণে ইউরোপীয় সংস্কৃতি তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারানোর হুমকিতে রয়েছে।

এই কৌশল ইউরোপের তথাকথিত ‘দেশপ্রেমিক দলগুলো’র (কট্টর ডানপন্থী) ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে সমর্থন করে। মার্কিন নীতির লক্ষ্য এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর বর্তমান ধারার বিরুদ্ধে একটি ‘প্রতিরোধ’গড়ে তোলা।

ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নেতারা মনে করেন, ট্রাম্প–সমর্থিত কট্টর ডানপন্থী দলগুলো, যেমন ফ্রান্সের ন্যাশনাল র‍্যালি, জার্মানির এএফডি এবং যুক্তরাজ্যের রিফর্ম ইউকে-উদারনৈতিক গণতন্ত্রের কাঠামোর জন্য বড় হুমকি।

৮০ বছর ধরে যারা ইউরোপের স্বাধীনতার গ্যারান্টার ছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন তাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, তা কেউ কল্পনাও করেনি।

হস্তক্ষেপের পুরোনো খাসলত

অবশ্য অন্য দেশের রাজনীতিতে নাক গলানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এই কাজ করে আসছে, যদিও আগে তা করা হতো গোপনে বা অন্য কোনো ছদ্মবেশে। ট্রাম্পের সমর্থকেরা ১৯৮০-র দশকে রোনাল্ড রিগ্যান এবং মার্গারেট থেচারের মধ্যকার সেই আদর্শিক বন্ধুত্বের উদাহরণ দিতে পারেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ইতিহাস অনেক সময় ছিল বেশ কলঙ্কিত। ১৯৫৩ সালে ইরানে সিআইএয়ের মদদে অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ১৯৬১ সালে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোকে হটাতে ব্যর্থ ‘বে অব পিগস’ আক্রমণ—সবই ছিল সেই ছক।

লাতিন আমেরিকার চিলি, নিকারাগুয়া, পানামা ও গুয়াতেমালায় যুক্তরাষ্ট্র বারবার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়েছে, যার অনেকগুলোই শেষ পর্যন্ত সামরিক একনায়কতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। এমনকি ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র না পেয়ে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে তথাকথিত ‘ফ্রিডম এজেন্ডা’ চালানো হয়েছিল।

সম্প্রতি বারাক ওবামাকেও এই খেলায় দেখা গেছে। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট ভোটের আগে তিনি ব্রিটিশদের সতর্ক করেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়লে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে ‘পেছনের সারিতে’ অপেক্ষা করতে হবে। ওবামার সেই মন্তব্য হিতে বিপরীত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট জয়ী হয়, যা ছিল ট্রাম্পের পরবর্তী জয়েরই এক আগাম সংকেত।

ওবামাসহ আগের অনেক প্রেসিডেন্টই বিদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন, তবে ট্রাম্পের মতো এত প্রকাশ্য কেউ ছিলেন না। পূর্বসূরিদের শুরু করা নীতিকেই ট্রাম্প এক চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সবখানে একই সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারের এই কৌশল তাঁর কর্তৃত্ববাদী চরিত্র এবং তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলনের বিশ্বজয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাই প্রতিফলিত করে।