‘কল্পনায় প্রতিদিন পুরুষের সঙ্গে প্রেম করতেন ওবামা’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
ছবি: রয়টার্স

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কল্পনায় প্রতিদিন পুরুষদের সঙ্গে প্রেম করতেন। ৪০ বছর আগে সাবেক প্রেমিকা অ্যালেক্স ম্যাকনেয়ারকে লেখা এক চিঠিতে ওবামা এই কথা লিখেছেন। সম্প্রতি নিউইয়র্ক পোস্ট পুরোনো চিঠিটি প্রকাশ্যে এনেছে।
চিঠিতে সাবেক প্রেমিকা অ্যালেক্স ম্যাকনেয়ারকে নিজের মানসিকতা জানিয়েছিলেন ওবামা। ওবামা লিখেছেন, ‘তুমি জানো, আমি রোজ পুরুষদের সঙ্গে প্রেম করি, তবে সেটা কেবল কল্পনায়।’

প্রেমিকাকে দেওয়া চিঠিতে ওবামা আরও লিখেছেন, তিনি নারী ও পুরুষের দুটি সত্তাই মনে ধারণ করেন। তবে শারীরিকভাবে তিনি একজন পুরুষ। সেটা তিনি মেনে নিয়েছেন।

চিঠিটি ১৯৮২ সালের নভেম্বরে লেখা। তখন ওবামার বয়স ২১ বছর। সে সময় প্রেমিকা ম্যাকনেয়ার ও তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের অক্সিডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। চিঠিটি বর্তমানে জর্জিয়ার আটলান্টায় এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা আছে।

সম্প্রতি পুলিৎজারজয়ী ইতিহাসবিদ ও বারাক ওবামার জীবনী লেখক ডেভিড গ্যারো দাবি করেছেন, ওবামা নিয়মিত পুরুষদের সঙ্গে প্রেম করার বিষয়ে কল্পনা করতেন। এই দাবির পর চলতি মাসের শুরুর দিকে চিঠির বিষয়বস্তু নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০১৭ সালে গ্যারো ওবামার জীবন নিয়ে ‘রাইজিং স্টার: দ্য মেকিং অব বারাক ওবামা’ শিরোনামে একটি বই লিখেছিলেন।

লন্ডনভিত্তিক ট্যাবলেট সাময়িকীকে গত ২ আগস্ট দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্যারো ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে তিনি ওবামার সাবেক তিনজন প্রেমিকার কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিলেন। তখন তিনি ওবামার কর্মজীবনের শুরুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন।
গ্যারো বলেছেন, ‘ম্যাকনেয়ার যখন আমাকে ওবামার চিঠিগুলো দেখিয়েছিলেন, তখন তিনি চিঠির একটি অনুচ্ছেদ সম্পাদনা করেছিলেন। ওই অনুচ্ছেদের বিষয়ে শুধু বলেছিলেন, এটি সমকামিতা প্রসঙ্গে।’

ম্যাকনেয়ার চিঠিগুলো এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিক্রি করেছিলেন। এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠিগুলোর ছবি তুলতে না দেওয়ায় গ্যারো অধ্যাপক হার্ভে ক্লেহারকে প্রেমের চিঠিগুলো হাতে লিখে প্রতিলিপি করতে বলেছিলেন। এ জন্য তিনি হার্ভেকে এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে যেতে বলেছিলেন। হার্ভে সেখানে একটি পেনসিল নিয়ে বসে চিঠির অনুলিপি করেন। সেই চিঠিতে পুরুষদের সঙ্গে প্রেম করার বিষয়ে ওবামার নিয়মিত কল্পনার কথা লেখা ছিল।

জীবনীগ্রন্থ লেখার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা গ্যারোকে সহযোগিতা করেছিলেন। এর আগে তিন দিন আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ওবামার সাক্ষাৎকার নেন গ্যারো। তবে ওই চিঠির বিষয়ে ওবামা প্রকাশ্যে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।

ওবামার ‘রাইজিং স্টার: দ্য মেকিং অব বারাক ওবামা’ জীবনীগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়, ওবামা তাঁর বর্তমান স্ত্রী মিশেল ওবামার সঙ্গে দেখা করার আগে আরেক নারীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গ্যারোর সঙ্গে আলাপকালে ওবামার সাবেক প্রেমিকা শিলা মিয়োশি জাগার জীবনী লেখককে বলেছিলেন, ‘৮৬ সালের শীতে যখন আমরা আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন ওবামা আমাকে বিয়ে করার কথা বলেছিলেন।’

ওবামা ও শিলা বন্ধুদের মাধ্যমে পরিচিত হন। এরপর প্রেমে পড়েন। ১৯৮৬ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ওবামা শিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় শিলার বয়স ছিল ২৩ বছর। শিলা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে তাঁরা একসঙ্গে থাকতেন। ওবামার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এরপর তাঁরা আলাদা হয়ে যান।

শিলা গ্যারোকে বলেছেন, ‘হঠাৎ তিনি (ওবামা) খুব উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠলেন। স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের সম্পর্কের এক বছরের মাথায় ১৯৮৭ সালে তাঁর এই পরিবর্তনটা ঘটে। তত দিনে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।’

ওই বইয়ে গ্যারো আরও লিখেছেন, জাতিগত বিদ্বেষ থেকে জাপানি ও ডাচ বংশোদ্ভূত শিলার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন ওবামা। গ্যারো দাবি করেছেন, ওবামা মনে করতেন শিলাকে বিয়ে করলে আফ্রিকান-আমেরিকান রাজনীতিক হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গ্যারো বলেছেন, আইন স্কুলের প্রথম বর্ষ থেকেই ওবামা ও শিলা একে অপরের সঙ্গে মিশতে থাকেন। প্রায় একই সময়ে ওবামা শিকাগো ল ফার্মে কর্মরত অবস্থায় মিশেল ওবামার সঙ্গেও মিশতেন।
পরে ১৯৯২ সালে ওবামা মিশেলকে বিয়ে করেন। ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে তাঁদের প্রথম সন্তান মালিয়া ও ২০০১ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় কন্যা সাশার জন্ম হয়।