অনুমোদনহীন চিঠি পাঠানোর পর আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হাঁটছেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ এপ্রিল ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্প প্রশাসন সুদূরপ্রসারী কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে বলে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, এসব দাবিসংবলিত একটি চিঠি সরকারি কর্মকর্তারা অনুমোদন ছাড়াই তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।

গত শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হার্ভার্ড ১১ এপ্রিল এ চিঠি পেয়েছে। কিন্তু সেটি ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুমোদন বা ছাড়পত্র দেওয়ার আগেই পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন—এমন কিছু সূত্রের বরাতে পত্রিকাটি এ খবর প্রকাশ করেছে। তবে সূত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

আরও পড়ুন

চিঠি পাওয়ার তিন দিন পর হার্ভার্ড দাবিগুলো নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এসব দাবি মেনে নেওয়ার অর্থ হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, নিয়োগ ও শিক্ষাদানবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া।

হার্ভার্ডের এমন অবস্থান গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মাথায় ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন (২৩০ কোটি) ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর-অব্যাহতির মর্যাদা ও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার সক্ষমতা বাতিল করার হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বৈদেশিক যোগাযোগ, শিক্ষার্থী ও অনুষদগুলোর বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: রয়টার্স

হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘যদি ধরেও নেওয়া হয়, প্রশাসন এখন অনধিকারচর্চামূলক দাবিগুলো ফিরিয়ে নিতে চায়; তবু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের যে কার্যকলাপ, তা দেখে মনে হচ্ছে, তারা বরং সেই দাবিগুলোতে আরও জোর দিচ্ছে। তাদের কাজেই সেটি ফুটে উঠছে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রশাসন বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত কোটি কোটি ডলারের তহবিল স্থগিত করেছে। নীতিমালাসহ অন্যান্য পরিবর্তন আনতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেওয়ার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছর তাদের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ দমনে ও ইহুদিবিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে কয়েকটি ইহুদি সংগঠনসহ বিক্ষোভকারীরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার সমালোচনাকে ভুলভাবে ইহুদিবিরোধিতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রথমে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানায় পড়লেও সম্প্রতি তারা হার্ভার্ডে মনোযোগ দিয়েছে। প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাঠ্যসূচির ওপর নজরদারি চায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কথিত ‘উদারপন্থী অবস্থান’ খর্ব করতেই দৃশ্যত এমন নজরদারি চায় তারা।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রশাসন বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত কোটি কোটি ডলারের তহবিল স্থগিত করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, এসব প্রতিষ্ঠান গত বছর তাদের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ দমনে ও ইহুদিবিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

১১ এপ্রিলের চিঠির বিষয়বস্তু সঠিক ছিল বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। পত্রিকাটি বলেছে, প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়াই চিঠিটি কীভাবে হার্ভার্ডের কাছে গেল, তা নিয়ে এ প্রশাসনের ভেতর ভিন্নমত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পত্রিকাটি বলেছে, হোয়াইট হাউসের কোনো কোনো কর্মকর্তা মনে করেন, চিঠিটি আগেভাগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যরা মনে করেন, এটি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম বিলি করার কথা ছিল।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ১১ এপ্রিলের এ চিঠির আগে ট্রাম্প প্রশাসন ৩ এপ্রিল হার্ভার্ডের কাছে একগুচ্ছ দাবি পেশ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফেডারেল তহবিল পাওয়া অব্যাহত রাখতে এসব দাবি পূরণ করতে হবে বলে জানানো হয়। দাবিগুলোর অন্যতম ছিল, মাস্ক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি বাতিল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আরও বেশি সহযোগিতা করা।

আরও পড়ুন

১১ এপ্রিলের চিঠিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কর্মকর্তাদের সই রয়েছে। এ চিঠিতে যেসব দাবি করা হয়েছে, তা ৩ এপ্রিল পেশ করা দাবিগুলোর সম্প্রসারিত রূপ। ১১ এপ্রিলের চিঠিতে অন্যান্য দাবির পাশাপাশি হার্ভার্ডকে কিছু ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠনকে স্বীকৃতি না দিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ভঙ্গকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।

প্রথমে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানায় পড়লেও সম্প্রতি তারা হার্ভার্ডে মনোযোগ দিয়েছে। প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাঠ্যসূচির ওপর নজরদারি চায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কথিত ‘উদারপন্থী অবস্থান’ খর্ব করতেই দৃশ্যত এমন নজরদারি চায় তারা।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল, তারা এখনো প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে। তবে ওই চিঠির পর তারা মনে করছে, এ নিয়ে সমঝোতা করা অসম্ভব।

আরও পড়ুন