বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন বিক্ষোভকারীদের দখলে

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ৩০ এপ্রিলছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিক্ষোভ বন্ধে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করে গতকাল মঙ্গলবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিক্ষোভস্থল ছেড়ে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করতে শুরু করেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সপ্তাহ দু-এক আগে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে গত ১৮ এপ্রিল প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় তাঁবু খাটিয়ে চলছে বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁবু সরিয়ে নিতে এবং বিক্ষোভ বন্ধ করতে গত সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করে গতকালও প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।

স্থানীয় সময় গতকাল দিনের শুরুর দিকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন দখল করে নেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হ্যামিল্টন হলের’ নিয়ন্ত্রণ নেন। একপর্যায়ে ভবনের দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নেন তাঁরা। ভবনের জানালা দিয়ে ‘হিন্দ’স হল’ নামের একটি ব্যানারও ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ছয় বছরের শিশু হিন্দ রজবের সম্মানে হিন্দ’স হল নাম দেওয়া হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত স্বজনদের সঙ্গে গাড়িতে আটকা পড়ে হিন্দ রজব। জরুরি নম্বরে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল সে। বলেছিল, ‘আমি খুব ভয় পাচ্ছি। দয়া করে তোমরা আসো।’ ফোনের লাইন যখন কেটে যায়, তখন সেখানে গুলির অনেক শব্দ হচ্ছিল। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দুজন কর্মীকে পাঠানো হয়েছিল রজবকে উদ্ধার করতে। সেখানে গেলে তাঁদেরও হত্যা করা হয়।

অনড় বিক্ষোভকারীরা

চলমান দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সময় সোমবার বেলা দুইটার মধ্যে বিক্ষোভস্থল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, (গাজায়) ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যুর তুলনায় এসব বিদ্বেষমূলক ভীতিকর কৌশল কিছুই নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না।’

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।

এদিকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চাং বলেছেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরবর্তী ধাপের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হলো গাজা যুদ্ধবিরোধী এই আন্দোলন। গত সপ্তাহ থেকে চলমান এ বিক্ষোভে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিক্ষোভে ১৯০ সংগঠনের সমর্থন

গাজা যুদ্ধবিরোধী এ বিক্ষোভে প্রায় ১৯০টি পরামর্শক সংগঠন তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ক্যাম্পাসগুলোয় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চলার মধ্যেই যেভাবে আন্দোলন চালানো হচ্ছে, তাতে তাঁদের সাহসের প্রশংসা করা হয়েছে। সংহতি জানানো সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয়, নাগরিক অধিকার ও প্রগতিশীল ভাবধারার সংগঠনগুলো।

সংগঠনগুলোর মধ্যে রেয়েছ ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টি, ইফ নট নাউ মুভমেন্ট, সানরাইজ মুভমেন্ট, মুভমেন্ট ফর ব্ল্যাক লাইভস ও জেন-জেড ফর চেঞ্জ। স্থানীয় সময় সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ বিক্ষোভের অনুসরণ করে কানাডা ও ফ্রান্সের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্রান্সে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।