আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি বাইডেনের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকার আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতাকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর একটি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে তিনি কয়েকটি আলাদা নির্বাহী আদেশ জারি করে বলেছেন, সংবিধানের কোনো সংশোধনীই চূড়ান্ত নয়।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বসে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারকে সম্পর্কিত করে করা বিতর্ক সম্পূর্ণ অমূলক বলে তিনি উল্লেখ করেন। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে নাগরিকদের অস্ত্র রাখার অধিকার নিশ্চিত করা আছে। এই অধিকার নিয়ে মার্কিন সমাজ ব্যাপকভাবে বিভক্ত।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, সংবিধানের শুরু থেকেই দ্বিতীয় সংশোধনী ছিল। সব সময়ই সব ধরনের অস্ত্র সবার সংগ্রহে নেওয়ার সুযোগ ছিল না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আমেরিকার আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতাকে মহামারির সঙ্গে তুলনা করে বাইডেন বলেন, বিষয়টি আমেরিকার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর হয়ে উঠেছে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছয়টি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যে তিনি বিচার বিভাগকে ‘ঘোস্ট গান’ (ঘরে তৈরি করা যায় এমন আগ্নেয়াস্ত্র) নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

অনলাইন থেকে সহজেই খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করে এই ধরনের হালকা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা হয়। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো রেজিস্ট্রেশন বা ক্রমিক নম্বর থাকে না।

মেরিকায় নিজে তৈরি করা এসব অস্ত্র সহিংসতায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর নির্দেশনায় অনলাইন থেকে কেনার আগেও ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ করার শর্ত আরোপের কথা বলেছেন। অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ আইন প্রণয়ন করে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়া লোকজনের জন্য বন্দুক সংগ্রহ করা কঠিন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

হালকা পিস্তলকে রূপান্তর করা হলে সেটিকে ন্যাশনাল ফায়ার আর্মস অ্যাক্টের আওতায় বিবেচনার কথা বলা আছে বাইডেনের নির্দেশনায়।

বিচার বিভাগকে বন্দুক পাচার বা বন্দুক চোরাচালানের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

ফেডারেল সরকারের পাঁচটি সংস্থা কমিউনিটিভিত্তিক আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা দমনে অর্থ ব্যয় করবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।

আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের অন্যতম সোচ্চার কণ্ঠ ডেভিড চিপম্যানকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ব্যুরো অব অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ার আর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ (এটিফ) বিভাগের প্রধান হিসেবে মনোনয়নের কথা জানিয়েছেন। ডেভিড চিপম্যানের এটিফ এজেন্ট হিসেবে ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাহী আদেশগুলো ঘোষণা করে সাম্প্রতিক সময়ে আটলান্টা, কলোরাডো ও সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের সহিংসতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন মানুষ গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। বিষয়টি মহামারি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

রোজ গার্ডেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাইডেনের নির্দেশনা জারির সময় আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা নিয়ে উচ্চকণ্ঠ—এমন প্রতিনিধিত্বশীল লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক কংগ্রেসওম্যান গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ড ছিলেন। গিফোর্ড ২০১২ সালে নিজেই এক বন্দুকধারীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। ২০১২ সালে কানেকটিকাটের সেন্ডিহুক এলিমেন্টারি স্কুলে গুলির ঘটনায় নিহত শিশুদের পিতামাতাকেও হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের প্রতি দ্রুত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া দুটি নিয়ন্ত্রণমূলক আইন সিনেটে পাস করা হয়নি। রিপাবলিকান দল আগ্নেয়াস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিরুদ্ধবাদীদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রার্থনা ও শুভকামনা যথেষ্ট হয়েছে। এবার পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসেছে।

বাইডেন আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণ করায় এই সহিংসতার বিপক্ষে দীর্ঘদিন থেকে লড়াই করা লোকজন খুশি হয়েছেন।

তবে রিপাবলিকানরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের নেতা কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন, বাইডেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করছেন না। উল্টো তিনি আইন মেনে চলা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছেন। সংবিধান অনুসরণ করে যেকোনো সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন তিনি।

একইভাবে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন, অপরাধীদের বেলায় কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আইন মেনে চলা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার বন্ধ করা যাবে না।