আবার প্রেসিডেন্ট হতে বাইডেনের বয়স কি ‘বোঝা’ হবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে জো বাইডেনের বয়স কি খুব বেশি?—এই প্রশ্নের উত্তর খতিয়ে দেখেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

বাইডেনের বয়সসংক্রান্ত প্রশ্নটি বিশেষ করে দেশটির রিপাবলিকান শিবির ও ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলোর জন্য আলোচনার খোরাক জুগিয়ে চলছে।

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট শিবিরসহ দেশটির বেশির ভাগ গণমাধ্যম এই প্রশ্ন সামনে তুলে এনে প্রচার–প্রচারণায় অনাগ্রহী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

২০২০ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। এই নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন রিপাবলিকান দলের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হন।

২০২৪ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে আপাতত আগ্রহ রয়েছে। এ ইস্যুতে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক বাড়ছে।

আগামী ২০ নভেম্বর বাইডেনের বয়স হবে ৮০। তাঁর বয়স ইস্যুটি ডেমোক্র্যাটদের একটি কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। কারণ, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের কোনো স্পষ্ট বিকল্প নেই এখন পর্যন্ত দলটির সামনে।

দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে এই বলে উপসংহার টানা হয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বাইডেন এখন পর্যন্ত শারীরিকভাবে ঠিকঠাকই আছেন। তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তাঁর বয়স যা দাঁড়াবে, সেটা অনেক বেশিই।

বাইডেন স্মৃতিভ্রংশে ভুগছেন বলে দাবি করছেন ডানপন্থীরা। তবে এই দাবি সমর্থন করেনি দ্য আটলান্টিক।

বাইডেনকে নিয়ে অবশ্য তাঁর নিজ শিবিরেই অসন্তোষ রয়েছে। গত সোমবার প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের এক জরিপে দেখা যায়, ৬৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার বলেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলের উচিত বাইডেনের পরিবর্তে অন্য কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া।

প্রার্থীর ক্ষেত্রে যাঁরা পরিবর্তন চান, তাঁরা প্রধান কারণ হিসেবে বাইডেনের বয়সের কথা উল্লেখ করেছেন।

বাইডেন যদি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন, তখন তাঁর বয়স হবে ৮২। দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব যখন শেষ হবে, তখন তাঁর বয়স দাঁড়াবে ৮৬ বছর।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮৯ সালে দায়িত্ব ছাড়েন। সে সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস গত শনিবার লিখেছে, বাইডেনের বয়স তাঁর নিজের জন্য, তাঁর দলের জন্য একটি অস্বস্তিকর বিষয় হয়ে উঠেছে।

পূর্বসূরিদের মতো বাইডেনও বেশ কিছু ক্লান্তিকর দায়িত্ব পালন করে চলছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেন যুদ্ধ, আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা, মুদ্রাস্ফীতি, কট্টর রক্ষণশীল সুপ্রিম কোর্টের নানা পদক্ষেপ।

গত নভেম্বরে বাইডেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন। পরীক্ষায় এই বলে উপসংহার টানা হয় যে তিনি একজন শক্তসামর্থ্য মানুষ। তবে তাঁর অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও আর্থ্রাইটিসের হালকা সমস্যা আছে।

পরীক্ষায় যা–ই বলা হোক না কেন, বাইডেনের চেহারা–চালচলন ভিন্ন কথা বলছে। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর ওপর দিয়ে ভীষণ চাপ যাচ্ছে। তাঁর সাদা চুল ক্রমেই পাতলা হচ্ছে। চলাফেরার ক্ষেত্রেও তাঁকে বেশ সতর্ক থাকতে দেখা যাচ্ছে।

যেমন টেলিপ্রম্পটার থেকে কিছু পড়ার সময় বাইডেন কখনো কখনো খেই হারিয়ে ফেলেন। কিংবা তিনি পড়তে গিয়ে হোঁচট খান।

বেশ কয়েকবার সংবেদনশীল কূটনৈতিক ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করতে দেখা গেছে। তাঁর এ মন্তব্য সামাল দিতে হোয়াইট হাউসকে বেগ পেতে হয়।

বাইডেনকে তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় কম সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও কম দেন। তবে তিনি সংবাদপত্রে মতামত প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু সাবধানতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সপ্তাহান্তে বাইডেন প্রায়ই দুই বা তিন দিনের জন্য ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে তাঁর বাড়িতে অদৃশ্য হয়ে যান। হোয়াইট হাউস সংবাদদাতারা হরহামেশা বাইডেনের নাগাল পান না।

গত মাসে জি–৭ জোটের শীর্ষ সম্মেলনে গ্রুপ ছবির জন্য পোজ দেন নেতারা। তখন জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে বাইডেনের বয়সের ব্যবধানটা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। এই নেতাদের মধ্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বয়স ৫০ বছর। আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর বয়স ৪৪ বছর।

তবে বাইডেনের বয়সের দিকটি যে কোনো ব্যাপার নয়, তা প্রমাণে ব্যস্ত তাঁর সহযোগীরা। তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাইক ডনিলন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, উড়োজাহাজে বসেও প্রেসিডেন্ট কাজ করতে চান। অন্যদিকে সব তরুণ কর্মী তখন ঘুমাতে চান।

বাইডেনের পূর্বসূরি ট্রাম্পের বয়স এখন ৭৬ বছর। তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বাইডেনকে ঘায়েল করতে তাঁর বয়স নিয়ে নানা কথা বলতে শুরু করেছেন ট্রাম্প।

সম্প্রতি ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, অনেক লোক আছেন, যাঁদের বয়স ৮০, এমনকি ৯০–এর ঘরে। এই মানুষগুলো শারীরিকভাবে ঠিকঠাক আছেন, আগের মতোই তীক্ষ্ণ। বাস্তবে জীবন শুরু হয় ৮০ বছর বয়স থেকে। তবে বাইডেন এই দলের অন্তর্ভুক্ত নন।