আবার মঞ্চে উঠছেন ট্রাম্প, দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবেন

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিপ্লব এখনো শেষ করেননি। তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির জয় ও ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজে জিতে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কাজে নেমে পড়েছেন ট্রাম্প। এমন সব কথাই আলোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের সমাবেশে।

গত বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডায় ‘কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্স’ শুরু হয়েছে। পুরো দেশ থেকে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমাবেশ ঘটেছে এই সম্মেলনে। রিপাবলিকান পার্টির অর্থদাতা থেকে শুরু করে রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবীরা কয়েক দিন ধরে কীভাবে নির্বাচন চুরি হয়ে গেল, মার্কিন উদারনৈতিক গণমাধ্যম কেমন করে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে—এসব বিষয় নিয়ে উত্তেজনাকর বক্তৃতা দিয়েছেন।

আর কয়েক ঘণ্টা পর, স্থানীয় সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রক্ষণশীলদের মঞ্চে উপস্থিত হবেন। আমেরিকায় ট্রাম্প নানা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

ক্ষমতা ত্যাগের ৪০ দিনের মধ্যে আবার রাজনৈতিক মঞ্চে কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের উপস্থিত হওয়ার নজির নেই।

ট্রাম্প শুধু মঞ্চে উপস্থিত হবেন, এমন নয়; সদ্য ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নানা কর্মসূচির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাবেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, নতুন ক্ষমতায় আসা কোনো প্রেসিডেন্টকে সময় না নিয়ে এভাবে সমালোচনায় নেমে পড়াও নজিরবিহীন।

রক্ষণশীলদের সম্মেলনে ২৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া বক্তৃতায় বক্তারা বলেছেন, রিপাবলিকান পার্টি কর্মজীবীদের দল। রক্ষণশীল রাজনীতির ধনকুবের লোকজন দিনব্যাপী কর্মজীবীদের স্বার্থে বক্তব্য দিয়েছেন। আমেরিকার স্টিল ওয়ার্কার, জ্বালানি খাতের কর্মীসহ প্রান্তিক কর্মজীবীরা ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে বক্তারা উল্লেখ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির ঘোর বিরোধিতার সময় ফ্লোরিডা সম্মেলনে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের কর্মজীবীদের নিয়ে মায়াকান্না করাকে পরিহাসের বলে উল্লেখ করেছে পলিটিকোসহ একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম।

সিনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন, রিপাবলিকান পার্টি শুধু কান্ট্রি ক্লাবের দল নয়; দলটি নির্মাণশ্রমিক, ক্যাবচালক, দমকলকর্মী, পুলিশসহ সাধারণ কর্মজীবীদের বলে উল্লেখ করেন তিনি। টেড ক্রুজ বলেন, ট্রাম্প কোথাও চলে যাচ্ছেন না। ডোমোক্রেটিক পার্টি ট্রাম্পের প্রস্থান চায় উল্লেখ করে টেড ক্রুজ বলেন, ট্রাম্প দ্রুতই ফিরে আসছেন।

গত সপ্তাহে টেক্সাসে চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় অঙ্গরাজ্যের সিনেটর টেড ক্রুজ তাঁর মেয়েকে নিয়ে প্রমোদভ্রমণে চলে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন রিপাবলিকান পার্টির অতি রক্ষণশীল ধনকুবের এই সিনেটর। হার্ভার্ড থেকে পাস করা সিনেটর টেড ক্রুজ এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। আগে একদফা তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য বাছাইপর্বে লড়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

রক্ষণশীলদের সম্মেলনে ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, তাঁর বাবার বক্তৃতার মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যৎ রূপরেখা পাওয়া যাবে। ট্রাম্প জুনিয়র তাঁর বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কড়া সমালোচনা করেন।

ট্রাম্প জুনিয়র বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর অর্থনৈতিক চাঞ্চল্যের জন্য যখন সব খুলে দেওয়া কথা ছিল, তখন তা বাইডেন করেননি। কিন্তু বাইডেন দ্রুততার সঙ্গে খুলে দিয়েছেন সীমান্ত। অভিবাসীদের প্রবাহ শুরু হয়েছে। অভিবাসীদের কারণে আমেরিকার কর্মজীবীরা কাজ হারাবেন। দেশের মানুষের নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি হবে।

রক্ষণশীলদের সম্মেলনে গতকাল শনিবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি মূর্তি অবমুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা গায়ে দেওয়া মূর্তির মাথায় সোনালি রঙের প্রলেপ দেওয়া আছে। মূর্তির আশপাশেই বিক্রি হচ্ছিল নানা ধরনের স্টিকার। দুই ডলার মূল্যের এসব স্টিকারে লেখা আছে ‘ট্রাম্প ইজ মাই প্রেসিডেন্ট’, ‘বাইডেন ইজ নট মাই প্রেসিডেন্ট’, ‘ট্রাম্প ২০২৪’।

ট্রাম্পের ছবি দিয়ে স্টিকারে লেখা আছে ‘মিস মি ইয়েট?’ টি-শার্টে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছবিতে হিটলারের গোঁফ যুক্ত করা হয়েছে।

ফ্লোরিডার রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিসান্টিস পুরো সম্মেলন দেখভাল করছেন।

সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র লোকজনকে ঘরে আটকে রাখার নানা আয়োজনের মধ্যেও তিনি তাঁর অঙ্গরাজ্যে এমনটা করেননি। কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময়ে স্কুল খোলা রেখেছেন। লোকজনকে বন্দী করেননি। এসবই তাঁর অঙ্গরাজ্যের সাফল্য; যদিও করোনার সংক্রমণে ইতিমধ্যে ফ্লোরিডায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

রক্ষণশীল ভাষ্যকার কেটি ম্যাকফারল্যান্ড বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের কথা হয়েছে। আজ রোববার সম্মেলনে রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্প কথা বলবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হবে। ট্রাম্প ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টির হোয়াইট হাউস ফিরে পাওয়ার রূপরেখাও তাঁর বক্তৃতার তুলে ধরবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।