‘আমি দুঃখিত, মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য’

১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর। এই দিনটিতেই স্ত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী জন লেননকে। আততায়ীর নাম মার্ক চাপম্যান। প্রায় ৪০ বছর পর ঘৃণ্য সেই কাজের জন্য লেননের স্ত্রীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন চাপম্যান। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

স্ত্রীর ইয়োকো ওনোর সঙ্গে জন লেনন।
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

জন লেননকে হত্যার জন্য তাঁর স্ত্রী ইয়োকো ওনোর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন হত্যাকারী মার্ক চাপম্যান। বলেছেন, ‘কোনো অজুহাত দেখাব না। নিজে বিখ্যাত হওয়ার জন্যই এটা করেছিলাম। আমি মনে করি, একজন নিরপরাধ মানুষের ওপর এর চেয়ে ভয়ানক অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। মৃত্যুদণ্ডই এর উপযুক্ত শাস্তি।’

১৯৮০ সালে নিউইয়র্কে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জন লেনন। চাপম্যান তাঁকে পরপর চারটি গুলি করেছিলেন। আর তা চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছিল স্ত্রী ইয়োকো ওনোকে। ওই ঘটনায় এখনো কারাগারে আছেন এই আততায়ী। প্যারোলে তাঁর জামিনের আবেদন এ পর্যন্ত ১১ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। গত মাসে সর্বশেষ প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছিলেন চাপম্যান। আবেদনের শুনানির সময় চাপম্যান বলেন, লেননকে হত্যা করা ছিল একটি ঘৃণ্য কাজ। এ নিয়ে প্রায় সময়ই তিনি ভাবেন। বাকিটা জীবন কারাগারে কাটাতে হলে, সেটি মেনে নিতে প্রস্তুত তিনি।

একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় ব্রিটিশ ব্যান্ডদল দ্য বিটলসের অন্যতম সদস্য ছিলেন জন লেনন। ১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে এই রক ব্যান্ডদলটি গঠিত হয়। লেনন যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। লেননের গাওয়া বিখ্যাত গানের মধ্যে আছে ‘ইমাজিন’, ‘জেলাস গাই’, ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ ইত্যাদি।

নিউইয়র্কে প্যারোল বোর্ডের সামনে লেনন সম্পর্কে চাপম্যান বলেন, ‘তিনি অনেক বেশি বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর চরিত্র বা মানুষ হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন—সেই বিবেচনায় আমি তাঁকে হত্যা করিনি। তিনি একজন পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন আইকন।’

হত্যার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে চাপম্যান বলেন, ‘আমি তাঁকে হত্যা করেছি। কারণ তিনি খুব, খুব, খুব বিখ্যাত ছিলেন এবং এটিই একমাত্র কারণ ছিল। কারণ, আমি যশ পেতে উন্মুখ হয়ে পড়েছিলাম। এটি খুব স্বার্থপরের মতো একটি কাজ ছিল। আমি এটা জোর দিয়ে বলতে চাই। আমার কারণে ওনোর (লেননের স্ত্রী) যে মনঃকষ্ট হয়েছে, তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি সব সময়ই এটি নিয়ে ভাবি।’

চাপম্যান এর আগে যতবার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছিলেন, সব কয়বার তার বিরোধিতা করেন ইয়োকো ওনো। ২০১৫ সালে চাপম্যানের এমনই এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দ্য ডেইলি বিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওনো বলেছিলেন, চাপম্যান মুক্তি পেলে আবার খুন করবেন—এমন ভয় তাঁর পিছু ছাড়ে না। ওনো বলেন, ‘একটি বিষয় নিয়ে আমি ভাবি যে তিনি একবার এই কাজ করেছেন। তিনি আবারও এমনটা করতে পারেন। হয়তো অন্য কেউ তাঁর শিকার হতে পারেন। এটা হতে পারি আমি, আমার ছেলে বা অন্য যে কেউ। এটাই উদ্বেগের।’

লেননের হত্যাকারী চাপম্যান

চাপম্যানের প্যারোলে মুক্তির সর্বশেষ আবেদনের শুনানির হালনাগাদ নথিপত্র প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, প্যারোল বোর্ড চাপম্যানের মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। বলা হয়েছে, সমাজের কল্যাণের বিরুদ্ধে যায় এটি।

হত্যাকাণ্ডের সময় চাপম্যানের বয়স ছিল ২৫ বছর। এখন তাঁর বয়স ৬৫ বছর। চাপম্যান বর্তমানে যে স্থানে বন্দী আছেন, আট বছর ধরে তার কাছাকাছিই থাকছেন তাঁর স্ত্রী।

২০০৭ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়। তবে ১৯৬৩ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজ্যে কোনো অপরাধীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়নি। অবশ্য মার্ক চাপম্যান মনে করেন, প্রয়োজন হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আপনি যখন জেনে-বুঝে পরিকল্পনা করে কাউকে হত্যা করবেন এবং এটি ভুল জেনেও করবেন এবং শুধুই নিজের জন্য করবেন, আমার মতে তখন প্রাণদণ্ড হওয়া উচিত। কেউ কেউ আমার সঙ্গে একমত হবেন না, কিন্তু এখন সবাই দ্বিতীয় সুযোগ পাচ্ছে।’

সেন্ট্রাল পার্কের স্ট্রবেরি ফিল্ডে জন লেলনের প্রতি ভক্তরা নিয়মিত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ছবি: রয়টার্স

চাপম্যানের কথায়, ‘আমি কোনো কিছু পাওয়ার যোগ্য নই, কিচ্ছু না। আমার বাকি জীবনটা কারাগারে কাটানোর সিদ্ধান্ত হলেও আমার কোনো অভিযোগ থাকবে না।’