আমেরিকার সীমান্তে ব্রিটিশ দম্পতি গ্রেপ্তার

কানাডা থেকে দুর্ঘটনাক্রমে সীমান্ত পার হয়ে আমেরিকা প্রবেশের কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক ব্রিটিশ দম্পতি। তাঁরা হলেন ডেভিড কনর্স (৩০) ও আইলিন কনর্স (২৪)।
ডেভিড ও আইলিন কনর্সের অভিযোগ, দুর্ঘটনাক্রমে তাঁরা মার্কিন সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন। এ কারণে তাঁদের আমেরিকায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিন মাসের বাচ্চাসহ তাঁদের পেনসিলভানিয়ায় রাখা হয়েছিল। তাঁদের ভাষ্যমতে, ৩ অক্টোবর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলেন তাঁরা। যাত্রাপথে একটি প্রাণী পথে এসে পড়ে। তাকে এড়াতে গিয়ে তাঁরা একটি ছোট রাস্তায় ঢুকে পড়েন। এরপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের থামান এবং বলেন, তাঁরা বর্তমানে আমেরিকার ওয়াশিংটনে রয়েছেন। এরপরই ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের গ্রেপ্তার করেন।
এই দম্পতি তাঁদের আইনজীবীর মাধ্যমে বিবিসিকে এক বিবৃতিতে তাঁদের পুরো অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) ইন্সপেক্টর জেনারেলের কাছে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগ জানান।
আলডিয়া-পিপলস জাস্টিস সেন্টারের অ্যাটর্নি ব্রিজেট ক্যামব্রিয়া বলেন, রাস্তাটিতে একটি প্রাণীকে এড়াতে গিয়ে এমন বিপাকে পড়েন এ দম্পতি। ৩ অক্টোবর তাঁরা ভ্যাঙ্কুভারের দক্ষিণে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পরিবারটি বলেছে যে, তারা বুঝতে পারেনি। অভিযোগ বলা হয়, এই দম্পতিকে আটক করা পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের ঘুরে কানাডা ফিরে যাওয়ার মতো কোন সুযোগ বা সতর্কবাণী দেননি। আটকের পর তাঁদের আলাদা করে রাখা হয়েছিল। ডেভিড কনর্সকে একটি পুরুষ কক্ষে এবং আইলিন কনর্সকে তাঁর শিশু পুত্রসহ নারী কক্ষে রাখা হয়েছিল। পরে ডেভিড কনর্সকে ওয়াশিংটনের টাকোমা আটককেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে সিয়াটল-টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটবর্তী একটি বাজেট হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে তাঁদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। পথহারা পরিবারটি আশা করেছিল, তাঁদের কানাডা বা ইউনাইটেড কিংডম ফেরত পাঠানো হবে।
বিবৃতিতে আইলিন কনর্স বলেন, ‘যা ভেবেছিলাম, বিষয়টি তেমন হয়নি। পরিবর্তে আমাদের পেনসিলভানিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
৫ অক্টোবর তাঁদের বার্কস ফ্যামিলি রেসিডেনসিয়াল সেন্টারে (বিএফআরসি) নেওয়া হয়, যা আমেরিকার তিনটি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারের মধ্যে একটি। আইলিন কনর্স বলেন, ‘মার্কিন সরকার আমাদের প্রতি যে আচরণ করেছে, তা আমাদের আহত করেছে। এটি আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে।
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বলেছে, পরিবারটি পেনসিলভানিয়ার লিজপোর্টে বিএফআরসিতে আটক ছিল। সংস্থার এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, বিএফআরসি ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ এবং মানবিক পরিবেশ সরবরাহ করে। বিএফআরসিতে অমানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যেসব প্রতিবেদন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আইলিন কনর্স বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা যখন প্রচণ্ড শীতে কাঁপছিল, আমি তাদের হিট দেওয়ার কথা বলি। কিন্তু তারা মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত হিট অন করতে পারবে না বলে জানায় এবং বাচ্চাকে টুপি পরাতে বলেন। আমার বাচ্চা টুপি পরতে অস্বস্তিবোধ করে এবং জোর করলে কান্না করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যে কম্পবলটি দেওয়া হয়েছিল, তাতে মৃত কুকুরের গন্ধ ছিল। আমাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হয়েছে এবং আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গে এমন অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা। আমরা আঘাত পেয়েছি এবং এটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষতিও করেছে।’
তবে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে যে এই দম্পতিকে আটকে রাখা হলেও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি।