ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার রণপ্রস্তুতি, পুতিনকে বাইডেনের ফোন

জো বাইডেন ও ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবারের ওই টেলিফোনে বাইডেন ইউক্রেনের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনের জন্য চাপ দেন। এ ছাড়া পুতিনের সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশে সাক্ষাতেরও প্রস্তাব করেন তিনি।

সম্প্রতি ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে রাশিয়া। এই সেনা সমাবেশ ২০১৪ সালের পর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালের ওই সেনা সমাবেশের পর ইউক্রেনের বাহিনীর সঙ্গে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াইয়ের মধ্যেই ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয় রাশিয়া। এবার অবশ্য রাশিয়া দাবি করেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর হুমকি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এই সেনা সমাবেশ ঘটানো হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মঙ্গলবারের ওই টেলিফোনের পর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, পুতিনের সঙ্গে কথোপকথনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দখলকৃত ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানান। এ সময় তিনি রাশিয়ার প্রতি উত্তেজনা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিশীল সম্পর্ক গঠনের ব্যাপারে মার্কিন আগ্রহের কথাও পুতিনকে জানান। এ সময় তিনি তৃতীয় কোনো দেশে সুবিধাজনক কোনো সময়ে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের নানা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য পুতিনকে সাক্ষাতের প্রস্তাব করেন।

বাইডেনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পুতিন সাক্ষাৎ করলে এটি হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের শপথ গ্রহণের পর তাঁদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। এর আগে পুতিন সর্বশেষ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেবার ফিনল্যান্ড ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকটির আয়োজন করেছিল।

অবশ্য বাইডেনের প্রস্তাবের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে নারাজ ক্রেমলিন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাবের বিষয়টি ক্রেমলিন বিবেচনা করে দেখবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। প্রস্তাবটি নতুন এবং এ ব্যাপারে বিচার-বিবেচনা করতে হবে।

তবে ক্রেমলিন মুখে যা-ই বলুক, তারা ভেতরে-ভেতরে বাইডেনের সাক্ষাতের প্রস্তাবকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছে। তারা মনে করছে, ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কিছুটা নমনীয়তা তৈরি হয়েছে।

এএফপি জানায়, এ ব্যাপারে রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কনস্টানটিন কোসাচেভ বলেন, ‘এটি (বাইডেনের প্রস্তাব) গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।’

আর রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান লিওনিদ স্লাৎস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি একটি ভালো সংবাদ। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের নেতা পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য নিজেদের প্রস্তুত থাকার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’

আর পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার কিংবদন্তি দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভ টুইটারে লিখেছেন, ‘সম্মেলন? পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার কী আছে? এমন একটি সাক্ষাতের জন্য তো পুতিন মুখিয়ে আছেন।’

গ্যারি কাসপারভের মতো অনেক পুতিন সমালোচকই বলছেন, বাইডেনের ওই সাক্ষাতের প্রস্তাব আসলে পুতিনেরই জয়। ‘রাশিয়া ইন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স’ সাময়িকীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফিওডর লাকিয়ানভ বলেন, রাশিয়ায় সাক্ষাতের প্রস্তাব এবং বৈঠকটি হলে তার পুরো বিষয়টি বড় অর্জন হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। কারণ, কিছুদিন আগেও পুতিনের ব্যাপারে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন বাইডেন।