ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সীমান্তে পাঠাচ্ছেন বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার অভিবাসী দক্ষিণের সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে। নথিপত্রহীন এসব অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের পর রাখার জন্য স্থানসংকুলান হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জরুরি ভিত্তিতে তাঁর প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সীমান্ত সফর করে তাঁকে বিস্তারিত জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ঠিক কত অভিবাসী সীমান্ত অতিক্রম করেছে, তার কোনো হিসাব প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এই সংখ্যা দিনে তিন থেকে পাঁচ হাজার বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

গত ছয় সপ্তাহে এমন অভিবাসীপ্রবাহে খোদ ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেই উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, সুনামির মতো লোকজনের প্রবেশ ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট বাইডেন সীমান্ত পরিস্থিতিকে মানবিক করার উদ্যোগ নেন। নির্দেশ জারি করে তিনি বলেন, সীমান্তে আশ্রয়প্রত্যাশী লোকজনের সঙ্গে আসা শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় ঢোকার পর আশ্রয়ের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয় নথিপত্রহীন অভিবাসীদের। এসব সুবিধা সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

সীমান্ত পরিস্থিতি শিথিল করার সঙ্গে সঙ্গে বানের জলের মতো লোকজনের আগমন শুরু হয়। দ্য ওয়াশিংটন টাইমস এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলেছে, সীমান্ত এলাকায় গ্রেপ্তার হওয়া লোকজনকে রাখার মতো কাঠামো নেই। শিশুদের রাখার জন্য কয়েকটি কেন্দ্রকে জরুরিভাবে অভিবাসী প্রসেসিং কেন্দ্র করা হয়েছে। যদিও প্রতিদিন আসা তিন থেকে পাঁচ হাজার লোকের স্থানসংকুলানের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের সামাল দেওয়ার জনবলও সীমান্তে নেই।

ডেমোক্রেটিক পার্টির টেক্সাস অঙ্গরাজ্য সিনেটর জোয়ান চুই বলেছেন, তিনি মনে করেন, সীমান্তে ঠিক কী ঘটছে, তা নিয়ে সঠিক ধারণা বাইডেন প্রশাসনের নেই।

সীমান্তপ্রহরীরা এক অসহায় বাস্তবতায় পড়েছেন উল্লেখ করে এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ও সঠিক নির্দেশনা ছাড়া কেউ কিছু করতে পারছে না।

বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ভেডেন্ট প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরিভাবে সীমান্ত পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব কর্মকর্তা সরেজমিনে সীমান্ত পরিদর্শন করে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরবেন। অভিবাসীদের সঙ্গে আসা শিশুদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের ব্যাপারে তাঁরা সুপারিশ করবেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে এখন গড়ে সাড়ে চার হাজার লোকের প্রবেশ ঘটছে। দক্ষিণ সীমান্তের দুর্গম পথ দিয়ে আসা এসব অভিবাসী শুধু দক্ষিণ আমেরিকারই নয়, দালাল চক্রের মাধ্যমে এই সীমান্তপথ দিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের লোকজনেরও আগমন ঘটছে।

রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে এ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির নেতা কেভিন ম্যাকার্থি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে দেখা করে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনার সময় চেয়েছেন।

কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে দেখা করে তিনি দলের পক্ষ থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানাতে চান।

প্রতিনিধি পরিষদের জুডিশিয়ারি কমিটিকে এ নিয়ে একটি শুনানি গ্রহণের জন্য রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতে বলেছেন, সুনামির মতো লোকজনের প্রবেশ ঘটছে সীমান্ত দিয়ে। পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠেছে। আরও নাজুক হওয়ার আগেই এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের বিবৃতির পর হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, অভিবাসন নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে অভিবাসন নিয়ে পরামর্শ নেওয়ার অবকাশ নেই। দ্রুততার সঙ্গে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে সীমান্তে আসা লোকজনকে সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তার আগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান আলেজান্দ্রো মায়োরকাস সীমান্তে কোনো সংকট নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি মানবিক ও আইনসম্মত অভিবাসনব্যবস্থা দ্রুততার সঙ্গে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতিমধ্যে অভিবাসন সংস্কার আইন উপস্থাপনের জন্য দলের আইনপ্রণেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে দলের আইনপ্রণেতারা কাজ শুরু করলেও খোদ ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর মধ্যে অভিবাসন সংস্কার নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।