একটি জন্মদিন এবং একটি মৃত্যুদিন

উত্তর আমেরিকা প্রথম আলো আড্ডা আলাপে উঠে আসে সমসাময়িক বিষয়, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ দেশে বিদেশের নানা অনুষঙ্গ। ছবি: প্রথম আলো
উত্তর আমেরিকা প্রথম আলো আড্ডা আলাপে উঠে আসে সমসাময়িক বিষয়, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ দেশে বিদেশের নানা অনুষঙ্গ। ছবি: প্রথম আলো

‘উত্তর আমেরিকা প্রথম আলো আড্ডা’ মানেই বিশেষ কিছু। ডিসেম্বরের শীতের বিকেল। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই ঘন অন্ধকারের চাদর নেমে আসে দিনের শরীর জুড়ে। তবুও অফিস ফেরত সতীর্থরা ক্ষণিকের জন্য হলেও ঢুঁ মারতে ভোলে না। এই আড্ডায় আলাপে উঠে আসে সমসাময়িক বিষয়, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ দেশে বিদেশের নানা অনুষঙ্গ। উত্তপ্ত হয় ক্যাকসন হাইটসের প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিস।

অমিতপুত্রের কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার ও অসংখ্য অমর গানের স্রষ্টা গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে উৎসর্গ করে ৫ ডিসেম্বর আলাপ সংলাপ এবং আড্ডার আয়োজন করা হয়। আলাপে আড্ডায় স্মরণ করা হয়েছে ৮০ দশকের শক্তিমান এই কবিকে।অকালে ঝরে যাওয়া অমিত প্রাণ এক মানুষ। কবি কিশওয়ার তাঁর সৃষ্টির মাঝে, মানুষের, সতীর্থদের ভালোবাসার বিমূর্ত উচ্চারণে বেঁচে থাকবেন। আলাপে ও সংলাপে এসব কথাই উচ্চারিত হয় ।

কিশওয়ারের ডাক নাম ছিল রানা। জন্ম ১১ জুন ১৯৬২। মৃত্যু ০৮ ডিসেম্বর ২০০৬ । সিলেটের ভার্থখলায় জন্ম নেন। পিতা গণমানুষের কবি দিলওয়ার। মাতা আনিসা খাতুন। এই কবি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। শৈশব থেকেই ছিল কবিতার সঙ্গে তাঁর নিত্য পথচলা। সত্তর দশকের মধ্য থেকে মূলত বিকাশযাত্রা এবং আশির দশকে তাঁর ঈর্ষণীয় পরিপূর্ণতা। ১৯৯৯ সালে কবিতায় স্বীকৃতিস্বরূপ শেকড়ের সন্ধানে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০২ সালে দনি সুরমা লেখক পরিষদ কর্তৃক পুরস্কৃত হন।

প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসে অকালপ্রয়াত এই কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর কবিতা পাঠ করেন ফরিদা ইয়াসমীন।
‘আমি জোয়ার ভাটার কালে
নদী উচ্ছন্নে গেছে বলে
চিৎকার দিতে পারি
হ্যাঁ পারি, আমি পারি, আমি পারি।
আমি মনের মতো ছবি আঁকতে পারি
আমি কথামালা সাজিয়ে সাজিয়ে
একটি কবিতা লিখতে পারি
হ্যাঁ পারি, আমি পারি।’

জন্ম ও মৃত্যু দুটোই জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনকে। মৃত্যুকে মেনে নেওয়া কষ্টকর হলেও জন্মদিন আমাদের জন্য আনন্দময়। আজ ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের জন্মদিন। তিনিও আজ আর আমাদের মাঝে নেই। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ‘শোন একটি মুজিবুরের রক্ত থেকে লক্ষ্য মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’ গানটি লেখেন। ইংরেজিতে অনুবাদ করেন, ‘মিলিয়ন মুজিবরস সিংগিং’। ইংরেজি ভার্সনে কণ্ঠ দেন করবীনাথ নামে একজন শিল্পী। তিনি তখন মঞ্চে ইংরেজি গান গাইতেন।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। বিধ্বস্ত দেশে এসে নিজের পিতার স্মৃতি রোমন্থন করেছিলেন। ঘুরেফিরে দেখে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। প্রায় এক দশক ধরে তিনি ক্যানসারে ভুগলেও তাঁর লেখা থামেনি। ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট ৬১ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে তিনি পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে বসেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর শেষ গান। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় নিজের সুরে গেয়েছিলেন গানটি। ‘এবার তাহলে আমি যাই, সুখে থাক ভালো থাক, মন থেকে এই চাই।’

লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’, মান্না দের গাওয়া ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়’, কিশোর কুমারের ‘আকাশ কেন ডাকে’, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘জীবনে যদি দ্বীপ জ্বালাতে নাহি পারো’ কিংবা ‘জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে’। আরও আছে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান ‘মেঘ কালো, আঁধার কালো’, ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, নীড় ছোট ক্ষতি নেই’এসব গানের স্রষ্টাকে কী কখনো ভোলা যায়?

আজকের আড্ডার আলোচ্য বিষয় ছিল উত্তর আমেরিকা প্রথম আলোর বিশেষ অধ্যায় উত্তরের নকশা এবং নতুন সংযোজন উত্তরের পথের শুভ উদ্বোধন সম্পর্কিত আসন্ন অনুষ্ঠানমালা নিয়ে নানা পরিকল্পনা। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক জানান, আমেরিকায় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সংযোগ ও অগ্রযাত্রাকে লক্ষ্যে রেখে প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে উত্তরের পথে নামে বিশেষ আয়োজন থাকছে। প্রথম সংখ্যার জন্য এর মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ শুক্রবার অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে থাকছে উত্তরের পথে। ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজায় এ উপলক্ষে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পাতাটির সমন্বয়ক রাজুব ভৌমিক।

উত্তরের নকশার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলেন মনিজা রহমান। জানানো হয়, ৫ জানুয়ারি জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে যোগ দেওয়ার জন্য নারীরা ষাট দশকের বাঙালি নারীর সাজে উপস্থিত থাকবেন। সভায় জানানো হয় ষাটের বাঙালি নারীর সাজে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হবে। পাশাপাশি একই সময়ে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারী ও পুরুষদের ফেসবুক ব্যবহার প্রতিযোগিতা থাকবে এই অনুষ্ঠানে। জানানো হয়, পুরোনো দিনের বাংলা গানের আয়োজনও থাকছে অনুষ্ঠানমালায়।

সাপ্তাহিক এই আলাপ সংলাপ আর আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সুব্রত বিশ্বাস, মাহবুবুর রহমান, স্মৃতি ভদ্র, মনিজা রহমান, রওশন হক, ফরিদা ইয়াসমিন, শেলী জামান খান,ইশতিয়াক রূপু,রহমান মাহবুব,এমবি তূষার, সৈয়দ ফাহিম, স্বপ্ন কুমার, মোহাম্মদ মনজুরুল হক, রওশন চৌধুরী, সানজিদা উর্মী প্রমুখ।