ওপারে ভালো থাকুন তামিনা!

মা–বাবার সঙ্গে তানিমা। ছবি: সংগৃহীত
মা–বাবার সঙ্গে তানিমা। ছবি: সংগৃহীত

করোনায় মৃত্যুবরণ করলেন তামিনা ইসলাম খান নামের বাংলাদেশি এক তরুণী। জ্যামাইকা নিবাসী তাজুল ইসলাম খান ও নাসিমা আকতারের একমাত্র সন্তান। ৩০ বছর বয়সী তামিনা এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন মা–বাবার কাছে। বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তামিনা প্রচুর পড়াশোনা করতেন এবং কবিতা লিখতেন। মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও কবিতা লিখেছেন। সে কবিতায় মৃত্যুর প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বিদ্যমান।

ম্যানহাটান নিবাসী আরিফুজ্জামান তামিনার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। লকডাউনের শুরু থেকেই তামিনা মা–বাবার সঙ্গে ঘরেই বন্দী ছিলেন। ২৫ মার্চ সকালে খালার বাসায় যান। তাজুল ইসলাম নিজে ড্রাইভ করে মেয়েকে রেখে আসেন। কিন্তু বিকেলে ঘরে ফেরা হয় না তামিনার। খালা বলেন, থাক না দুটো দিন আমার কাছে! মায়ের মতো খালার আবেগের কাছে নত হন তামিনা। থেকে যান খালার বাড়ি। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। বিকেলে খালু জানান তাঁর বন্ধুপত্নী ইন্তেকাল করেছেন। বন্ধুকে সান্ত্বনা দিতে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবেন। উল্লেখ্য, তাঁর বন্ধুপত্নী করোনায় মারা গেছেন, এটা নাকি গোপন করা হয়েছিল। দুদিন পর তামিনা বাবাকে ফোন করে জানান শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা আর একটু জ্বরের কথা। তৃতীয় দিন বাবা তাঁকে নিয়ে প্রাইমারি কেয়ার চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক সব দেখে বলেন, ভয় নেই, ঠান্ডা জ্বর। কিছু ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু ওষুধে কোনো কাজ হয় না। তামিনার জ্বর, কাশি আর শ্বাসকষ্ট বেড়ে চলে। এবার চিকিৎসকের চেহারা চিন্তিত দেখায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তামিনার অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। শ্বাসকষ্টে চেহারা নীল হয়ে যায়। দেরি না করে জ্যামাইকা কুইন্স হাসপাতালে নেওয়া হয় তামিনাকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন এবং ভেন্টিলেশন দেন। কিন্তু এক দিন পর ৪ এপ্রিল রাত ৮টা ৩০ মিনিটে তামিনা শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তাজুল ইসলাম ভগ্ন হৃদয়ে জানান, ‘চোখের আড়ালে মেয়ে বড় হয়েছে। যখন সব ঝামেলা শেষ করে মেয়েকে কাছে নিয়ে এলাম, তখন মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল চিরতরে!’

তামিনা এখন আর মেয়ে নন, একটি নম্বর হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের মর্গে। নিউজার্সিতে তাঁকে সমাহিত করা হবে। একমাত্র সন্তানের মুখটি শেষবারের মতো দেখতে পারবেন না মা–বাবা! তাজুল ইসলাম বলেন, যদি বেঁচে থাকি, তাহলে হয়তো কখনো গিয়ে দেখে আসব আমার সন্তানের শেষ ঠিকানা!

বড় সাধ ছিল মেয়েকে আমেরিকা সেটেল করে বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। শেষ বয়সে বুড়ো-বুড়ি দুজন স্বদেশে থাকবেন। কিন্তু কোভিড-১৯–এর নিষ্ঠুরতার কাছে সমর্পণ করতে হলো তাঁকে।

তামিনা লিখেছিলেন...
‘মর্মান্তিক হলেও সত্য, সত্যি আমি পরিশ্রান্ত
যদি যেতে হয় দিওনাকো চোখের জল
আমি নতুন করে আসব ফিরে সবার মাঝে
এ অটুট বিশ্বাস রেখো আজীবন।’
ওপারে ভালো থাকুন তামিনা!