কনসার্টের হোম ডেলিভারি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পিডমন্ট শহর। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। সেখানকার একটি বাড়ির পেছনের বারান্দায় জড়ো হয়েছেন জনা বিশেক মানুষ। করোনা সতর্কতায় সবার মুখে মাস্ক। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বসেছেন সামাজিক দূরত্ব মেনেই। পাশেই গা গরম করার জন্য আগুন জ্বলছে। বারান্দাজুড়ে জ্বালানো হয়েছে হালকা আলো। সঙ্গে বাজছে গিটারের টুংটাং শব্দ। বাজাচ্ছেন গায়ক–গীতিকার স্টিভ পোলৎজ। করোনাভীতির মধ্যেও বারান্দাজুড়ে উৎসবের আবহ। গাইছেন স্টিভ। তাঁর গানে আর বাজনায় মেতে উঠেছেন উপস্থিত সবাই।
মহামারি, লকডাউনে জনসমাগম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বড় পরিসরে কনসার্ট আয়োজনের প্রশ্নই আসে না। ঘরবন্দী থাকতে থাকতে বিরক্ত মানুষ। বিরক্তি কাটাতে তাঁরা ঘরেই আয়োজন করছেন সীমিত পরিসরের কনসার্ট। সেসব আয়োজনে স্টিভের মতো অনেক শিল্পী সরাসরি গাইছেন। এতে যেমন ঘরবন্দী মানুষের জীবনে দুদণ্ড স্বস্তি ফিরছে, তেমনি শিল্পীদের পকেটে ঢুকছে অর্থকড়ি। করোনাকালে এমন ঘরোয়া কনসার্ট আয়োজন ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মহামারিতে রেস্তোরাঁ থেকে যেমন লোকজন খাবারের হোম ডেলিভারি বেশি নিচ্ছেন, তেমনি কনসার্টও বাড়ি বাড়ি চলে যাচ্ছে।
সান ফ্রান্সিসকোয় এমন ঘরোয়া কনসার্ট আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন কেসি টার্নার ও তাঁর সংগীতশিল্পী বন্ধু মেগান স্লানকার্ড। তাঁরা জানান, করোনা মহামারির কারণে গত বছরজুড়ে বড় পরিসরে কনসার্ট হয়নি। মানুষ দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকতে থাকতে বিরক্ত। দুদণ্ড প্রশান্তি পেতে তাঁরা ঘরে, বারান্দায়, বাড়ির পেছনের উঠোনে বন্ধু–স্বজনদের নিয়ে আয়োজন করছেন ঘরোয়া কনসার্টের। টার্নার বলেন, এমন আয়োজনে মানুষ নিরাপদে কনসার্ট উপভোগ করতে পারেন। ভিড়ের মধ্যে যেতে হয় না। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে সীমিত।
গত শরতে সান ফ্রান্সিসকোয় প্রথম এমন ঘরোয়া কনসার্ট আয়োজন করেন টার্নার ও মেগান। এরপর থেকে ৩৫টি কনসার্ট করেছেন তাঁরা। এখনো নতুন নতুন কনসার্টের বুকিং আসছে। একেকটি কনসার্ট ৭৫ মিনিট ধরে চলে। এতে অংশ নেন মাত্র ১০–২০ জন দর্শক। তাঁদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে বসতে হয়। শিল্পীর কাছ থেকে দর্শকদের ১২ ফুট দূরে বসতে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত যে কেউ এমন ঘরোয়া কনসার্টের আয়োজন করতে পারেন। সে জন্য অবশ্য ১ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার গুনতে হবে। শিল্পীর জনপ্রিয়তার নিরিখে এসব ঘরোয়া কনসার্টের ব্যয় ওঠানামা করে, জানালেন স্টিভ পোলৎজ।