করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহতম দিন

দু-তিন দিন ধরে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা একটু কম ছিল। কিন্তু এক দিনেই তা বেড়ে গেল প্রায় ২ হাজার, আবার পৌঁছে গেল ৭ হাজারের ঘরে। বেশি আক্রান্ত অন্য দেশগুলোতে নতুন করে মৃত্যু তেমন না বাড়লেও বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত মঙ্গলবার দেশটিতে এক দিনে মারা গেছেন ২ হাজার ৮০৪ জন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়ে যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে করোনায় এক দিনে এত মৃত্যু এর আগে দেখা যায়নি।
এদিকে করোনা মহামারি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগ এনে চীনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্য। করোনার প্রভাবে মার্কিন নাগরিকদের বেকার হয়ে পড়া ঠেকাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন স্থগিত রাখার এক নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা দিয়েছেন।
করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত আটটা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ২৬ লাখ মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখের বেশি।
ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইরানসহ বেশি আক্রান্ত দেশগুলোতে মঙ্গলবার মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের মতোই ছিল। কিন্তু কয়েক দিন একটু কমার পর এদিন যুক্তরাষ্ট্রে আবার বেড়ে যায় মৃত্যুর সংখ্যা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রাণ গেছে ২ হাজার ৮০৪ জনের।
ফলে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ২ হাজার বেড়ে ৭ হাজার ৬২ জনে পৌঁছায়। এ দিন বিশ্বে নতুন করে রোগী শনাক্ত হন ৭৫ হাজার ২৫৪ জন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৯৮৫ জনই যুক্তরাষ্ট্রের। এই সংখ্যা দেশটিতে গত ১৬ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ৫ এপ্রিল শনাক্ত হয়েছিলেন ২৫ হাজার ৬৩৪ জন।
চীনের বিরুদ্ধে মিজৌরির মামলা
বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, করোনা মহামারির তথ্য সঠিকভাবে সবাইকে না জানানো এবং যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ এনে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে গতকাল মামলা ঠুকেছে দেশটির মিজৌরি অঙ্গরাজ্য। মামলায় ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এই অঙ্গরাজ্যে নির্বাচিত কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির নেতারা।
মামলার পর মিজৌরির অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক স্মিট বলেন, চীন সরকার বিশ্ববাসীর সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে। তারা বিশ্বকে আসন্ন বিপদ ও কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ) ছোঁয়াচে প্রকৃতির তথ্য গোপন করেছে। এমনকি সত্য প্রকাশকারীদের মুখ বন্ধ করেছে তারা। এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে খুব কমই উদ্যোগী হয়েছে। কাজেই তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
তবে মিজৌরির এই অভিযোগ ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং গতকাল নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, তথাকথিত এই অভিযোগ পুরোপুরি অযৌক্তিক। মহামারির শুরু থেকেই চীন সরকার সর্বদা স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থগিত
করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কোটি মানুষ। হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া এই বেকারত্বের সংকট সামাল দিতে দেশটিতে অভিবাসন স্থগিত করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গতকালই এ-সংক্রান্ত একটি আদেশে তাঁর স্বাক্ষর করার কথা ছিল। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমি আমাদের দেশে অভিবাসন নিষিদ্ধ করে এক নির্বাহী আদেশে আজ (বুধবার) স্বাক্ষর করব।’
এর আগে গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি (গ্রিন কার্ড) দেওয়ার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করতে চলেছেন।
এবার চীনের আরেক শহরে লকডাউন
রাশিয়ার সঙ্গেসীমান্তবর্তী চীনের একটি শহর লকডাউন করা হয়েছে বলে চীনা সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস-এর এক খবরে জানানো হয়েছে। হাবরিন নামের ওই শহরে প্রায় ১ কোটি মানুষের বসবাস। করোনা মহামারি ঠেকাতে গত জানুয়ারিতে উহান শহরে যেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, হাবরিনেও তেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস-এর খবরে জানানো হয়, হাবরিন শহরে গতকাল পর্যন্ত ৫২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি এই শহরে হাসপাতাল এলাকাগুলোর মধ্যে দুটি ক্লাস্টার শনাক্ত হয়। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ফেরা এক চীনা শিক্ষার্থীর মাধ্যমে হাবরিন শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করেছে।