করোনায় ১ কোটি ২০ লাখ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণসুবিধা থেকে বঞ্চিত

করোনা মহামারির শুরুতে বিশ্বজুড়ে এলোমেলো হয়ে পড়েছিল সবকিছু। ভেঙে পড়েছিল নানা ব্যবস্থা। সবচেয়ে চাপটা গেছে স্বাস্থ্য খাতের ওপর। স্বাস্থ্য খাতের বিশৃঙ্খলায় পড়ে এই সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকতে পারেন।

জাতিসংঘের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সংস্থা আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়ে সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন অতিদরিদ্র ও অতিঝুঁকিতে থাকা নারীরা। খবর এএফপির।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বলেছে, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ১১৫টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে তারা দেখেছে, পরিবার পরিকল্পনা সেবার ঘাটতিতে গত প্রায় তিন মাসে ১৪ লাখের (১ দশমিক ৪ মিলিয়ন) মতো নারী অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ করেছেন।

ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক নাটালিয়া কানেম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বিশ্বজুড়ে নারী ও কিশোরীদের ওপর কোভিডের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চরম দরিদ্র ও চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা নারী ও কিশোরীদের। তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সম্পদশালী দেশে তুলনামূলক কম শিশু জন্মগ্রহণ করছে। আর জন্মনিয়ন্ত্রণসুবিধা পাওয়ার অভাবে উন্নয়নশীল দেশে বেশি শিশু জন্ম নিচ্ছে।

গত বছর বিশ্বে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে দেশে দেশে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, মানুষের মধ্যে পেয়ে বসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে লোকজনের যাতায়াত কমে যায়। এতে পরিবার পরিকল্পনা সুবিধায় দেখা দেয় ঘাটতি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক সরবরাহ–ব্যবস্থায় সৃষ্ট বিঘ্ন আরেক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

ইউএনএফপিএ বলেছে, সাম্প্রতিক তথ্য–প্রমাণে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। তবে অনেক দেশ এই সেবা পুনরায় চালু করতে সমর্থ হয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, মহামারির কারণে ১ কোটি ২০ লাখ নারী পরিবার পরিকল্পনা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকতে পারেন। যদিও সংস্থাটির অনুমান এ সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭০টির বেশি দেশে জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য–উপাত্তে দেখা গেছে, ৪১ শতাংশ নারী বলেছেন, করোনাকালে তাঁদের পারিবারিক জন্মনিয়ন্ত্রণ–ব্যবস্থার সুবিধা পেতে বিঘ্ন ঘটেছে। ৫৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এই সুবিধা ধরে রাখতে পেরেছেন।

চলতি সপ্তাহেই জাতিসংঘ শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে দেয়, করোনা মহামারির প্রভাবে এই দশকে অতিরিক্ত এক কোটি শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হতে পারে।