কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়ছে, প্রকট হচ্ছে জলবায়ু সংকট

অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের আগুন থেকে নিজেদের সম্পদ রক্ষার চেষ্টায় স্থানীয় দুই বাসিন্দা। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সিডনির ৩৫০ কিলোমিটার উত্তরে হিলসভিল এলাকায়
ফাইল ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে চলতি বছর কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা আইইএ। এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রয়েছে এ বছরও।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আইইএ গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাসের মহামারির ধাক্কায় বিশ্বজুড়েই অর্থনীতির চাকা প্রায় থেমেই গিয়েছিল। সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে অর্থনীতি আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক এই পুনরুদ্ধারে যে উপকরণগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, কয়লা তার মধ্যে অন্যতম। এর ফলে ২০২১ সালে এত পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হবে, যা ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে জলবায়ু সম্মেলন শুরুর আগমুহূর্তে প্রকাশ করা হলো এই প্রতিবেদন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ও আগামী শুক্রবার বসবে দুই দিনের এই সম্মেলন। এই সম্মেলনকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইইএর এই বার্ষিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন গ্লোবাল এনার্জি রিভিউয়ে বলা হয়, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ মোটের ওপর ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হতে পারে ২০২১ সালে। অথচ গত বছর করোনা মহামারির কারণে দেশে দেশে লকডাউন ও চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমে গিয়েছিল।

২০১৯ সালে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আইইএ বলছে, এ বছর নিঃসরণ বাড়লেও তা ২০১৯-কে ছাড়াতে পারবে না। তবে ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি চাহিদা মহামারির আগের সময়ের পর্যায়ে বাড়বে। ফলে গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার বাড়বে এ বছর।
আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ বছর বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ এক লাফে ১৫০ কোটি টন বেড়ে যাবে। জ্বালানি খাতে কয়লার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হবে। অত্যন্ত জরুরি সতর্কবার্তা হলো, করোনা মহামারির সংকট থেকে অর্থনীতিকে এমনভাবে পুনরুদ্ধার করতে হবে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য টেকসই হয়।’

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের সামনের সড়ক। নদী উপচে প্যারিসের সড়কগুলো গত ৪ ফেব্রুয়ারি জলমগ্ন হয়ে পড়ে
ফাইল ছবি: এএফপি

প্রকট হচ্ছে জলবায়ু সংকট

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট প্রকট হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সংকটে পড়া কোটি কোটি মানুষের সমস্যা আরও প্রকট করে তুলেছে করোনাভাইরাস মহামারি। এদিকে মহামারির কারণে লকডাউন, চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমলেও তার ইতিবাচক কোনো প্রভাব আপাতদৃষ্টে বায়ুমণ্ডলে পড়েনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গত সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার হিসাবে ২০২০ সাল ছিল ২০১৬ ও ২০১৯ সালের মতো সাম্প্রতিক ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। আর ২০১১-২০ হলো ইতিহাসের উষ্ণতম দশক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল, অস্ট্রেলিয়া ও আর্কটিক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বড় অংশজুড়ে বন্যার মতো ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল গত বছর।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেন, ‘এই প্রতিবেদনে সব তথ্য-উপাত্ত বার্তা দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আঘাত হানছে এবং তার হার বাড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে এবং মানুষ, সমাজ ও অর্থনীতি আক্রান্ত হচ্ছে।’