খাসোগি হত্যার প্রতিবেদন থেকে তিনটি নাম গায়েব

জামাল খাসোগি
ছবি: এএফপি

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বহুল আলোচিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা বদল করা হয়েছে। বদল করা প্রতিবেদনে রহস্যজনকভাবে তিনটি নাম গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সিএনএন অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বিকেলে জো বাইডেন প্রশাসন প্রথম খাসোগি হত্যার শ্রেণিবদ্ধ গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খাসোগিকে হত্যার অভিযানে সরাসরি অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই সৌদি আরবের ৭৬ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র জানায়নি।

পরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রথম প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তার বদলে প্রতিবেদনটির আরেকটি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।

প্রথম প্রকাশ করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দুষ্কর্মে সহযোগী হিসেবে যাঁদের নাম উল্লেখ ছিল, নতুন সংস্করণে তেমন তিনজন ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের নতুন সংস্করণে তিন ব্যক্তির নাম গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।

হুট করে গোয়েন্দা প্রতিবেদন বদল ও বদল করা প্রতিবেদনে তিন ব্যক্তির নাম মুছে দেওয়ার বিষয়টিকে ‘রহস্যজনক’ বলছে সিএনএন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দপ্তর প্রতিবেদনটি নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর তা বদল করে। তবে প্রতিবেদন বদলের বিষয়টি অনেকাংশে অগোচরে থেকে যায়। কারণ, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে শাস্তি দিতে জো বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতার দিকটিই এখন আলোচনা-সমালোচনা প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।

বদলি প্রতিবেদনে যে তিন ব্যক্তির নাম মুছে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁরা খাসোগি হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন বা আদেশ দিয়েছিলেন বা কোনো না কোনোভাবে জড়িত-দায়ী।

যে তিন ব্যক্তির নাম গায়েব করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে প্রথম জন হলেন—আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আল-হোয়ারিনি। খাসোগি হত্যায় আগে তাঁর নাম আসেনি। তিনি সৌদি আরবের একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রীর ভাই বলে জানা গেছে। অপর দুজন হলেন ইয়াসির খালিদ আলসালেম ও ইব্রাহিম আল-সালিম। তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ছবি: এএফপি

তিনজনের নাম মূল প্রতিবেদনে কেন ছিল, আর তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দপ্তর কোনো ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দপ্তরের এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমরা ওয়েবসাইটে একটি সংশোধিত নথি দিয়েছি। কারণ, প্রথম প্রতিবেদনটিতে ভুল করে তিনটি নাম রয়ে গিয়েছিল। এই নামগুলো প্রতিবেদনে থাকা উচিত হয়নি।’

প্রতিবেদনে বদল আনার বিষয়টি নজরে আসার আগে শুক্রবার বিকেলে বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, এই প্রতিবেদনে নতুন কিছু নেই।

খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতেও অবশ্য এই তিন ব্যক্তির নাম ছিল না।

খাসোগি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ছিলেন। তিনি তাঁর বিয়ের জন্য কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান। সেখানে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ কেটে টুকরা টুকরা করে গায়েব করে দেওয়া হয়। তাঁর দেহাবশেষ আর পাওয়া যায়নি।

সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। সৌদি আরব প্রথমে খাসোগি খুন হওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে। পরে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

খাসোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শুরু থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমানকে সন্দেহ করা হয়। সৌদির যুবরাজ এই হত্যায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। তবে সৌদির শাসক হিসেবে তিনি এই হত্যার দায় এড়াতে পারেন না বলে স্বীকার করেন।

খাসোগি হত্যার দায়ে সৌদির আদালত দেশটির পাঁচজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে খাসোগির পরিবার হত্যাকারীদের মাফ করে দিলে তাঁদের সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খাসোগি হত্যায় সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করে যে কথা বলা হয়েছে, তা নাকচ করেছে রিয়াদ। সৌদি আরব এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রতিবেদনটিতে সৌদি আরবের নেতৃত্ব সম্পর্কিত নেতিবাচক, মিথ্যা ও অগ্রহণযোগ্য মূল্যায়ন রিয়াদ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেদনটি ভুল তথ্য ও সিদ্ধান্তে ভরা। আগের মতোই সৌদি আরব দাবি করেছে, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।