চীনকে মোকাবিলায় জোর তৎপরতা সিআইএর

উইলিয়াম জে বার্নস
ফাইল ছবি রয়টার্স

তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঝাঁকে ঝাঁকে চীনের যুদ্ধবিমানের মহড়া নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই খবর বেরিয়েছে, চীনকে মোকাবিলায় তাইওয়ানের সেনাদের গোপনে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা–ই নয়, চীনের গোয়েন্দা তৎপরতা ঠেকাতে নতুন শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। মার্কিন পত্রিকাটি বলছে, তাইওয়ানের স্থল ও নৌ সেনাদের প্রশিক্ষণের এই কাজে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অভিযান বাহিনী ও মেরিন সেনারা জড়িত।

এএফপির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তৎপর হয়ে উঠেছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনকে মোকাবিলা করতে আটঘাট বেঁধেই নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিআইএর এই শাখার নাম চীনা মিশন সেন্টার (সিএমসি)। সিএমসির কাজ হবে শুধু চীনের হুমকির ওপর বিশেষ নজর রাখা। সিআইএ প্রধান উইলিয়াম জে বার্নস গত বৃহস্পতিবার সিএমসি গঠনের ঘোষণা দেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইএ জানিয়েছে, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মিশন এলাকায় চীন যেসব হুমকি সৃষ্টি করছে, সেসব মোকাবিলা করবে সিএমসি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বার্নস বলেন, ‘একুশ শতকে আমরা যেভাবে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির হুমকি ও চীনা সরকারের ক্রমবর্ধমান শত্রুতাপূর্ণ আচরণ মোকাবিলা করছি, সিএমএস সেই কাজকে আরও শক্তিশালী করবে।’

সিএমসির জন্য নতুন কার্যালয়ের সঙ্গে সংস্থাটির এই শাখাকে প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী করার কথা জানিয়েছেন বার্নস। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড টেকনোলজি মিশন সেন্টার তৈরির ঘোষণাও দেন। যেখানে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়া, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দেবে তারা। বার্নস জানান, এর জন্য একজন প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাও নিয়োগ করেছে সিআইএ।

চীনকে নিজেদের ‘প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সিআইএ প্রধান বলেন, তাঁরা ‘আক্রমণাত্মক রাশিয়া, উসকানিদাতা উত্তর কোরিয়া ও শত্রুপক্ষ ইরান’ এবং পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মনোনিবেশ করবে।

তাইওয়ানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানেন, এমন দুই মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীগুলোর কয়েকজন সদস্য ভাগ ভাগ হয়ে তাইওয়ানে গিয়ে এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। যদিও ঠিক কত দিন ধরে এই প্রশিক্ষণ চলছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তাঁরা। তবে এই প্রশিক্ষণ জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই চলে আসছে বলে তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সাম্প্রতিক তৎপরতায় বাইডেন প্রশাসনের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে। কিন্তু তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে চীন। তাই জোরপূর্বক তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় তারা।

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিইচির সঙ্গে সাক্ষাতের এক দিন পর গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা জেমস ল্যান্ডেলকে সুলভান বলেন, ‘আমরা রুখে দাঁড়াব, প্রতিবাদ করব। সেটা নিজেদের মধ্যে এবং প্রকাশ্যে দুইভাবেই। বিশেষ করে যখন কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সেনা মোতায়েন করতে তৈরি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সুলভান বলেন, ‘শুধু এতটুকু বলতে চাই, এমন দিন যেন না আসে, সে জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।’

এদিকে তাইওয়ানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে আসছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনার এটিও একটি কারণ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে প্রতিবেদনটির সত্যতা নিশ্চিত বা নাকচ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।