জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বের জন্য কী বার্তা দেবেন বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি বিশ্বের জন্য কী বার্তা দেবেন, তা নিয়ে এখন আলাপ-আলোচনা চলছে।

স্থানীয় সময় ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্ক পৌঁছান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এদিন নিউইয়র্কে পৌঁছেই বিকেলে তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংস্থার মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সমন্বিতভাবে বিশ্বকে শান্তি-সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাইডেন জাতিসংঘ মহাসচিবকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতা-সমর্থনের ব্যাপারে আশ্বাস দেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বিশ্বের উন্নয়ন, শান্তি, নিরাপত্তার জন্য মহামারি করোনা ও জলবায়ুর পরিবর্তন বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্বের পাশে থাকবে।

আর কয়েক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় ২১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বসভায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করবেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। এই নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনে বিশ্বকে আবার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা আগেই বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাধারণ পরিষদে সে কথার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন বাইডেন।

হোয়াইট হাউস থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে যে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আবার বিশ্বমঞ্চে ফিরে আসার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে সাধারণ পরিষদে উচ্চারণ করবেন বাইডেন।

সিএনএন বলছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাধারণ পরিষদে যোগ দিয়ে বিশ্বনেতাদের মন জয় করার চেষ্টা করবেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, নানা বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারেও অন্যান্য দেশের এমন অবস্থান আছে। তবে শেষ পর্যন্ত বড় কথা হলো, এসব বিরোধকে পাশে সরিয়ে রেখে বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির উদ্যোগের কথাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর প্রথম বক্তৃতায় প্রাধান্য দেবেন।

বিশ্বের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক চরম বিরোধপূর্ণ। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে ভিন্ন এক শীতল যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা চুক্তি নতুন বিরোধের জন্ম দিয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে চীন ও ফ্রান্স তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিউইয়র্কে যাওয়ার আগে এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতিতে ইউরোপকে এড়িয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান থেকে তোড়জোড় করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তি ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের মধ্যকার স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততার অন্তরায়।

গত মাসে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্ররা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট।

জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। তারপর বাইডেন ক্ষমতায় এসে বিশ্বরাজনীতির জন্য তিনি যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিলেন, তা একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। ফলে বাইডেনের ক্ষমতার প্রথম আট মাস তাঁর জন্য মোটেই সুখকর হয়নি।

এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির কথা সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জোরের সঙ্গেই ঘোষণা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মহামারি করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলছে। এবারের অধিবেশনে অনেক দেশের নেতারা নিউইয়র্কে সশরীর উপস্থিত না হয়ে ভার্চ্যুয়ালি সাধারণ বিতর্কে অংশ নেবেন।