জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে ‘হত্যার হুমকি’ সৌদি কর্মকর্তার

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (বাঁয়ে) ও সাংবাদিক জামাল খাসোগি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভূমিকা রাখায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ডকে দেশটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান–এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার ক্যালামার্ড বলেন, জাতিসংঘে কর্মরত তাঁর একজন সহকর্মী ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে জানান, সৌদি আরবের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তাঁর ও অন্য সহকর্মীদের মতে, প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ ছিল তাঁকে হত্যার হুমকি।

ক্যালামার্ডের কার্যালয় ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের একজন প্রেস কর্মকর্তা তাঁর ওই মন্তব্যের কথা গতকাল সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি সরকার তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি।

জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক বিদায়ী ওই স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার ২০১৯ সালের জুনে প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে এ উপসংহার টানা হয়, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও সে দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা দায়ী হওয়ার বিষয়ে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে।

পেশাজীবনে খাসোগি সৌদি আরবের ক্ষমতাসীনদের কড়া সমালোচনা করে ওই পত্রিকায় বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছেন।

ক্যালামার্ড দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে বলেছেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সৌদি কূটনীতিকদের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে তাঁকে হত্যার ওই হুমকি দেওয়া হয়। তাঁরা এর সাক্ষী।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক খাসোগি তাঁর বিয়ের জন্য কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান। সেখানে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে লাশ কেটে টুকরা টুকরা করে গায়েব করে দেওয়া হয়। তাঁর দেহাবশেষ আর পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সৌদির ক্ষমতাসীনেরা প্রথমে খাসোগি খুন হওয়ার বিষয় পুরোপুরি অস্বীকার করে। পরে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। খাসোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শুরু থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমানকে সন্দেহ করা হয়।

যুবরাজ এ হত্যায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। তবে সৌদির শাসক হিসেবে তিনি এ হত্যার দায় এড়াতে পারেন না বলে স্বীকার করেন।

ইতিমধ্যে খাসোগি হত্যার দায়ে সৌদি আরবের আদালত দেশটির পাঁচজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে খাসোগির পরিবার হত্যাকারীদের মাফ করে দিলে তাঁদের সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত মাসের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রথম খাসোগি হত্যার শ্রেণিবদ্ধ গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, খাসোগিকে হত্যার অভিযানে সরাসরি অনুমোদন দিয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই সৌদি আরবের ৭৬ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র জানায়নি।