জীবন নিয়ে খেলা

গ্রীষ্মের ছুটিতে প্যাকেজে ট্যুরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহর থেকে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ এসেছি আজ সন্ধ্যায়। কোচের যাত্রীদের মধ্যে আমিই একমাত্র এশিয়ান। বাকি যাত্রীরা সবাই শ্বেতাঙ্গ। ব্রেকফাস্টসহ হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, আর যে যার মতো পাঁচ দিন ঘুরে বেড়ানো। দেশটি আগে কমিউনিস্টদের শাসনে ছিল। বর্তমানে ক্যাপিটালিজমের দিকে নজর দিয়েছে। আজকাল পশ্চিম ইউরোপীয়দের জন্য অবাধে তাদের দেশের দরজা খুলে দিয়েছে। তবুও অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশের মতো এখানে সচরাচর এশিয়ান অথবা কালো লোক খুব কম দেখা যায়। যাও দেখা মেলে, মনে হয় তারা টুরিস্ট অথবা ব্যবসায়ী।
পর দিন হোটেলে ব্রেকফাস্ট সেরে রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞাসা বললাম, ‘তোমাদের রাজধানীর আকর্ষণীয় জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে চাই, কীভাবে ঘোরাফেরা করলে সুবিধা হবে? সে আমার হাতে একটি ওয়ারশ সিটি সেন্টারের ম্যাপ দিয়ে শহরের আকর্ষণীয় জায়গাগুলো দেখিয়ে দিল। আর এও জানিয়ে দিল, সামনের কর্নার-শপ থেকে ‘ওয়ান ডে গেটিং অ্যারাউন্ড সিটি’ টিকিট কিনে নিলে সস্তা পড়বে এবং ওই টিকিট দিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসে বা ট্রামে করে শহরের যেকোনো জায়গায় ঘোরাফেরা করা যাবে। তার কথা মতো, একটা টিকিট কিনে নিলাম। আমার কাছে গ্লাসগো শহরের তুলনায় টিকিটের দাম সস্তাই মনে হল। সারা দিন শহরটির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলাম। ভালোই লাগল শহরটিকে, আরও ভালো লাগল এখানকার লোকদের আতিথেয়তা। সন্ধ্যার পর একটা রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে পাশের ‘প্যালেস অফ কালচারাল অ্যান্ড সায়েন্স’ থিয়েটারে দেখলাম বিখ্যাত ব্যালে ‘সোয়ান লেক’ চলছে। একটা টিকিট কিনে ঢুকলাম, যদিও আমি থিয়েটার ভক্ত নই। প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর কিছু দূর হেঁটে ‘ট্রাম লাইন স্টপে’ এসে দাঁড়ালাম। রাত অনেক হয়েছে, তাই ট্রাম স্টপ প্রায় ফাঁকা। আমার হোটেল হয়ে যে ট্রাম যাবে, সেটি আসতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেবে। তারই অপেক্ষায় থাকলাম। শরীর–মন জুড়ানো শীতল বাতাস বইছে। হঠাৎ অদূর থেকে রবীন্দ্র সংগীত ভেসে আসল, ‘আহা, আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাঁজে...। এই গভীর রাতে, অচিনপুরে কে এই বাংলা গান শুনছে! কিছু দূর এগিয়ে দেখি এক এশীয় তরুণ তার মোবাইল ফোনে রবীন্দ্র সংগীত শুনছে! কাছে গিয়ে তাঁকে ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কি বাঙালি? আমার কথা শুনে ছেলেটি উত্তর দিল, ‘আমি পাকিস্তানি বাঙালি’। সে বলল, ‘আমার বাবা বিহারি বাঙালি, মা ঢাকাইয়া বাঙালি আর আমি জন্মেছি পাকিস্তানের করাচিতে, তাই সবাই আমাকে ‘পাকিস্তানি বাঙালি’ বলে ডাকে! সে আরও পরিষ্কার করে বলল, ‘আমি কখনো বাংলাদেশে যায়নি, তবে ইচ্ছে আছে ঢাকায় যাওয়ার! আমার মা পুরোনো ঢাকার কলতাবাজারের মেয়ে, বাবা জন্মেছে ঢাকার মোহাম্মদপুরে, আর দাদা-দাদিরা ভারত ভাগ হওয়ার পরই বিহার থেকে চলে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে!’
জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি বাংলা গান বোঝ? সে উত্তর দিল, ‘কিছু বুঝি, কিছু বুঝি না, আমার মা বাসায় সব সময়েই বাংলা গান শুনে এবং তা শুনতে শুনতে বাংলা গানের প্রতি আমার একটা গভীর ভালোবাসা জন্মেছে।’ জানতে চাইলাম, ‘তুমি বাংলায় কথা বলতে পারো?’ বলল, ‘খুব একটা পারি না, ভেঙে ভেঙে বলতে চেষ্টা করি, তবে কেউ বাংলাতে কথা বললে বুঝতে পারি! আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে থেকেছি, সে জন্য বাংলা ভাষাটা শেখা হয়ে ওঠেনি।’
ওই তরুণ জানাল, সে ওয়ারশ ইউনিভার্সিটিতে ‘অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। সপ্তাহে দুদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত স্থানীয় ম্যাকডোনাল্ডসে পার্ট-টাইম কাজ করে। তখন সে কাজ থেকে বাসায় ফিরছে। তবে কাজ করতে তারা বাবা–মায়ের মানা। বললাম, আজকাল সহজে মুসলমান ছেলে-মেয়েদের এয়ারলাইনসগুলোতে চাকরি মিলে না। সে কিছু না ভেবেই উত্তর দিল, ‘চাকরি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই! ভালো লাগে, তাই পড়ছি!’
আমি ডান হাত বাড়িয়ে বললাম, ‘ওহ, আমাদের তো এখন পর্যন্ত পরিচয়ই হয়নি। আমার নাম আবুল কাসেম। স্কটল্যান্ড থেকে পোল্যান্ডে বেড়াতে এসেছি, আমি সিটি সেন্টারে ‘গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলে’ উঠেছি। তরুণ তার নাম সাঈদ সিদ্দিকী বলে জানাল। এখানে মা-বাবার সঙ্গে থাকে। আমার ট্রাম এসে পড়ায় আমাদের কথা-বার্তা আর বেশি দূর এগোল না। একে অন্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
সারা দিন ঘোরাঘুরির ক্লান্তিতে রাতের ঘুম ভালো হলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্টের জন্য তৈরি হচ্ছি, ঠিক সেই সময় হোটেলের রিসেপশন থেকে ফোন, ‘একজন ভদ্রলোক ও একজন ভদ্রমহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।’ কথাটা শুনে বেশ অবাকই হলাম। ফোনে অচেনা ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি পরিচয় দিলেন, ‘আমার নাম মাসুদ সিদ্দিকী, গত রাতে আমার ছেলে সাঈদ সিদ্দিকীর সঙ্গে আপনার ট্রাম স্টপে আলাপ হয়েছিল। এসেছি আপনার সঙ্গে দেখা করব বলে। আমি তাঁদের লাউঞ্জে বসতে বললাম। লাউঞ্জে আসলে সিদ্দিকী আমার সঙ্গে করমর্দন করে তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সাঈদ থেকে গতকাল রাতে তাঁর বাবা–মা সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছি। আজ আলাপ-আলোচনায় আরও কিছু জানতে পারলাম, বিশেষ করে সিদ্দিকী সম্পর্কে। তাঁর জন্ম ঢাকার মোহাম্মদপুরে। নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট করেছে। পরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংলিশে এমএ করে ‘ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে’ শিক্ষকতা শুরু করেন। আমি জানালাম, বর্তমানে ওই কলেজের নাম ‘কবি নজরুল ইসলাম কলেজ’। তিনি জানালেন, তাদের সময় ঢাকা কলেজ পুরোনো রেল স্টেশন ফুলবাড়িয়া সিদ্দিক বাজার রোডে ছিল। পাকিস্তান সরকারের ‘সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস’ বা সিএসপি পরীক্ষা দেন। তবে সুযোগ হয়নি। পরে পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিসে কাজ করার অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু যাননি।
মাসুদ বললেন, তাঁদের বিয়ের বছর খানিকের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। তাঁর স্ত্রী পুরান ঢাকার বাঙালি মেয়ে হলেও তিনি পৈতৃকসূত্রে বিহারি বলে তাঁদের উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে অনেকে। একপর্যায়ে প্রাণের ভয়ে তাঁদের ঢাকা ছেড়ে করাচি চলে যেতে হল। পরে তিনি তাঁর গাড়িতে ওয়ারশ শহর ঘোরার প্রস্তাব দেন। আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, শহর গতকাল দেখা হয়ে গেছে। আজ সকালে বিশ্রাম নিয়ে পরে আশপাশে ঘুরে আসব। কাল হয়তো Auschwiz Birkenau Concentration ক্যাম্প দেখতে যেতে পারি। এই ক্যাম্পের ইতিহাস ছাত্রজীবনে বইয় পড়েছি।
মাসুদ বললেন, ক্যাম্প তো এখান থেকে অনেক দূরে, আপনি কীভাবে যাবেন? আমি উত্তর দিলাম, ট্রেনে করে যেতে পারি। তিনি আমার কথা শুনে বন্ধুত্ব সুলভ কণ্ঠে বললেন, ‘ট্রেনে করে কেন যাবেন, আমরাই আপনাকে গাড়িতে করে ঘুরিয়ে আনব। আমি কিছুটা সংকোচবোধ করায় মিসেস সিদ্দিকী বললেন, ‘কাসেম সাহেব, আপনি আমাদের দেশের লোক, এ দেশে বেড়াতে এসেছেন, আমাদের একটু আতিথেয়তা করার সুযোগ দিন। এরপর আর ‘না’ বলতে পারলাম না।
পরদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোরে মিস্টার সিদ্দিকী ছেলে সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে আমার হোটেলে হাজির। দূরের পথ, তাই গাড়ি চালাতে সাহায্য করবে বলে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসা। পথে আমরা সবাই মোটরওয়ের সার্ভিস স্টেশন থেকে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ সারলাম। দুপুর দেড়টা নাগাদ আমরা Auschwitz-Birkenau পৌঁছে গেলাম। ক্যাম্পে প্রবেশের জন্য টিকিট কিনে সবাই ঢুকে পড়লাম। ভেতরে ঢোকার পর দেখলাম ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য। মানুষ যে এত পিশাচ হতে পারে, তা কল্পনাতীত। নিজেদের স্বার্থ আর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতার অপব্যবহারের এক চূড়ান্ত লক্ষণ। নিরীহ, অসহায়, নির্দোষ ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলনা, জুতা-স্যান্ডেল, স্কুলের ব্যাগ ইত্যাদি ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। অনেক জিনিসপত্রের মধ্যে রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে। আদেশ অবমাননা করায় কীভাবে বন্দীদের উৎপীড়ন এবং যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে, তা না দেখলেই মনে হয় ভালো হতো। হিটলার কীভাবে ইহুদিদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন, এই ক্যাম্প তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ইহুদিদের নিশ্চয় আজ বোঝা উচিত, মানুষের জীবন কত মূল্যবান। তবে তারা কেন এখনো সেই একইভাবে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় মগ্ন?
আমি প্রশ্নটি করলাম সিদ্দিকী সাহেবকে। তিনি একটু সময় নিয়ে বললেন, ‘ব্যাপারটা শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কের মতো। নতুন বউ যখন শ্বশুর বাড়ি আসে এবং সারা জীবন শাশুড়ির গঞ্জনা, অপমান আর, জ্বালাতন সহ্য করে, তখন সে মনে মনে ভাবে, সে যখন শাশুড়ি হবে তখন সে তার ছেলের বউয়ের সঙ্গে আর এ রকম খারাপ বাবহার করবে না। তাকে ভালোবেসে যাবে নিজের মেয়ের মতো। কিন্তু বউ যখন নিজে শাশুড়ি হয়, তখন সে একই ছেলে বউয়ের সঙ্গে রকম খারাপ বাবহার করে। আজ ইসরায়েলের ইহুদিরা তাই করছে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে। আমরা ক্ষমতাবানরা কেউই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই না।’
Auschwitz দেখার পর আমাদের ওয়ারশ ফেরার সময় হয়ে এল। এবার ড্রাইভিং সিটে সাঈদ বসল, আমি আর মাসুদ সিদ্দিকী পেছনের সিটে বসলাম। আমরা সবাই ক্লান্ত। পথে মাসুদ সাহেব তার জীবনের আরও অনেক কথা বললেন, অনেকটা আক্ষেপ করে। ঢাকা থেকে করাচিতে গিয়ে বাঙালি পাড়া ‘চিটাগং কলোনি’তে এক বাঙালি ভদ্রলোকের বাসায় আশ্রয় পেলেন না। কাজের জন্য নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন। কে দেবে কাজ? তারা বলে, ‘পাকিস্তানি বাঙালি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে’। তিনি যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো কাজ পেলেন না। অনেক চেষ্টা করে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে গিয়ে একই সমস্যায় পড়লেন। বরং আরও একটা নতুন সমস্যা যোগ হলো, সেটা হলো বর্ণবাদ সমস্যা। বাধ্য হয়ে ‘পোস্টম্যানের’ চাকরি নিলেন। পশ্চিম লন্ডনে ‘সাউথ হলে’ থাকতেন। সেখানে পরিচয় হয় এক উগান্ডান এশীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল। দুজনে মিলে চামড়ার পোশাকের ব্যবসা আরম্ভ করলেন। এবার ভাগ্যলক্ষ্মী সদয় হলো। কয়েক বছর কষ্ট করতে হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা উন্নতি হতে থাকে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য ছাড়াও পোল্যান্ডে তাদের দুটি চামড়ার পোশাক তৈরির কারখানা রয়েছে। তিনি পোল্যান্ডের ব্যবসা দেখাশোনা করেন, আর তার বন্ধু হাবিব আমিরওয়ালা যুক্তরাজ্যের কারখানা দেখাশোনা করেন। আজ মাসুদ সিদ্দিকী সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি, কোটি টাকার মালিক।
আক্ষেপের সুরে মাসুদ সিদ্দিকী বললেন, ‘এ জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি, তার মধ্যে জন্মভূমিকে হারানো সবচেয়ে কষ্টকর। শুধু স্মৃতিটুকু রয়ে গেল। প্রাণের ভয়ে দেশ ছাড়তে হল। পরিবার নিয়ে যাযাবরের মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হন্য হয়ে ঘুরেছি। হারিয়ে ফেলেছি নিজেদের পরিচয়। আমরা না বাঙালি, না বিহারি, না পাকিস্তানি, না ব্রিটিশ বাঙালি, না বাঙালি পোলিশ। আসলে আমরা যে কি, তা আমরা নিজেরাই জানি না। আমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।’
কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ থামলেন। তারপর ভারী গলায় আবার শুরু করলেন, ‘পৃথিবীতে ক্ষমতা লোভীরা নিজেদের লোভ চরিতার্থ করার জন্য নানা পন্থার আশ্রয় নেয়। এই ধরুন ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য—যেকোনো একটা বিষয়কে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে তারা তাদের মনোবাসনা পূর্ণ করে। সাধারণ মানুষের কার কি ক্ষতি হলো তা দেখার প্রয়োজন মনে করে না। “
আমি সিদ্দিকী সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, উনি তীব্র মানসিক বেদনায় কষ্ট পাচ্ছেন। আমি তাঁকে সান্ত্বনা দিলাম, আপনি দেশ ছেড়েছেন প্রাণের ভয়ে, আর আমি দেশ ছেড়েছি অর্থের মোহে। দুজনের চলার পথ দুরকম, কিন্তু আমাদের গন্তব্য একই। বাংলার মাটি আমাদের নাগালের বাইরে। জীবনটা প্রবাসেই রয়ে যাবে।’
আমাদের গাড়ি দুরন্ত বেগে ওয়ারশ অভিমুখে ছুটছে, আর তার সঙ্গে বাইরের মাতাল হাওয়া যেন আমাদের প্রশ্ন করছে, ‘কে এর জন্য দায়ী?’