ট্রাম্প এবার বিচার বিভাগের ওপর চড়াও হলেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

মার্কিন জনগণকে জনপ্রতি দুই হাজার ডলার করেই প্রণোদনা দেওয়ার টোপ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশের বিচার বিভাগ, সুপ্রিম কোর্টসহ রিপাবলিকান নেতাদের ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ চালিয়েছেন। তাঁর জয় করা নির্বাচন ছিনিয়ে নেওয়া থেকে রক্ষার জন্য সরাসরি চাপ দিচ্ছেন দলের নেতাদের। নিজেকে জনগণের কাছে ভালো দেখানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ চাপ আইনপ্রণেতারা কীভাবে মোকাবিলা করবেন, এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা তৎপরতা।

গতকাল শনিবার ফ্লোরিডার মার এ লাগো রিসোর্টে বসে একের পর এক টুইট বার্তা আর ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর টেবিলে রয়েছে ফেডারেল সরকার পরিচালনার অর্থ বিল ও নাগরিক প্রণোদনা নিয়ে কংগ্রেসের সমঝোতার আইনপ্রস্তাব। এ প্রস্তাবে অনুমোদন না দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, জনপ্রতি দুই হাজার ডলার প্রস্তাব করে নিয়ে আসা হোক। নতুন প্রস্তাবে বাইরের দেশের জন্য আমেরিকার কোনো সাহায্য না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শক্ত ভাষায় করোনা রিলিফ বিলে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ আইনপ্রস্তাবে অনুমোদন না দিলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন রিপাবলিকানদের ওপর। ট্রাম্প বলেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি এমন পরিস্থিতিতে পড়লে যুদ্ধের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ত। ট্রাম্পের ভাষায়, এমন জালিয়াতি ও কারচুপির নির্বাচনের ফলাফল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিপক্ষে গেলে দলটির আইনপ্রণেতারা মরিয়া হয়ে উঠতেন। অথচ সনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককন্যালসহ কেউ কিছু করছেন না বলে ট্রাম্প বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককন্যাল শুরুতে নীরব ছিলেন। ইলেক্টোরাল ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর জো বাইডেনকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির পক্ষে দাঁড়াননি তিনি। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্পের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের বলছেন সিনেটর মিচ ম্যাককন্যাল।

উল্লেখ্য, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল অনুমোদন করার কথা। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের আগে ৬ জানুয়ারির কংগ্রেসের অধিবেশনই আমেরিকার জটিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। নিজের সমর্থক আইনপ্রণেতাদের নিয়ে কংগ্রেসের অধিবেশনে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে এখন চাপ সৃষ্টির জন্য নানা কৌশল আরোপ করছেন। নাগরিক প্রণোদনা–প্রস্তাবে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা জনপ্রতি ৬০০ ডলারের বেশি প্রদানে সম্মত ছিলেন না। জনগণের জন্য দুই হাজার ডলারের প্রস্তাব দিয়ে ট্রাম্প এখন রিপাবলিকানদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন জনগণের সামনে।

নাগরিকদের জন্য কংগ্রেসের সমঝোতা বিলের সঙ্গে বাইরের দেশের জন্য আমেরিকার কিছু অনুমোদন–প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিকেশন ও ডিসেন্সি অ্যাক্টের ২৩০ ধারায় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে দেওয়া সুবিধা বাতিল করতে চান ট্রাম্প। আইনের এ ধারার সুবিধায় ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান কোনো কনটেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। কনটেন্ট প্রকাশের আগে এ নিয়ে জনগণকে সতর্ক করতে পারে। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব ফেসবুক পোস্ট বা টুইটার পোস্টে এ ধরনের সতর্কীকরণ বক্তব্য এখন দেখা যাচ্ছে।

মার এ লাগো রিসোর্ট থেকে দেওয়া টুইটারে ট্রাম্প নাগরিক প্রণোদনা আইনের সঙ্গে প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য এ ২৩০ ধারা বাতিল করার বিষয়ও যুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন।
নিজের প্রশাসনের বিচার বিভাগ ও এফবিআই ট্রাম্পের ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে কিছু করেনি বলেও পৃথক টুইট করেছেন তিনি। তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ৬ জানুয়ারি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সবার সঙ্গে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টকে একদম অযোগ্য প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, এত জালিয়াতির প্রমাণ থাকার পরও সুপ্রিম কোর্ট মামলা আমলে নেওয়ার গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে পাচ্ছেন না। নির্বাচন নিয়ে এমন দুর্নীতি হলে আমেরিকা নামের আর কোনো দেশই থাকে না বলে তিনি আক্ষেপ করেছেন।

আফগানিস্তানের নির্বাচন আমেরিকার ২০২০ সালের নির্বাচন থেকে বেশি নিরাপদ হয়ে থাকে—এমন কথা আফগানফেরত এক সৈনিক তাঁকে বলেছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বের নির্বাচনের মতো হয়ে গেছে আমেরিকার নির্বাচন। এমন নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন একজন ভুয়া প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি আমার মহান জনগণের জন্য দুই হাজার ডলার করে জনপ্রতি প্রদান করতে ইচ্ছুক।’ হাজার হাজার কোটি ডলার অন্যদের না দিয়ে জনগণকে বর্ধিত প্রণোদনা দেওয়ার কথা আবারও বলেছেন ট্রাম্প।

করোনা রিলিফের সমঝোতা আইনপ্রস্তাব ট্রাম্প অনুমোদন না করলে করণীয় নিয়ে আইনপ্রণেতারা আগামীকাল সোমবার কংগ্রেসের অধিবেশনে বসছেন। প্রেসিডেন্টের ভেটো এড়িয়ে আইন পাস করার কাজ চলছে। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে নগদ দুই হাজার ডলারের প্রস্তাব নিয়ে পৃথক আরেকটি জরুরি আইনপ্রস্তাবও গ্রহণ করা হচ্ছে বলে আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এ নিয়ে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। ট্রাম্পের চাপে বেশ চুপসে গেছেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা।

এদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে সমঝোতা আইনপ্রস্তাবের জন্য উভয় দলের আইনপ্রণেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ আইনপ্রস্তাব দ্রুত অনুমোদন না করলে আমেরিকার অগুনতি মানুষ কঠিন সমস্যায় পড়বে। উৎসবের এ মৌসুমে বিপর্যস্ত বহু মার্কিন পরিবারের পাতে খাবার উঠবে না উল্লেখ করে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্রুত সমঝোতা আইনপ্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন।