ট্রাম্প মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করেছেন: বাইডেন

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা জো বাইডেন বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করেছেন। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা তথ্য তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে এমন তথ্য–সহযোগিতা না করা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জো বাইডেন উল্লেখ করেছেন।


প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো পরাজয় মেনে নেননি। ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব সীমিত সহযোগিতা করা হচ্ছে জো বাইডেনকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণে নাজুক হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে এবারে ক্ষমতার পালাবদলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ভিন্ন আয়োজনে। জো বাইডেনের নিজের শহর ডেলোয়ার রাজ্যের উইলমিংটন শহর থেকেই ট্রানজিশনের কার্যক্রম তিনি দেখভাল করছেন।
২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক বিষয়ে কর্মসহযোগীদের ব্রিফিং গ্রহণ করেছেন জো বাইডেন। ব্রিফিং গ্রহণের পর দেওয়া বক্তৃতায় বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না।

নির্বাচনের ফলাফলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভের তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাইডেন শিবিরকে আদৌ কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ক্ষমতার পালাবদলে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
জো বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা অফিস থেকে তিনি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রশাসন থেকে সব ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। বিষয়টি দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এই মুহূর্তে সারা বিশ্ব সম্পর্কে, যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া প্রয়োজন বলে জো বাইডেন উল্লেখ করেন।


জো বাইডেন বলেছেন, সরকারের সংস্থাগুলো আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য জটিল সব কাজ করে থাকে। ব্যক্তিগত প্রভাবে এসব সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং নৈতিকতা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নির্বাচনের পরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিরাপত্তামন্ত্রী মার্ক এস্পারকে বরখাস্ত করেন। নাগরিক আন্দোলনের সময় সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এস্পারের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। প্রতিরক্ষা বিভাগে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতি অনুগতদের জড়ো করার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার শেষ সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্বপ্ন দেখছেন, ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তাঁর পক্ষে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা দাঁড়াবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ সাংবিধানিক এ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে ট্রাম্প কোনো সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে না।


নানা মহল থেকে এখনো পরাজয় মেনে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তিনি কারও কথায় কান না দিয়ে তাঁর টুইট বার্তা ও ফেসবুক পোস্টিং অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল সোমবার দেওয়া সর্বশেষ টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটারদের চেয়ে নাকি ২ লাখ ৫ হাজার বেশি লোক ভোট প্রদান করেছেন। তাঁর এসব অমূলক দাবি নিয়ে মার্কিন কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমও আর সংবাদ পরিবেশন করছে না।

প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কমলা হ্যারিস নিজেদের মতো করে তাঁদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ের মতো হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন টনি ব্লিনকেন। জেইক সুলিভান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং জন কেরি জলবায়ু বিষয়ে প্রেসিডেন্টের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন।


বাইডেন প্রশাসনের জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন করা লোয়েড অস্টিনের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য বেগ পেতে হতে পারে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর জেনারেল হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশাসনে ফিরে না আসার আইন রয়েছে।