ট্রাম্পকে ‘উন্মাদনা’ বন্ধ করতে বলল তাঁরই প্রিয় পত্রিকা

ডোনাল্ড ট্রাম্প

‘মি. প্রেসিডেন্ট, এই অন্ধকার উপত্যকা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন নিয়ে অবসন্নতায় ভুগছেন। বলছেন, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা সাহস দেখালে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারবেন। আপনি আরও চার বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। মি. প্রেসিডেন্ট, আপনি অগণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে আনন্দের সঙ্গে সমর্থন দিচ্ছেন।’

রক্ষণশীল জনপ্রিয় মার্কিন পত্রিকা নিউইয়র্ক পোস্ট এভাবেই তাদের প্রথম পাতার সম্পাদকীয় মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ‘মি. প্রেসিডেন্ট, স্টপ দ্য ইনস্যানিটি’ শিরোনামের ওই সম্পাদকীয় নিয়ে মার্কিন একাধিক সংবাদপত্র প্রতিবেদনও করেছে। সিএননের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক পোস্ট ট্রাম্পের প্রিয় পত্রিকা।

গত রোববার রাতে প্রথম অনলাইনে পোস্ট করা এই মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেট নির্বাচন আগামী চার বছরে আমেরিকার রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই মার্কিন সিনেটে কোন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসবে, তা নির্ধারিত হবে।

নিউইয়র্ক পোস্টের মন্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে তদন্ত করার আপনার সব অধিকার ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের এমন চেষ্টার ব্যর্থতার উল্লেখ করে প্রতিবেদনে দুটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। উইসকনসিনের ভোট পুনর্গণনার জন্য ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে ৩০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। পুনর্গণনার পর দেখা গেছে, ট্রাম্পের ভোট আরও ৮৭টি কমেছে।

জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে দুবার ভোট পুনর্গণনা করা হয়েছে। প্রতিটি গণনায় বাইডেনকেই জয়ী দেখা গেছে। এসব ভোট হাতে গণনা করা হয়েছে। পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ গণনার পর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ আর ধোপে টেকে না।

ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবী সিন্ডি পাওয়েলকে নিউইয়র্ক পোস্ট ‘উন্মাদ’ বলে উল্লেখ করেছে। সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে নিয়ে সিন্ডি পাওয়েল আমেরিকায় সামরিক শাসন জারি করার যে আলাপ করেছেন, তা দেশদ্রোহের শামিল এবং লজ্জাজনক বলে পোস্ট উল্লেখ করেছে।

পোস্ট বলেছে, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা জানি আপনি ক্ষুব্ধ। কিন্তু আপনার এই অধোযাত্রা আরও বেশি ধ্বংসাত্মক।’ পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে একটি সংবাদপত্র হিসেবে নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছে। বলেছে, ‘আপনি যদি আপনার প্রভাব বজায় রাখতে চান, এমনকি ভবিষ্যতে মঞ্চে আবার ফিরে আসতে চান, তাহলেও গতিবিধি পরিবর্তন করে ভালো কিছুর দিকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে।’

পোস্ট ৬ জানুয়ারির পরিবর্তে জর্জিয়ার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে নজর দিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসে জো বাইডেন, কংগ্রেসে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং সিনেটে চাক শুমার নেতা হলে পরিণতি নিয়ে ভাবতে আহ্বান জানানো হয়েছে ট্রাম্পের প্রতি। এ তিন জায়গায় ডেমোক্র্যাট থাকা মানে যুক্তরাষ্ট্র আবার ট্রাম্পের সময়ের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, ট্রাম্প যেসব রক্ষণশীল নীতি আরোপ করেছিলেন, তার সবই পাল্টে যাবে বলে নিজেদের আশঙ্কার কথা বলেছে নিউইয়র্ক পোস্ট।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে নিউইয়র্ক পোস্ট বলেছে, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, বিবেচনা করে দেখুন, শূন্য থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার উত্থান হয়েছিল।’

ট্রাম্প কখনো আইনজীবী ছিলেন না। কোথাও কোনো রাষ্ট্রীয় কাজের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও তাঁর নেই। ক্ষমতায় এসে তিনি রাজনীতির সবকিছু উল্টেপাল্টে দিয়েছেন। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। এমন কাজ আমেরিকার ইতিহাসে অল্প লোকই করতে পরেছেন বলে নিউইয়র্ক পোস্ট উল্লেখ করেছে।

পোস্ট বলেছে, জর্জিয়ার ৫ জানুয়ারির সিনেট নির্বাচনে জয় আনার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নীতিমালার ধারাবাহিকতা কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারবেন। রিপাবলিকান পার্টিকে বিপর্যয়ে ফেলে ক্ষমতা ত্যাগের পরিণাম ভালো হবে না ট্রাম্পের জন্য। পোস্ট বলেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক মেয়াদের ক্ষতিকর প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করবে।

উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ‘কিং লিয়ার’ নামের বিখ্যাত ট্র্যাজেডি নাটকের মতো ‘মার এ লাগো’ ক্লাবের দুর্নীতির রাজা হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টি ট্রাম্পকে চিহ্নিত করবে। পোস্ট বলেছে, দুঃখজনক হলেও ট্রাম্প নিজেই ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এই সুযোগ করে দিচ্ছেন।

গত নির্বাচনে খুব কম সংবাদমাধ্যমই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করেছে। রক্ষণশীল পত্রিকা হিসেবে পুরোটা সময় প্রভাবশালী এই পত্রিকা জো বাইডেন এবং তাঁর পরিবারের বিপক্ষে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত হয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প নিজেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর চরম বৈরী সম্পর্কের মধ্যেও নিউইয়র্ক পোস্টকে নিয়ে বহুবার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। গত রোববার নিউইয়র্ক পোস্ট বাজারে এলে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা গেছে।

ব্রায়ান ওয়াকার নামের নিউজার্সির এক ট্রাম্প–সমর্থকের হাতে গতকাল সোমবার সকালে নিউইয়র্ক পোস্টের ছাপা কপি দেখা যায়। হাতে নিয়ে ওয়াকার বলেন, ‘আমারও একই বার্তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি। রিপাবলিকান পার্টিকে ট্রাম্প যেন আরও পচিয়ে দেওয়ার কাজে না নামেন।’

নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে ক্ষমতায় থাকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের প্রত্যাশার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট। পত্রিকাটি বলেছে, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, ক্ষমতায় থাকার শেষ দিনগুলোয় যদি সব ধ্বংস করার প্রয়াস অব্যাহত রাখেন, তাহলে একজন পরিবর্তনকামী হিসেবে নয়, একজন নৈরাজ্যবাদী হিসেবেই আপনাকে ভবিষ্যতে স্মরণ করা হবে।’