ট্রাম্পের জন্য প্রাণ দিলেন যে নারী

ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছেন ট্রাম্প–সমর্থকেরা
ছবি: রয়টার্স

নিহত হওয়ার মাত্র এক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাশলি ব্যাবিট যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের সমাবেশ নিয়ে লেখা পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। তারা চেষ্টা, চেষ্টা আর চেষ্টাই করতে পারে। কিন্তু ঝড় আসছে। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে এটি ওয়াশিংটন ডিসিতে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে গত বুধবার ট্রাম্পের শত শত সমর্থক যে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছেন ও পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়িয়েছেন, তাঁদের একজন অ্যাশলি ব্যাবিটও। ওই হামলা ও সহিংসতা চলাকালে যে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদেরই একজন তিনি। পরে ক্যাপিটল পুলিশ তাঁর বিস্তারিত পরিচয় বের করে। খবর বিবিসির।

অ্যাশলি (৩৫) মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। কুয়েত এবং কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে আফগানিস্তান ও ইরাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সাবেক স্বামী টিমোথি ম্যাকএনটি মার্কিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যানডিয়েগো থেকে উঠে আসা এই নারী সম্প্রতি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। স্বামী অ্যারন ব্যাবিটের সঙ্গে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অ্যাশলি নিজেকে একজন উদারপন্থী ও দেশপ্রেমী হিসেবে তুলে ধরেন। ট্রাম্পের পক্ষে তিনি প্রায়ই পোস্ট দিতেন এসব মাধ্যমে। সেসব পোস্টে থাকত ট্রাম্পের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ সমর্থনের কথা। গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে হারার পর ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির যে মিথ্যা অভিযোগ তোলেন, তার সঙ্গেও সুর মেলান তিনি।

অ্যাশলি ব্যাবিট
টুইটার থেকে নেওয়া ছবি

স্বামী ম্যাকএনটি গণমাধ্যমকে অ্যাশলি সম্পর্কে বলেন, ‘তার এমন একটি ব্যক্তিত্ব ছিল, যা আপনি পছন্দ কিংবা ঘৃণাও করতে পারেন। এ নিয়ে তার মধ্যে কোনো অপরাধবোধ কাজ করত না। সে এ নিয়ে গর্ব করত। যেমন গর্ব করত নিজের দেশকে নিয়ে বা একজন মার্কিন নাগরিক হতে পেরে।’

গত সেপ্টেম্বরে অ্যাশলি স্যানডিয়েগোতে ট্রাম্পের পক্ষে একটি নৌ কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তাঁর গায়ে থাকা শার্টে লেখা ছিল ‘আমরা কিউ’। কিউ বলতে কট্টর ডান গ্রুপ কিউঅ্যাননকে বুঝিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের পক্ষে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমর্থক এই গ্রুপ।

ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলার ঘটনায় প্রকাশিত একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে একদল দাঙ্গাকারীর সঙ্গে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান কর’ লেখা সংবলিত পতাকা গায়ে এক নারী। তালাবদ্ধ কয়েকটি দরজা ভেঙে বিভিন্ন কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। এ সময় এক পুলিশ সদস্য তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করে ছিলেন।

ওয়াশিংটনে বুধবার ট্রাম্পের পক্ষে তাঁর সমর্থকদের বিক্ষোভ হওয়ার কয়েক দিন আগে অ্যাশলি টুইটারে লিখেছিলেন, ওই বিক্ষোভে অংশ নেবেন তিনি। লিখেছিলেন, ‘আমি ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে যাব! স্রষ্টা যুক্তরাষ্ট্র ও “ডব্লিউডব্লিউজি১ ডব্লিউজিএ”–এর মঙ্গল করুক।’ কিউঅ্যানন গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছে এটি একটি পরিচিত শব্দসংক্ষেপ।

অ্যাশলি ট্রাম্পের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নিলেও স্বামী ম্যাকএনটি তাতে যোগ দেননি বলে তাঁর শাশুড়ি জানান। তিনি বলেন, ‘সে কেন বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, আমি সত্যিই তা জানি না।’

ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলার ঘটনায় প্রকাশিত একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে একদল দাঙ্গাকারীর সঙ্গে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান কর’ লেখা সংবলিত পতাকা গায়ে এক নারী। তালাবদ্ধ কয়েকটি দরজা ভেঙে বিভিন্ন কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। এ সময় এক পুলিশ সদস্য তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই হয়তো অ্যাশলি ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী দরজার কাছে একটি উঁচু স্থান বেয়ে যাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পরই এক বিকট শব্দ শোনা গেল। তখন মেঝেতে পড়ে গেলেন তিনি।

গত সেপ্টেম্বরে অ্যাশলি স্যানডিয়েগোতে ট্রাম্পের পক্ষে একটি নৌ কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তাঁর গায়ে থাকা শার্টে লেখা ছিল ‘আমরা কিউ’। কিউ বলতে কট্টর ডান গ্রুপ কিউঅ্যাননকে বুঝিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের পক্ষে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমর্থক এই গ্রুপ।

এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে ক্যাপিটল পুলিশ বলেছে, তাদের এক সদস্য দাঙ্গাকারী একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে লক্ষ্য করে গুলি করেছেন। ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলার সময় কংগ্রেস সদস্যরা যে স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীরা সেই চেম্বারে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।

পুলিশ বলেছে, অ্যাশলিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে গত বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান তিনি। আর তাঁকে গুলি করা পুলিশ সদস্যকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ওই দাঙ্গাকালে আরও তিনজন নিহত হন। পুলিশ জানায়, তাঁরা সবাই বিক্ষোভে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে এসেছিলেন। নগর পুলিশের প্রধান রবার্ট কন্টি বলেন, সহিংসতা চলাকালে অন্তত ১৪ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।