ট্রাম্পের মতো এত বিপর্যস্ত দেশ রেখে যাননি কোনো প্রেসিডেন্ট

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সবকিছু ঠিক থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০ জানুয়ারি। কিন্তু নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য এমন এক দেশ তিনি রেখে যাচ্ছেন, যা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ১৫০ বছরের ইতিহাসে দেশকে এমন খারাপ অবস্থায় রেখে যাননি কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একের পর এক সহিংসতা, করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাহাড় আর জনগণের মধ্যে বিভেদের দেয়াল সৃষ্টির জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ক্ষমতার মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসেও ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) গত সোমবার সতর্ক করে দিয়েছে, বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই সশস্ত্র বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প–সমর্থকেরা। এটা অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকেই নয়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের থেকেও ভয়ংকর সব তথ্য আসছে। তাঁদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের অবজ্ঞার ফলে সামনের দিনগুলোতে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরে গেছে। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি বাজে ইতিহাস সাক্ষী হতে চলেছে, আর তা হলো প্রেসিডেন্টের অভিশংসন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুইবার অভিশংসনের মুখে পড়লেন। এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টকে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি বাজে ইতিহাস সাক্ষী হতে চলেছে, আর তা হলো প্রেসিডেন্টের অভিশংসন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুইবার অভিশংসনের মুখে পড়লেন। এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টকে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে গত বুধবার কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই উদ্যোগ। যদিও ট্রাম্পকে রক্ষার জন্য তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির কিছু আইনপ্রেণতা এই অভিশংসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি সৃষ্টি হয়। আর সেই বিভক্তি মারাত্মক আকার ধারণ করে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন জয়ী হলেও পরাজয় মানেননি ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা জয় চুরি করে নিয়েছেন ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে। তাঁর কথা বিশ্বাসও করছেন তাঁর সমর্থকেরা। ফলে তাঁরা সহিংস হয়ে উঠছেন। ট্রাম্পের উসকানিতে ওই সহিংস গোষ্ঠীতে ভিড়ছেন পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যও। এ কারণে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আর তাই হামলা থেকে সরকারি ভবনগুলো রক্ষা করতে এর আশপাশে ব্যারিকেড, তারের বেড়ার মতো প্রতিবন্ধকতা গড়ে তোলা হচ্ছে শহরে শহরে।

ট্রাম্প সমর্থকেরা দলে দলে ভবনে প্রবেশ করেন
ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের সহিংসতার ধরন

ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের উসকানি একটিমাত্র উদাহরণ নয়। আরও অনেক সময় তাঁর প্রত্যক্ষ উসকানি লক্ষ করা গেছে। ভার্জিনিয়ার চার্লটসভিলে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মহড়ার নিন্দা না জানালেও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের নৈরাজ্যবাদী বামপন্থী বলতে ছাড়েননি ট্রাম্প। এর মধ্যে ট্রাম্প–সমর্থকদের দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের তথ্য সোমবার প্রকাশ করে এফবিআই। সংস্থাটি বলেছে, ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে হুমকি আরও বেড়ে যাবে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির জন্য এই হুমকি হবে আরও ভয়াবহ।

ট্রাম্পকে অপসারণের বিরোধিতা করলেও ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ রিপাবলিকান আইনপ্রেণতা। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাককার্থি বলেছেন, ট্রাম্পকে অপসারণের ঘটনা দেশে বিভক্তি আর অস্থিতিশীলতা আরও বাড়াবে। তাই তাঁরা অভিশংসনের বিরোধী। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তার জন্য মোটেও সুখকর নয় বলে মনে করেন দলের অনেকে।

ট্রাম্পকে অপসারণের ঘটনা দেশে বিভক্তি আর অস্থিতিশীলতা আরও বাড়াবে।
কেভিন ম্যাককার্থি, প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু নেতা

ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর ট্রাম্পকে সেভাবে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ট্রাম্পের পোস্ট সহিংতা উসকে দিতে পারে, এমন শঙ্কায় তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে। তবে ট্রাম্প তাঁর কর্মকাণ্ড থেকে মোটেও পিছু হটেননি। অনেকটা নিজের একগুঁয়েমির প্রকল্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কার্যক্রম দেখতে যাবেন শিগগিরই।

ট্রাম্পের অবজ্ঞার কারণে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক আগে থেকেই। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দেশটির রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের চিকিৎসক রবার্ট রেডফ্লিড সতর্ক করেছেন, সামনে করোনা মহামারি আরও খারাপ আকার ধারণ করবে। এ সময় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

তবে আশার কথা হচ্ছে, আর সাত দিন পরই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বাইডেন। তিনি বিভেদের বদলে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার ওপর জোর দিচ্ছেন। শপথ অনুষ্ঠানের স্লোগান ঠিক করেছেন, ‘ইউনাইটেড আমেরিকা’। তবে ট্রাম্পের রেখে যাওয়া ক্ষত তিনি কতটা সারাতে পারবেন, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।