ট্রাম্পের বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে গোপনে ব্যবস্থা নেন শীর্ষ জেনারেল

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও রবার্ট কস্টা ‘পেরিল’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। বইটি ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে। বইটির অংশবিশেষ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার সময়ের নানা ঘটনা রয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

বব উডওয়ার্ড সাড়াজাগানো ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ ফাঁস করে খ্যাতি কুড়ান। অন্যদিকে রবার্ট কস্টা ওয়াশিংটন পোস্টের খ্যাতিমান সাংবাদিক।

প্রকাশিতব্য বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত কংগ্রেস ভবন বা ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প-সমর্থিত উগ্রবাদীদের রক্তক্ষয়ী হামলার দুই দিন পর তৎকালীন প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) প্রধান সামরিক উপদেষ্টা গোপনে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

বইয়ে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত ট্রাম্প যাতে কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসতে না পারেন, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে এককভাবে কিছু গোপন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

বইয়ের তথ্য অনুসারে, ট্রাম্প কোথাও কোনো বিপজ্জনক সামরিক হামলার আদেশ দিয়ে বসতে পারেন, কিংবা তিনি পারমাণবিক যুদ্ধও বাধিয়ে দিতে পারেন বলে তখন আশঙ্কা করছিলেন জেনারেল মার্ক মিলে। এই আশঙ্কা থেকেই তিনি উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নেন।

বব উডওয়ার্ড ও রবার্ট কস্টা তাঁদের বইয়ে লিখেছেন, ক্যাপিটল হিল হামলার ঘটনায় জেনারেল মিলে প্রচণ্ডভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গিয়ে ট্রাম্প তাঁর মানসিক ভারসাম্যের অবশিষ্ট অংশটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে মনে হচ্ছিল মিলের। এ অবস্থায় ট্রাম্প যেকোনো বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড করে বসতে পারেন বলে তিনি আশঙ্কা করছিলেন।

‘পেরিল’ বইয়ে বলা হয়, এমন আশঙ্কা থেকেই জেনারেল মিলে একটি বিশেষ ও বিরল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপসহ সামরিক পদক্ষেপের প্রক্রিয়া পর্যালোচনার জন্য গত ৮ জানুয়ারি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে তাঁর কার্যালয়ে একটি গোপন বৈঠক ডেকেছিলেন জেনারেল মিলে।

বইয়ের বিবরণ অনুযায়ী, পেন্টাগনের যুদ্ধকক্ষে ন্যাশনাল মিলিটারি কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন মিলে। তিনি তখন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের এই বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তাঁকে না জানিয়ে কারও কাছ থেকে তাঁরা যেন কোনো আদেশ গ্রহণ না করেন। আদেশদাতা যদি খোদ প্রেসিডেন্টও (ট্রাম্প) হন, সে ক্ষেত্রেও যেন তাঁকে (মিলে) জানানো হয়।

‘পেরিল’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, জেনারেল মিলে তাঁর সহকর্মী ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘আপনাদের যে যা-ই বলুক না কেন, আপনারা সঠিক পদ্ধতিটি অনুসরণ করবেন। আর আমি অবশ্যই সেই পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার একটা অংশ।’

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে
ছবি: রয়টার্স

বইয়ের বিবরণ অনুযায়ী, যুদ্ধকক্ষে ডাকা বৈঠকের একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিতি প্রত্যেক সেনা কর্মকর্তার কাছে যান জেনারেল মিলে। তিনি তাঁদের চোখে চোখ রেখে জানতে চান, তাঁর দেওয়া নির্দেশটি তাঁরা বুঝতে পেরেছেন কি না। তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে এ বিষয়ে মৌখিক নিশ্চয়তা আদায় করেন।

বইয়ে লেখকেরা লিখেছেন, ট্রাম্পের অসংলগ্ন আচরণ সম্পর্কে জেনারেল মিলে তাঁর নিজস্ব পর্যবেক্ষণের আলোকে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। ৬ জানুয়ারির ঘটনা থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি।

মিলে তাঁর উদ্বেগের জায়গা থেকে চীনের শীর্ষ সামরিক জেনারেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তখন যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় উচ্চ সতর্কতায় ছিল চীন।