ডাক বিভাগের গাফিলতি

গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে আমেরিকায় ড্রিমারদের বিক্ষোভ
গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে আমেরিকায় ড্রিমারদের বিক্ষোভ

অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে যখন বিতর্ক চলছে, যখন আমেরিকায় থাকা না-থাকার বিষয়টি দোদুল্যমান, তখন শুধু ডাক বিভাগের বিড়ম্বনায় পড়ে আবেদন বাতিল হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৯০০ ড্রিমারের।

গত সেপ্টেম্বরে ওবামা প্রশাসনের সময়ে গৃহীত ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারইভালস (ডিএসিএ) প্রকল্প বাতিল করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) নবায়নের জন্য প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে পুনঃ আবেদন চাওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া হয় এক মাস সময়। ড্রিমার খ্যাত প্রচুর অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসী আবেদনও করেন। কিন্তু ডাক বিভাগের গাফিলতির জন্য অনেক আবেদনই সময়মতো না পৌঁছানোয় বাতিল হয়ে যায়। শুধু বিলম্বের কারণে আবেদন বাতিল হওয়া ড্রিমারের সংখ্যা ১ হাজার ৯০০-এর বেশি। খোদ মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
ম্যানহাটনের ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটি ল সেন্টারের আইনজীবী মরিসিও নরোনা বলেন, এটা খুব বড় একটি সংখ্যা। শুধু অবহেলার কারণে এত বড় একটি অংশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করেই নিজের একজন মক্কেলের সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি তাঁর চাকরি হারিয়েছেন। নিজের বাড়ি হারিয়েছেন। এখন তিনি নিজের পরিবারের সঙ্গে বাস করছেন। আর সরকারি অভিবাসন এজেন্টের অভিযানের ভয়ে সব সময় সিঁটিয়ে থাকছেন। এ পরিস্থিতি শুধু তাঁর নয়, এই ১ হাজার ৯০০ তরুণেরই। কারণ, বিলম্বে পৌঁছানো আবেদন বিবেচনা করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিবাসন সংস্থার মুখপাত্র স্টিভ ব্লান্ডো নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘কাজের অনুমোদন নবায়নে পুনঃ আবেদনের জন্য ৩৩ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এই সময় কাজে লাগাতে পারেনি। এখন সংস্থার এ বিষয়ে কিছুই করার নেই।’ তিনি জানান, ডিএসিএ সুবিধাপ্রাপ্তদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্য আবেদন যেভাবে যে গতিতে প্রক্রিয়া করা হয়, এখানেও তেমনটাই ঘটবে। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সংস্থা (ইউএসসিআইএস) বিধিমতোই সব কাজ করবে। যেদিন অনুমোদন হবে, সেদিন থেকে দুই বছর মেয়াদ পাবেন সংশ্লিষ্টরা।
ডাক বিভাগের গাফিলতির জন্য পুনঃ আবেদনপত্র বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি গত নভেম্বরে প্রথম সামনে আনে নিউইয়র্ক টাইমস। সে সময়ও বাতিল করা আবেদনপত্রের বিষয়ে কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছিল ইউএসসিআইএস। তবে তখন বিলম্বের কারণে বাতিল হওয়া আবেদনের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি।
সমস্যাটির গোড়ায় রয়েছে এ-সম্পর্কিত ঘোষণায় ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া আবেদনের’ কথা উল্লেখের মধ্যে। অভিবাসন সম্পর্কিত অন্য আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণত ডাক বিভাগের দেওয়া ছাপে উল্লিখিত তারিখটি গুরুত্ব পায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পৌঁছানোর তারিখটিকে মূল ধরাতেই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বেঁধে দেওয়া সময়ের পরিধিও অনেক ছোট ছিল।
নিউইয়র্কের অভিবাসনবিষয়ক জোটের পরিচালক ক্যামিল ম্যাকলার বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা এক মাস সময়কে অনেক কম বলে আসছিলাম। বিষয়টি নিয়ে সব মহল থেকেই আপত্তি ছিল। এমনকি এত অল্প সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষেও যথাযথভাবে কাজ করা প্রায় অসম্ভব।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, সময় পরিসরই এখানে মূল কাজটি করেছে। ইউএসসিআইএসের তথ্যমতে, পুনঃ আবেদনের যোগ্য ড্রিমারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন পৌঁছেছে ১ লাখ ৩২ হাজারের।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত বড় একটি অংশের আবেদন না পৌঁছানোর দায় কিন্তু সরকারেরই। গত ১৮ অক্টোবর ৪ হাজার ড্রিমারের পক্ষ থেকে ব্রুকলিনে করা একটি মামলায় এমন দাবিই করা হয়েছে।
স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের ভাষ্যমতে, বর্তমানে গড়ে ১২২ জন করে ড্রিমার তাঁর সুরক্ষা হারাচ্ছেন। এর মধ্যে ডাক বিভাগের বিলম্বের কারণে বাদ পড়া ড্রিমাররা অন্তর্ভুক্ত নন। এই গাফিলতির প্রভাব এখনো দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। সামনের মাস ও বছরে এর প্রভাব ক্রমে দৃশ্যমান হতে শুরু করবে।