তাঁরা বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন না যে কারণে

এরদোয়ান, পুতিন ও সি চিন পিং
ছবি : রয়টার্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে জেতা জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে বিশ্বজুড়ে নেতাদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। তবে ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রত্যাশিত বিজয়ীদের স্বীকৃতি জানানোর দলে সবাই নেই। সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বাইডেনকে শুভেচ্ছা না জানানোর এ দলে রয়েছেন বিশ্বের শক্তিশালী ব্যক্তিরা, গত চার বছরে যাঁরা ট্রাম্পের বিভিন্ন সময় প্রশংসা কুড়িয়েছেন। গত চার বছরে বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রতি ট্রাম্পের সখ্যর বিষয়টি ছিল লক্ষণীয়। মার্কিন নির্বাচনের পর নীরব থেকে এই নেতারা নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করবেন, সে সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: রয়টার্স

২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল ক্রেমলিন। কিন্তু বাইডেনের প্রতি এখনো শুভেচ্ছা জানাননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

গতকাল সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, নির্বাচনের ফল নিয়ে মন্তব্য করার আগে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের ফলের জন্য অপেক্ষা করবে মস্কো। প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে ট্রাম্প একাধিকবার পুতিনের প্রশংসা করেছেন। এর আগের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য ছিল বলেও গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু এবার বাইডেনের সঙ্গে সে সম্পর্ক প্রত্যাশা করা যায় না। বাইডেন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে।

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কারিন ভন হিপ্পেল বলেন, বাইডেন সহযোগী ও মিত্রদের সঙ্গে কাজ করবে। রাশিয়া যত দূর এগিয়েছে, তা ঠেকাতে চেষ্টা করবে। বিদেশে রাশিয়ান নাগরিক হত্যা, সিরিয়া, ক্রিমেরায় তাদের কর্মকাণ্ড, সার্বিয়ায় প্রতিপক্ষকে হত্যাচেষ্টার মতো কাজগুলোয় বাধা দেবে।

পুতিন ভালো করেই জানেন, রাশিয়ার প্রচেষ্টা ঠেকাতে উদ্যোগী হবে বাইডেন সরকার। রাশিয়ার জন্য নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবেন তিনি। গত অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া হচ্ছে মার্কিন নাগরিকদের জন্য মূল হুমকি।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং
ছবি : রয়টার্স

২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় চীনের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করলেও নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে দেরি করেনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টেকসই সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, মানবাধিকার নিয়ে সম্পর্ক ভালো যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে বিস্তারবাদের অভিযোগ তুলেছে। করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী করেছে। এ প্রেক্ষাপট থাকলেও বাইডেনকে দ্রুত শুভেচ্ছা জানাননি সি।

গতকাল চীন সরকার বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানানোসংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবস্থা নেবে চীন।

বেইজিং কেন তড়িঘড়ি শুভেচ্ছা জানাচ্ছে না, তার কারণ বের করা কঠিন কিছু নয়। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তার চেয়ে আরও কঠোর হতে নিজের দক্ষতার বিষয়ে গর্ব করেছিলেন বাইডেন।

হিপ্পেল বলেছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য নয় বেইজিং। বিশেষত, এখন তারা অপ্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কম মনে করবে। ট্রাম্পের সময়ের মতো কিছুটা ধারাবাহিকতা বেইজিংয়ের উপকারেও আসতে পারে। চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও বেশ কিছু বিষয়ে চীনের নীতিতে কাজ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বা উত্তর কোরিয়ার মতো বিষয়।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
ছবি: রয়টার্স

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও ট্রাম্পের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন। এরদোয়ানের সব কাজেই সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু বাইডেন হয়তো তা করবেন না।

বাইডেনকে তাই এখনো শুভেচ্ছা জানাননি এরদোয়ান। গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসকে বাইডেন বলেছিলেন, তিনি তুরস্কের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে ভিন্ন পথ অবলম্বন করবেন। এরদোয়ানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো চোখে দেখেন না বাইডেন। তিনি এর আগে এ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো
ছবি: রয়টার্স

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো ‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ট্রাম্পের মতোই করোনাভাইরাসকে পাত্তা দেননি। বিশ্বের সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর একটি ব্রাজিল।

কিন্তু ট্রাম্পের হেরে যাওয়ায় বোলসোনারো একজন বন্ধু হারাবেন। তাঁকে এমন এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হতে হবে, যিনি মানবাধিকার ও পরিবেশের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বোলসোনারোর জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এর আগে আমাজন রক্ষায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু বোলসোনরো তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর।
ছবি: রয়টার্স

কয়েক বছর ধরে ট্রাম্প মেক্সিকোকে নিয়ে নানা বর্ণবাদী মন্তব্য করলেও দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন ট্রাম্প। গত জুলাই মাসে তাঁরা বাণিজ্য চুক্তিও করেছিলেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর সতর্ক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল পর্যন্ত দেখবেন তিনি। বাইডেনকে তাই আগাম শুভেচ্ছা জানাননি।

গত শনিবার এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সব আইনি বিষয়টি সমাধান হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমরা বেপরোয়া হতে চাই না। আমরা হালকাভাবে নিতে চাই না। আমরা জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চাই।’