তালেবানকে শিগগিরই স্বীকৃতি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

তালেবান সরকারের প্রধান করা হয়েছে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে
ফাইল ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই স্বীকৃতি দেবে না বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন মনোভাবই প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সময়ের ঘটনাপ্রবাহে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে বলা হয়েছে, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার যেকোনো উদ্যোগকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা হবে।

আফগানিস্তানে এর মধ্যেই তালেবান সরকার গঠন করা হয়েছে। এ সরকারে চরম রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা, মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা লোকজনসহ মার্কিন কর্তৃপক্ষের জঙ্গি তালিকায় থাকা ব্যক্তিরাও রয়েছেন। মার্কিন সিনেটের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সদস্য সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, আফগান সরকারে প্রতারক ও কসাইদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম পলিটিকো এক প্রতিবেদনে বলেছে, তালেবান সরকারে মার্কিন জঙ্গি তালিকায় থাকা লোকজনকে রাখা হয়েছে।

তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তারা বজায় রাখতে ইচ্ছুক। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার পর সেখানকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে।

তালেবান সরকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র শক্তির স্বীকৃতি জরুরি হয়ে উঠেছে। এখনো আফগানিস্তানের সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার কাজ করছে তালেবান। এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত হয়ে থাকা কয়েক বিলিয়ন ডলার অবমুক্ত হওয়ার জন্য সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তালেবানদের জন্য খুবই জরুরি। জাতিসংঘে আফগানিস্তানের আসন নিশ্চিত করা এবং আফগান সরকারের নেতাদের বাইরের বিশ্বে ভ্রমণের বেলায় কূটনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্যও স্বীকৃতি অপরিহার্য বলে পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার তালেবানকে সরাসরি স্বীকৃতি না দিলেও একধরনের পরোক্ষ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আপাতত সম্পর্ক রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে এখন চলমান সমস্যা সামাল দেওয়ার বিষয়টিই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন নাগরিক, গ্রিন কার্ডধারীসহ মার্কিন সমর্থক আফগানদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা নিশ্চিত করা নিয়ে প্রশাসনকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। পাশাপাশি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে আনার সময়টিতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল অবস্থার রাজনৈতিক দায় থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

যে দেশই আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে, তারাই জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতাদের এবং বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার কাজকে উৎসাহিত করবে।
লিন্ডসে গ্রাহাম, রিপাবলিকান সিনেটর

আফগানিস্তানে সরকার গঠনের আগে তালেবানদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। নারী ও শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সদ্য গঠিত তালেবান সরকার এবং তাদের তৎপরতায় এমন কোনো লক্ষণই এখন আর দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তালেবান কী বলেছে তা মুখ্য নয়। তালেবান কী করছে তার ওপরই নির্ভর করছে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি।
কোনো দেশকে স্বীকৃতি দেওয়া মূলত প্রশাসনিক বিষয় হলেও তালেবান সরকারকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়বে।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম স্পষ্ট বলেছেন, তাঁরা তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার যেকোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করবেন। তালেবানকে একটি জঙ্গি দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে দেশই আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে, তারাই জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতাদের এবং বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার কাজকে উৎসাহিত করবে।

তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তারা বজায় রাখতে ইচ্ছুক। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার পর সেখানকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে। তালেবান সরকার গঠন করলেও সাহায্যনির্ভর আফগান অর্থনীতি এখন চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। আফগান জনগণের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সাহায্য প্রদানে জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে।

তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের দখল চলে যাওয়ার পরও রাশিয়া, চীন, ইরানসহ কিছু দেশ কাবুল থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নেয়নি। এখনো স্বীকৃতি না দিলেও দেশগুলো কাবুলে অবস্থান করেই কূটনৈতিক কাজকর্ম পরিচালনা করছে। অপর দিকে কাবুল থেকে মার্কিন দূতাবাস কাতারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই আফগান পরিস্থিতি নিয়ে অবশিষ্ট মার্কিন কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে। পলিটিকো তাদের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এভাবেই অন্য কোনো দেশ থেকে আফগানিস্তান পরিস্থিতি দেখভাল করবে দীর্ঘদিন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মার্কিন মিত্র শক্তি দেখার চেষ্টা করছে তালেবান কতটা শক্তভাবে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ জন্য দীর্ঘস্থায়ী পর্যবেক্ষণেরও প্রয়োজন হতে পারে। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে তালেবান বহুবিভক্ত আফগান সমাজকে একীভূত করে ক্ষমতায় পোক্তভাবে থাকতে পারবে কি না, এর পর্যবেক্ষণের ওপরও নির্ভর করছে তালেবান সরকারকে আমেরিকার স্বীকৃতি প্রদানের প্রক্রিয়াটি।