দক্ষদের জন্য গ্রিনকার্ডের বরাদ্দ বাড়বে

২০১৮ সালটি অভিবাসী স্বপ্নবিলাসীদের জন্য সম্ভাবনার একটি বছর হিসেবে দেখা দিতে পারে বলেই মনে করছেন অভিবাসন আইনজীবী ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাটর্নি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দীকি নাজমুল আলম বলছিলেন, এই বছরটি সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে, শিক্ষিত এবং দক্ষ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের মধ্যেই পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে, বিজনেস বা ইনভেস্টর ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ড প্রদান দ্বিগুণ করতে চাইছে। তাতে ২০১৮ সালটি অভিবাসনে বাংলাদেশিসহ অন্যদের জন্য সম্ভাবনার একটি বছর হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।

শিশুকালে কাগজপত্রহীন পিতা- মাতার হাত ধরে এই দেশে আসা শিক্ষার্থীদের, যাদের ডিপোর্ট করে দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাদের জন্যও সুখবর আসছে। কেননা, ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুট অ্যারাইভাল বা ডাকা নামের যে প্রকল্পটি বন্ধ করতে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটার বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা হচ্ছে বলে আভাস মিলেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথায়। তবে সেই ডাকাকে, তিনি দুটি দর-কষাকষির পর্যায়ে নিতে চান বলেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা ডাকা নিয়ে ভাবতে চাই কেননা, অনেক রিপাবলিকান সিনেটর ডাকা চালু রাখতে চান। তবে আমাদের সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের টাকা লাগবে’, সে বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন লাগবে বলেই প্রকারান্তরে জানাচ্ছিলেন তিনি। গত ২৯ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ফ্লোরিডায় অবকাশ যাপনকালেই এসব কথা বলেন সাংবাদিকদের।

আর ২ জানুয়ারি তিনি ফ্লোরিডায় ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থল ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার দিনে একাধিক বিষয়ে টুইট করে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন, তার একটি হলো এই ডাকা প্রকল্প নিয়ে। প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী যাদের ‘ড্রিমার বা স্বপ্নতারুণ্য’ হিসেবেই আখ্যা দেয় আমেরিকার গণমাধ্যম, সেই ড্রিমারদের জন্য কিছুটা করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা শুধুই ডাকা নিয়ে রাজনীতি করেছে, কাজের কাজ কিছুই করেনি। আমরা তাদের জন্য কাজ করতে চাই যেন তারা রিপালিকানদের আপন মনে করতে পারে।’
তার এই টুইট বার্তা ধরেই এখন বিশ্লেষণ চলছে যে এটিকে একটি দর-কষাকষির মাধ্যম হিসেবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন চাইবেন তিনি সিনেটে। কেননা, ডাকা অর্থাৎ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সন্তান হিসেবে যারা এই দেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছিল তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে ডেমোক্র্যাট দলের একটি দুর্বলতা আছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার ব্যক্তিগত ওয়াদা আর ডেমোক্র্যাট রাজনীতির মূল্যবোধ জড়িয়ে আছে এটার সঙ্গে। সে কারণে এটা চালু রাখার বিনিময়ে দুটি বিষয়ের সহযোগিতা চান তিনি সিনেটে ডেমোক্র্যাট ভোটাভুটিতে। একটি হলো, সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থছাড়, অন্যটি হলো পারিবারিক অভিবাসন বন্ধে কঠোর আইন।
‘পারিবারিক অভিবাসন অর্থাৎ চেইন ইমিগ্রেশন বন্ধ করলে, তাতে খুব বেশি বাদ সাধবে না ডেমোক্র্যাট দল এটা মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। আবার ডিভি লটারি পদ্ধতি যেটাতে এখনো মোট গ্রিনকার্ডের অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ আছে সেটি বন্ধ করলেও অতটা আপত্তি নেই ডেমোক্র্যাট দলের। সুতরাং এই দুই ক্ষেত্রের অভিবাসন বন্ধ করলে বছরে এখন যে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ গ্রিনকার্ড প্রদান করা হচ্ছে, সেই কোটার সাশ্রয় হবে। সে ক্ষেত্রে এই বিশাল পরিমাণ গ্রিনকার্ড কোটার বড় অংশটিই চলে যাবে দক্ষ, শিক্ষিত বিজনেস ক্যাটাগরির গ্রিনকার্ড আবেদনের ক্ষেত্রে। এর বাইরে বিনিয়োগকারীদের জন্যও খুলতে পারে নতুন দরজা। জানালেন অ্যাটর্নি নাজমুল আলম।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ করে গ্রিনকার্ড প্রদান করে, যার মধ্যে পারিবারিক অভিবাসন খাতে যায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। ৫ ভাগ ডিভি লটারিতে, আর দক্ষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে যাচ্ছে মাত্র ২ ভাগ। এই ৬৫ ভাগ আভিবাসন যদি বন্ধ হয়ে যায় বা সীমিত হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে বলিতে পড়বেন, বেশ কয়েক লক্ষ বাংলাদেশি যাঁরা ডিভি লটারিসহ অন্যান্য উপায়ে এই দেশে এসেছিলেন এবং স্বপ্ন দেখছিলেন একদিন তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা আসবেন, সুখী পরিবারের রেশ পাবেন, তাঁদের জীবনযাপন উন্নত হবে। এমন হাজার হাজার মানুষ যাঁদের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো। তবে এর বাইরে সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, এত দিন যাঁরা সাইডলাইনে ছিলেন তাঁদের জন্য। ওই যে ২ শতাংশ বেড়ে ২০ শতাংশ হতে পারে।
২ শতাংশ অর্থাৎ যাঁরা আইটি অথবা অন্য খাতে দক্ষ হিসেবে আছেন কিন্তু আমেরিকায় পাড়ি দিতে গিয়ে নানা রকম জটিলতা আর ভোগান্তি ছিল তাদের ক্ষেত্রে সুদিন আসতে পারে। কেননা, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, যে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ব্যক্তিদের নেওয়ার ক্ষেত্রে পয়েন্ট সিন্টেম চালু করবেন তিনি কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো। তবে কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে বহু গুণে বেশি মানুষ এখানে ওই প্রকল্পে আসতে পারবেন, কেননা, এই দেশটি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভিবাসন লাগবেই। নতুন মানুষ লাগবেই এই দেশে। সেটাই বড় বাস্তবাতা। সুতরাং চাইলেই অভিবাসন বন্ধ হয়ে যাবে না, তবে আকায়েদ আর সাইফুল্লাহ যিনি ডিভি লটারিতে এসেছিলেন—এই দুজনের কারণে ডিভি লটারি আর পারিবারিক অভিবাসন দুটিতেই ছেদ বসাতে চান ট্রাম্প। তাতে যেই সংকট তৈরি হবে, সেটা হয়তো পুষিয়ে নিতে পারবেন না যাঁরা তাঁদের স্বজনদের আনার জন্য আবেদন করে রেখেছেন। তবে দুয়ার খুলতে পারে অন্যদিকে, সেটাই হোক সম্ভাবনা। সেটার প্রস্তুতি নিতে হবে সব বাংলাদেশিকে।