দায়িত্ববান হওয়ার উপায়

জীবনে বড় হওয়ার জন্য অনেকেই দায়িত্ববান হতে চান। কারণ দায়িত্ববান মানুষের কদর জীবনের সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য। কিন্তু, কতজন মানুষ দায়িত্ববান হতে পারেন? আপনার আশপাশে পরিচিত মহলে দু-একজন দায়িত্ববান মানুষকে খুঁজেই দেখুন। বুঝতে পারবেন তাঁদের সংখ্যা কত বিরল। কিন্তু আমরা কীভাবে দায়িত্ববান হতে পারি? চলুন, উদাহরণসহ দেখে নিই দায়িত্ববান হওয়ার কিছু উপায়।
দোষারোপ বন্ধ করা
দায়িত্ববান মানুষ হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে দোষারোপ বন্ধ করা। মনে রাখবেন, যাঁরা দোষারোপ করেন তাঁরা কখনোই দায়িত্ববান হতে পারেন না এবং দায়িত্ববান মানুষেরা দোষারোপ করার সময়ই পান না। উদাহরণ, সারা বাংলাদেশে খুব কম সময়ে জনপ্রিয় ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমনের অনেকগুলো সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান থাকার পরও একটা বিশাল শ্রেণির মানুষ তাঁকে দোষারোপ করেন। তাঁরা বলেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন, তুমি এটা করেছ, সেটা করেছ, ওটা (যেমন-সুন্দরবন, চামড়া শিল্প) কি তোমার চোখে পড়ে না? তোমার কি চোখ নাই?’ একটু চিন্তা করে দেখুন, সুমনের সেটা চোখে, সেটা পড়ে কি না—তা নিয়ে ভাবার ও বলার আগে দেখুন আপনার চোখে সেটা পড়ে কি না। যদি আপনার চোখে পড়ে, তবে আপনি একটা কিছু করুন, দায়িত্ব নিন। তাঁকে দোষারোপ করছেন কেন? এটা কি শুধু তাঁর একার দায়িত্ব? তিনি কি ওই কাজের জন্য আপনার বেতনে রাখা গোলাম? তবে, হ্যাঁ, আপনি যদি মনে করেন, এটা তিনি করলে ভালো হবে, তবে তাঁকে অনুরোধ করতে পারেন।
মানবিক হওয়া
দায়িত্ববান মানুষ হতে হলে আপনাকে যে খুবই যোগ্য হতে হবে, উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে, তা কিন্তু নয়। শুধু আপনার মধ্যে থাকতে হবে ন্যূনতম মানবতা। উদাহরণ, ফাটা পাইপ থেকে পানি যাতে ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট না হয়, সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা নাইম কোনো উচ্চশিক্ষিত বালক নয়। কিন্তু তার আছে একটি সুন্দর মন ও মানুষকে পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার ন্যূনতম মানবতাবোধ।
নিজে কাজ করা
দায়িত্ববান মানুষেরা অন্যকে দিয়ে নয়, নিজে কাজ করতে চান। উদাহরণ, আমাজন পুড়ে যাচ্ছে, সুন্দরবন শেষ হয়ে যাচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে—এগুলো নিয়ে কাউকে দোষারোপ না করে নিজে কী করা যায় তা নিয়ে ভাবছেন সিলেটের সৈয়দ মাহমুদুল হক। তাঁর নিজ ইচ্ছা ও উদ্যোগে এক লাখ বৃক্ষ রোপণের কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় গাছের চারা রোপণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি কি দায়িত্ববান নন?
প্রতিবন্ধকতাকে ছোট করে দেখা
দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হলে নানা বাধাবিপত্তি আসবেই। দায়িত্ববান মানুষেরা সেসব সমস্যাকে খুবই ছোট করে দেখেন। তাঁরা নিজ দায়িত্ব থেকে বিরত না থেকে সেসব সমস্যার সমাধান খোঁজেন। উদাহরণ, ঈদ উপলক্ষে আমাদের পথ-শিশুদের পোশাক বিতরণ কার্যক্রমের দাতা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে পোশাক বিতরণ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। কিন্তু, বিনা মূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচির চারজন দাতা মিলে সেই প্রতিবন্ধকতাকে ছোট করে দেখেন এবং বই কেনার টাকা থেকে প্রায় ১০০ শিশুর পোশাকের টাকা দেন।
নিজ জীবনের অর্থ খোঁজা
জীবনের অর্থ নিয়ে অনেক কবি সাহিত্যিক ও গবেষক বিভিন্ন জায়গায় দ্বিমত পোষণ করলেও তাঁরা যে বিষয়ে সবাই একমত, তা হলো অন্যের উপকার করা। বছরের পর বছর গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে কানাডীয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অধ্যাপক জর্ডান বি পিটারসন বলেন, ‘জীবনের অর্থই হলো দায়িত্ব নেওয়া, দায়িত্ববান হওয়া।’ উদাহরণ, তাইতো অনেক মানুষ পুরো জীবন কাটিয়েও জীবনের শেষ বয়সে হলেও স্কুল-কলেজ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে দায়িত্ববান হয়ে নিজ জীবনের একটা অর্থ খোঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে, দায়িত্ববান হওয়া নিয়ে কথা বললে অনেকেই বলেন দুর্নীতি, দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা, মানসিক অশান্তি আর ব্যর্থতায় যেখানে মরে যাওয়ার ইচ্ছা করে, সেখানে দায়িত্ববান হয়ে কী হবে? আমি তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনি কি সত্যিই মরতে চান? তাহলে দায়িত্ববান হয়ে বাঁচার চেষ্টা করেই দেখুন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের চাপ আর করুণ বাস্তবতা আপনাকে ইচ্ছার আগেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। আর সে জন্যই ভালো মানুষেরা, দায়িত্ববানেরা আগে মরেন। কারণ তাঁরা মরতে চান না, তাঁরা বাঁচতে চান। শুধু স্বার্থপরের মতো নিজে একা বাঁচতে নয়, তাঁরা অন্যকেও বাঁচাতে চান; দায়িত্ববান মানুষ হতে চান।