নানা নাটকের পর রিলিফ প্যাকেজ বিলে ট্রাম্পের সই

ফাইল ছবিএএফপি

নানা নাটকীয়তার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের করোনাভাইরাসের রিলিফ ও স্পেন্ডিং প্যাকেজ বিলে সই করেছেন। তিনি করোনা রিলিফ আইন অনুমোদন করেছেন।


দ্বিতীয় দফা নাগরিক প্রণোদনা হিসেবে মার্কিনদের তাদের আয়ের সীমা অনুযায়ী জনপ্রতি ৬০০ ডলার করে নগদ দেওয়া হবে। কর্মজীবীদের মধ্যে যারা কর্মহীন, তাদের বেকার ভাতার মেয়াদ বাড়ানো হবে। ১১ সপ্তাহের জন্য বেকার ভাতার সঙ্গে সপ্তাহে অতিরিক্ত ৩০০ ডলার করে দেওয়া হবে। নতুন করোনা রিলিফ বিলে ভাড়াটে, বাড়ির মালিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সহযোগিতা রয়েছে।


আইনপ্রণেতাদের চাপের মুখে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ট্রাম্প করোনা রিলিফ বিল নিয়ে সুসংবাদ আসছে বলে টুইট করেন। সিএনএন প্রথমে জানায়, প্রেসিডেন্টের সই করার জন্য আইনপ্রস্তাবটি টেবিলে রাখা হয়। মার এ লাগো অবকাশ কেন্দ্রে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের জন্য চেয়ার–টেবিল সাজানো হয়। স্বাক্ষর করার জন্য পাঁচ হাজারের বেশি পৃষ্ঠার করোনা রিলিফ বিলের পাশে ট্রাম্পের সব সময় ব্যবহার করা কলমও প্রস্তুত রাখা হয়।

সন্ধ্যা সাতটা বাজার কিছু আগে প্রেসিডেন্টের কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প তাঁর মত বদল করেছেন। তিনি বিলে সই করবেন, নাকি আগামীকাল সোমবার কংগ্রেসের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করবেন, তা জানানো হয়নি। এ কারণে আবারও সব মহলে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। আধা ঘণ্টা পরে বার্তা সংস্থা সিএনএনসহ অন্যরা জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেস থেকে পাস হওয়া বিলে সই করেছেন।


ট্রাম্প এক সপ্তাহ ধরে প্রত্যেককে দুই হাজার ডলার করে প্রণোদনা দিতে ইচ্ছুক বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, কোভিড মহামারির জন্য চীন দায়ী। জনগণ নয়। গতকাল রাতে কংগ্রেসের সমঝোতা প্রণোদনায় অনুমোদন দেওয়ার পর তাঁর নিজের প্রস্তাব থেকে তিনি সরে এসেছেন কি না, এখনো কিছু জানা যায়নি।

রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর প্যাট টমি বলেছেন, ট্রাম্পকে আমেরিকার মানুষ দুর্দশা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে মনে রাখবে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প জনপ্রতি সমঝোতার ৬০০ ডলারের আইনপ্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পরও এ নিয়ে কথা বলতে পারেন।

কংগ্রেসে উভয় দল জনপ্রতি ৬০০ ডলারের প্রণোদনা দেওয়ার সমঝোতা করেছে। ট্রাম্প বলছেন, তিনি জনপ্রতি দুই হাজার ডলার করে দেবেন। স্বামী–স্ত্রীর ক্ষেত্রে উভয়ে মিলে চার হাজার এবং পরিবারের অন্যদেরও নগদ প্রণোদনা প্রদানের পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন ট্রাম্প।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ কর্মজীবীর বেকার ভাতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ভাড়াটেদের উচ্ছেদ না করার নির্দেশের মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বরে। ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু রাখার জন্য জরুরি সাহায্যের বিভিন্ন কর্মসূচিও থমকে দাঁড়িয়েছে।

ট্রাম্পকে আমেরিকার মানুষ দুর্দশা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে মনে রাখবে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প জনপ্রতি সমঝোতার ৬০০ ডলারের আইনপ্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পরও এ নিয়ে কথা বলতে পারেন।
প্যাট টমি, রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর

এ অবস্থায় নির্বাচনে কারচুপির ভুয়া দাবির পক্ষে দলের আইনপ্রণেতাদের দাঁড়াতে চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। গতকাল টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে দেখা হবে। এ নিয়ে আরও সংবাদ আসছে বলে ট্রাম্প তাঁর বার্তায় উল্লেখ করেন।


ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রবীণ সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণকে অবিশ্বাসযোগ্য নিষ্ঠুরতা বলেছেন। এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিনেটর স্যান্ডার্স অবিলম্বে সমঝোতার আইনপ্রস্তাব অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আসছে সপ্তাহে আরেক দফা আইনপ্রস্তাব গ্রহণ করে নাগরিকদের বর্ধিত নগদ অর্থ দেওয়ার উদ্যোগ আইনপ্রণেতারা নিতে পারেন।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আগেই জানিয়েছেন, তিনি জরুরি ভিত্তিতে জনপ্রতি দুই হাজার ডলারের সুবিধা বৃদ্ধি করে সোমবারই নতুন আরেকটি আইনপ্রস্তাব কংগ্রেসে নিয়ে আসছেন। সিনেট রিপাবলিকানরা এর মধ্যেই বলেছেন, তাঁরা এমন বর্ধিত নাগরিক প্রণোদনার প্রস্তাব অনুমোদন করবেন না। স্পিকার পেলোসি নতুন আইনপ্রস্তাব উপস্থাপন করলে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে বিভক্তি প্রকাশ্য হয়ে উঠবে। কেউ ভোট দেবেন পক্ষে। কেউ ভোট দেবেন বিপক্ষে।


রিপাবলিকান পার্টির আরেক সিনেটর অ্যাডাম কিনজিঙ্গার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমঝোতা চলাকালে কোনো উদ্যোগ নেননি। তাঁর প্রশাসনের লোকজন দিয়ে নাগরিকদের দুই হাজার ডলার নগদ প্রণোদনা বা অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রদান করেননি। তিনি বলেন, এখন নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়ার বেদনা নিয়ে ক্ষমতা দেখানোর প্রয়াস নিয়েছেন ট্রাম্প।


গত মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই কোটি মানুষ শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। সামনের মাসগুলোয় করোনা পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবীরা।


এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার এ লাগো অবকাশ কেন্দ্রে অবকাশ যাপন করছেন। তাঁর টেবিলে নাগরিক প্রণোদনার আইন স্বাক্ষরের অপেক্ষায় ছিল।