নিউইয়র্কে বইমেলা ও বাংলাদেশ উৎসব শুরু
মুক্তধারা আয়োজিত নিউইয়র্কে চার দিনব্যাপী ‘বইমেলা ও বাংলাদেশ উৎসব’ শুরু হয়েছে ১৪ জুন। ‘মননে বই জীবনে বই’—এই স্লোগান সামনে রেখে এবার বসেছে মুক্তধারা বইমেলার ২৮তম আসর।
গ্রীষ্মের সোনারোদ বিকেলে ডাইভার্সিটি প্লাজার উন্মুক্ত স্থানটি যেন এদিন উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা সগৌরবে আমেরিকার তারকাখচিত পতাকার পাশে বাতাসে আন্দোলিত হচ্ছিল। ফাহিম রেজা নুর ও সাবিনা হাই ঊর্মির সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা বাংলাভাষী লেখক, কবি, সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক ও প্রকাশক। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ২০টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা এই বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। পিএস ৬৯, ৭৭-০২ ৩৭ অ্যাভিনিউ, জ্যাকসন হাইটসে এই মেলা চলবে ১৫ ও ১৬ জুন। শেষ দিন বইমেলা জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় কোনো প্রবেশমূল্য নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, লেখক সেলিনা হোসেন, লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, বইমেলার আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, খবর পাঠক রোকেয়া হায়দার, মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুরুন নবী, জার্মানি থেকে আসা লেখক নাজমুন নেসা পিয়ারী।
প্রকাশকদের মধ্যে ছিলেন প্রথমা প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক কবি জাফর আহমেদ রাশেদ, অনন্যা প্রকাশনীর মনিরুল হক, অনুপম প্রকাশনীর মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, প্রীতম প্রকাশের পপি চৌধুরী, অন্বয় প্রকাশের হূমায়ুন কবীর ঢালী, নালন্দা প্রকাশনীর কর্ণধার রেদোয়ান জুয়েল, ইত্যাদি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদীন জুয়েল প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সবাই মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। ব্যানার ও পতাকাসজ্জিত এই শোভাযাত্রা পিএস ৬৯ স্কুলের সামনে শেষ হয়। সেখানে বেলুন উড়িয়ে বইমেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়।
মেলায় অন্যান্য প্রকাশনীর পাশাপাশি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকারও পৃথক স্টল রয়েছে। ইশতিয়াক রূপু, আবদুস শহীদ, রওশন হক, এইচ বি রিতা ও মাহবুব রহমানের ব্যবস্থাপনায় স্টলে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকায় নিয়মিত লেখেন, এমন সব লেখকের বই রয়েছে। প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক মেলায় পৃথকভাবে স্টলের উদ্বোধন করেন।
এবারের মেলায় চিকিৎসক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়ালেদ চৌধুরী এবং লেখক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরকে সম্মাননা জানানো হবে। মেলায় সংগীত পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
বইমেলার আহ্বায়ক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চার দিনব্যাপী মেলায় স্বরচিত কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, সাহিত্য আলোচনা, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ লেখক-প্রকাশ-পাঠকদের নিয়ে নানা আয়োজন থাকবে। সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর মেয়ে তনিমা হাদী ছাড়াও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা গান গাইবেন। থাকবে শাড়ি ও গয়নার স্টল। সবকিছু দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি বইকেন্দ্রিক প্রবাসী বাঙালিদের একটি উৎসবের আয়োজন করতে।’
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা চাই, বাংলা বইয়ের প্রসার হোক বিশ্বব্যাপী। মানুষের মননে ও জীবনে ভালো বইয়ের প্রভাব পড়ুক। আমরা বছর ধরে সবাই মিলে চেষ্টা করছি ভালো প্রকাশনা সংস্থাগুলো যেন এই বইমেলায় অংশ নেয়।’
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বইমেলা উপলক্ষে নিউইয়র্কে যে জাগরণ, তা দেখে আমি আপ্লুত। ২৮ বছরে আজকের এ পর্যায়ে এসেও মনে হচ্ছে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমাদের আরও অনেক করণীয় রয়েছে।’
বইমেলায় সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও জেএফবি সাহিত্য পুরস্কার এবং কথাপ্রকাশ-মুক্তধারা প্রকাশক পুরস্কার দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরের বসবাসরত বাংলা ভাষার লেখকদের জন্য বইমেলা থেকে ‘শহীদ কাদরী পুরস্কার’ দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।