নির্বাচনে কারচুপি চেষ্টার অভিযোগে হিলারির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মামলা

হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি চেষ্টার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনসহ কয়েকজন ডেমোক্র্যাটের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের ছয় বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ মামলা করেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, তাঁর নির্বাচনী প্রচারণাকে রাশিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে এই কারচুপির চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। খবর রয়টার্সের

মামলায় ট্রাম্পের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। হিলারিকে হারিয়ে হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালনের চার বছরে বারবার এসব অভিযোগ করেছিলেন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট। ব্যাপক কারচুপির ফলে ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরেছেন বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প

ফ্লোরিডার ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা ১০৮ পৃষ্ঠার এজাহারে তিনি বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড জুনিয়র ট্রাম্প বিদেশি শত্রুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে যোগসাজশ করছেন—এমন মিথ্যা কাহিনি ছড়াতে বিবাদীরা সবাই মিলে বিদ্বেষপূর্ণ ষড়যন্ত্র করেছিলেন।’ এজাহারে সুবিধা আদায়ে সংঘবদ্ধ অপরাধ (র‍্যাকেটিয়ারিং) এবং ক্ষতিকর মিথ্যা ছড়াতে ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ আনা হয়।

বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও হিলারির একজন প্রতিনিধি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করনেনি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

মামলার আবেদনে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও চাওয়া হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতির বোঝা বহনে তিনি বাধ্য হয়েছেন, আদালতে যার পরিমাণ নির্ধারিত হবে। তবে সেটা ২৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে আরও যোগ হতে থাকবে নিরাপত্তা ব্যয় ও আইনি ফিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ।’

র‍্যাকেটিয়ারিং মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী জেফ গ্রেল বলেন, র‍্যাকেটিয়ারিং অভিযোগ আনার ক্ষেত্রে ট্রাম্প হয়তো অনেক বেশি দেরি করে ফেলেছেন। কারণ, এ দাবির ক্ষেত্রে চার বছরের একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। তবে এখানে সাধারণত একটি বড় বিতর্ক আছে কখন এই চার বছর সময় শুরু হবে।

এই আইনজীবী বলেন, সরকারি সংস্থাকে দায়মুক্তি দেওয়া ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্তিমিত করাসহ আরও বেশি কিছু যুক্তিও দিতে পারেন বিবাদীরা, যা মামলার অভিযোগের বাইরে রাখা হয়নি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সাধারণত এসব যুক্তির সমাধান দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের মামলায় বিবাদীদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার স্টিলের নামও রয়েছে। তার লেখা একটি নথি ২০১৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের আগে এফবিআই ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো হয়। অপ্রমাণিত দাবি হিসেবে এতে বলা হয়, রাশিয়ার কাছে ট্রাম্প ও তাঁর কিছু রিপাবলিকান প্রচার উপদেষ্টার বিব্রতর তথ্য রয়েছে এবং হিলারিকে হারাতে মস্কো নেপথ্যে কাজ করছে।

২০২০ সালে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সিনেট কমিটি ৯৬৬ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ে সাহায্য করতে রাশিয়া রিপাবলিকান রাজনীতিক পল মেনাফোর্ট এবং উইকিলিকস ওয়েবসাইটকে ব্যবহার করেছিল। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় পাঁচ মাস কাজ করেছিলেন মেনাফোর্ট।

নির্বাচনে কথিত রুশ হস্তক্ষেপের ঘটনায় বিশেষ কৌশলী রবার্ট মুয়েলারের নেতৃত্বে দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ২০১৯ সালে সামগ্রিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন মুয়েলার। এতে রুশ সরকার এবং ট্রাম্পের প্রচারণার মধ্যে বহু যোগসূত্রের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। তবে কোনো ট্রাম্প সহযোগীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়নি।

প্রতিবেদনে মুয়েলার বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তারা সুবিধা পাবে বলে রাশিয়া উপলব্ধি করতে পেরেছিল এবং সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করেছিল। আর রাশিয়ার প্রচেষ্টায় চুরি হওয়া ও প্রকাশিত তথ্য থেকে নির্বাচনী সুবিধা পাবেন বলে মনে করেছিলেন ট্রাম্পের প্রচারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।