নির্বিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার দিনে যুক্তরাষ্ট্রে নিহত সমপরিমাণ মানুষের মৃত্যু প্রতিদিন হচ্ছে করোনাভাইরাসে। জাতীয় দুর্যোগের এ সময়ে নির্বাচনে কারচুপির ভুয়া দাবি করেই যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিদিন হাজারো মানুষের মৃত্যু নিয়ে পালন করছেন রহস্যের নীরবতা। তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পরই ১০০ দিনের জন্য আমেরিকার জনগণকে মাস্ক পরার আহ্বান জানাবেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সন্ত্রাসী হামলায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকা থমকে দাঁড়িয়েছিল। এক দিনে প্রায় ৩০০০ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল দিনটিতে। রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেদিন দলমত-নির্বিশেষে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্যোগ মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোভিডে প্রতিদিন তিন হাজারের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সাবধানতা অবলম্বনের জন্যও রাষ্ট্রনেতার কোনো আহ্বান নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে একজন আমেরিকান ফুটবল কোচকে সম্মাননা দিয়ে দিন কাটিয়েছেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে করনায় মৃত্যু নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বাকিটা সময় তিনি ব্যয় করেছেন টুইটার আর ফেসবুকে নিজের নির্বাচন চুরি হয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে। ট্রাম্পের এমন অভিযোগ মার্কিন সংবাদমাধ্যম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও প্রচার করছে না। ফেসবুক, টুইটার ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টের নিচে জুড়ে দিচ্ছে নিজেদের বক্তব্য।

করোনার সংক্রমণ নিয়ে সহনীয় অবস্থায় নেই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শুরু হতেই দেশে গড়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৮০০ পেরিয়ে গেছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামী তিন মাস পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠবে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আমেরিকায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা তিনি বলেছেন।

দেশটিতে করোনায় ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এক লাখের বেশি মানুষ সংক্রমণ নিয়ে এখন হাসপাতালে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বিকার। স্বাস্থ্যসেবীরা মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেননি। মাস্ক পরা নিয়ে তিনি কয়েক দফা উপহাসও করেছেন। নিজে সংক্রমিত হয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেননি। তাঁর সমর্থকদের মধ্যে এখনো মাস্ক পরাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ট্রাম্প নিজেও বেশ কয়েকটি পার্টির আয়োজন করছেন ক্রিসমাসের আগে। এসব ঘরোয়া পার্টিও এড়িয়ে চলার জন্য সিডিসি নাগরিকদের একদিকে নির্দেশ দিচ্ছে।

‘প্রটেক্ট আওয়ার কেয়ারস’ নামের সংগঠনের পরিচালক জ্যাক পেটকানাস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন করোনাভাইরাস নিয়ে এখনো বিকারহীন। অপর দিকে সামনের সারির স্বাস্থ্যসেবীরা কঠিন সময় পার করছেন। ডাক্তার, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সামাল দিতে হচ্ছে চরম কঠিন বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কাঠামোতে এত নাজুক পরিস্থিতি আগে কখনো সামাল দিতে হয়নি।

আসছে তিন মাসে পরিস্থিতি কতটা নাজুক হবে—এ নিয়ে উদ্বেগের প্রহর কাটাচ্ছে আমেরিকার মানুষ। নগরকেন্দ্র এবং নগরকেন্দ্রের বাইরের হাসপাতালগুলো এর মধ্যেই বেসামাল হয়ে উঠেছে। সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের লাইন পড়ছে জরুরি বিভাগের দোরগোড়ায়। কোথাও কোথাও তাঁবু খাঁটিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শীতের তীব্রতাও বাড়ছে।

ক্ষমতা গ্রহণের আগেই জো বাইডেন টের পাচ্ছেন, তাঁর প্রথম কাজই হয়ে উঠছে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। এ নিয়ে তিনি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলছেন।