নিহত কিসোর সন্তানের ভাবনায় ৯/১১ হামলা

চেজ ভেবোর টগবগে আমেরিকান তরুণ। আমরা এক সঙ্গে কাজ করি। কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করলেও সে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে ভাবে। চেজের বাবা কিসো ভেবোর টুইন টাওয়ারে ষোলো তলায় কাজ করতেন। বিশ্বকে ফাঁকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঘটে যাওয়া সেই নাইন-ইলেভেনে চেজের বাবা মারা যায়। চেজের বয়স তখন ১০। তারা তখন ম্যানহাটনের হারলেমে থাকত। তার মনে আছে, সেদিনও তার বাবা তাকে স্কুলে ড্রপ করে অফিস গিয়েছিল।

আমার সঙ্গে পরিচয় প্রায় তিন বছর। প্রতিবছর এই দিনে আমি আর চেজ আলাদা বসে তার বাবার কথা স্মরণ করি। বেশির ভাগ সময়ই সে তার ছোট বেলার বাবার সঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন করে।

-তুমি কি জানো, আমি মুসলিম?

-হ্যাঁ জানি!। কিন্তু কেন বলছ?

ওর পাল্টা প্রশ্ন শুনে আমি একটু বিব্রত হয়ে পড়ি। ভাবলাম, কী দরকার ছিল, এমন বেহুদা কথা বলার। এখানে আমরা নামে পরিচিত। কে, কোন দেশের বা ধর্মের—এসব তেমন কেউ জানতে চায় না। আমার মুখ দেখে সে নিজ থেকেই বলতে শুরু করে।

বুঝতে পারছি, তুমি কী জানতে চাইছ। না, আমি মুসলিমদের ঘৃণা করি না। আমি ও আমার পরিবার বিশ্বাস করি না, সেদিনের ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। এটা শুধুই মুসলিম জঙ্গিরা করেছে, এটাও আমার বয়সী অনেকেই মানতে চায় না।

কি বলো? সারা দুনিয়ার মানুষ জানে, এই হামলা আল–কায়েদা বা ওসামা বিন লাদেন গ্রুপের কাজ এবং তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে, এ কাজ তাদের।

মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দুটি যাত্রীবাহী বিমান আছড়ে পড়েছিল নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে। অতপর আগুন, ধোঁয়া, তাসের ঘরের মতো দুটি টাওয়ার ভেঙে পড়ে। ঠিক তো?

–হ্যাঁ তাই তো।

চেজের কথা আরও শোনার আগ্রহ বাড়ে।

চেজ বলতে থাকে, শুধু দুটি উড়োজাহাজ হামলায় এত বিশাল টুইন টাওয়ার ধুলোয় মিশে গেছে, তা বাবা হারানো আমি মানতে রাজি নই। আমরা মা, দাদা–দাদি সব সময় বিশ্বাস করেন ৯/১১-এর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শুধু দুর্বলতাই ছিল না। তারা জড়িত থাকার অভিযোগও তোলেন। আমরা যারা সেদিন স্বজন হারিয়েছি, তারা সবাই জানি, সেই সময়ের মার্কিন কর্মকর্তারা ইচ্ছে করেই হামলাটি ঘটতে দিয়েছেন।

–আমি বললাম, আমরা সবাই তো জানতাম আল–কায়েদা জঙ্গি গ্রুপ এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

চেজের শ্লেষমাখা কণ্ঠে বলেন, তুমি তাহলে ভেতরের অনেক কিছুই জানো না। তোমরা ঠিক ততটুকুই জানো, যতটুকু তোমাদের জানানো হয়েছে। ২০০৬ সালে রিচার্ড গেগ নামে একজন ক্যালিফোর্নিয়া স্থপতি ৯/১১–এর সত্য প্রকাশের জন্য স্থপতি ও প্রকৌশলীদের একটি গ্রুপ গঠন করেন, যার নাম ‘নাইন ইলেভেন ট্রুথ’। তারা ওই দিনের ঘটনার সরকারি বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা মনে করেন, মাত্র কয়েকজন লোক মিলে অতি সাধারণ অস্ত্র দিয়ে এ রকম ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে, তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সে বলতে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন জোন্সের নেতৃত্বে ৭৫ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর অভিযোগ হলো, নিউইয়র্ক ও পেন্টাগনে সেই হামলা যাত্রীবাহী বিমানের নয়, এটি ছিল ভেতর থেকেই সংঘটিত। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে অধ্যাপক স্টিভেন বলেন, ভেঙে পড়া টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার পর নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেখানে ভবন ধসিয়ে দেওয়ার বিস্ফোরক ছিল।

চেজ আরও উল্লেখ করেন, তার দাদা সেডার ভেবোর নাকি কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর কথাটি পুরোপুরি বিশ্বাস করেন। কাস্ত্রো সে সময় বলেছিলেন, ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ছিল একটি ষড়যন্ত্র। পেন্টাগনে আসলে বিমান নয়, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছিল। কারণ, বিমানের যাত্রীদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাত্রী ও ক্রুজের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।

শুধু চেজ নয়, তাঁর বয়সী অনেকেই এখন মনে করেন, সেদিনের ঘটনাটি ঘটেছে তাদের নিজ দেশের দুর্বলতার সুযোগে। ৯/১১ হামলা ছিল গোয়েন্দা সংস্থার জটিল দৃশ্যকল্প ও কর্মকাণ্ড। আর পেন্টাগনে যে বিমানটি হামলা করেছিল, তার ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া গেল না কিংবা আরোহীদের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহের খোঁজ মিলল না কেন? এসব প্রশ্ন মোটামুটি নতুন প্রজন্মের মুখে মুখে। তবে তারা প্রতিবাদী নয়।

চেজ বলে যায়, আর মুসলিম বিরোধের কথা বলছ? সে তো এখন একটি শিল্পের রূপ নিয়েছে। ইসলাম-বিদ্বেষ বা ধর্ম বিদ্বেষ ছড়ানোর এ কাজ থেকে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করা হচ্ছে। সিএআইআর কখনো নিজেদের ইসলামি বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করছে যেন, মুসলমানদের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। তারা আমেরিকানদের বোঝানোর চেষ্টা করছে, মুসলমানেরা আমেরিকান কমিউনিটির অংশ নয় এবং তারা আমেরিকার বিশ্বস্ত নাগরিকও নয়।