ফ্লয়েড পুলিশ-কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সম্পর্কের প্রতীক

আমেরিকার দেয়ালে দেয়ালে পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হওয়া জর্জ ফ্লয়েডের ছবি। পাশে তাঁর শেষ কথা `আই কান্ট ব্রিদ`। ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার দেয়ালে দেয়ালে পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হওয়া জর্জ ফ্লয়েডের ছবি। পাশে তাঁর শেষ কথা `আই কান্ট ব্রিদ`। ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার মিনেপোলিসে পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে, তখন সেই বিক্ষোভের মধ্যেও পুলিশি নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিওচিত্র মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কোথাও কারফিউ ভঙ্গ করে সহিংসতার সঙ্গে লুটপাটের ঘটনাও ভিডিও চিত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে ১৫টি রাজ্যসহ ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঁচ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এরপরেও ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো শহরে প্রতিবাদকারী এক শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় দুই পুলিশ সদস্য। এর জবাবে বাফেলোর মেয়র বায়রন ব্রাউন বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী দীর্ঘ সময় কাজ করে খুবই ক্লান্ত। তাই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু তারপরও পুলিশকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে।

নিউইয়র্কের বিভিন্ন রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মিনেপোলিসে যেখানে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়, সেই শহরে তাঁর স্মরণে একটা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে আমেরিকায় পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার অভিযোগ করা হলেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। পুলিশ ইউনিয়নের কারণেই কোনো পরিবর্তন আনা কঠিন হবে বলে কিথ এলিসন নামের একজন বিশেষজ্ঞ এমন মন্তব্য করেন।

জর্জ ফ্লয়েডের ওপর নির্যাতনের ভিডিওটি শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কীভাবে পুলিশি আচরণ ও বর্ণবৈষম্য হচ্ছে তা প্রকাশ করেছে। আর এ কারণে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। জার্মানির কয়েকটি শহরের বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে জর্জ ফ্লয়েডের ছবি। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের দাঙ্গার সঙ্গে এই ঘটনার মিল খুঁজে পান। যেখানে পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তির হত্যার প্রতিবাদে সংঘটিত দাঙ্গায় ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।

২৫ মে যেদিন জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়, ওই দিন অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরের পুলিশ লিওন জনসন নামের আরেকজন কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকানকে গুলি করে হত্যা করে। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যুর ঘটনার উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সামনে এনেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ১ হাজার ১৪ জন এবং। আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকান। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে নিহত শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মৃত্যু হয় কৃষ্ণাঙ্গদের।

কিলি ইউনিভার্সিটির পাবলিক অর্ডার পোলিশিং বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্লিফার্ড স্টড বলেছেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা পুলিশ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য আছে সেখানে সংঘাত অনেকটাই অবশ্যম্ভাবী। পাবলিক অর্ডার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা পুলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্টড বলেন, ভালো পুলিশিং হলো, আমরাও, তাদেরও এই মনোভাব পরিহার করা।

জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম মৃত্যুর ঘটনার পর আইনপ্রণেতাদের টনক নড়েছে। নতুন আইন হচ্ছে। ঘাড়ে চাপ দেওয়ার কৌশল পুলিশকে পরিহার করতে হবে। এ আইন কার্যকর হলে আমেরিকাবাসী হয়তো হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে রক্ষা পাবে।