বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনুপ্রেরণা

সাঈদ রহমান মান্নান
সাঈদ রহমান মান্নান

মানুষ পৃথিবীতে আসে, আবার চলে যায়। ঠিক তেমনিভাবেই চলে গেছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের পরিচিত মুখ সাঈদ রহমান মান্নান । তিনি নিউইয়র্কের জনপ্রিয় মান্নান সুপার মার্কেটের মালিক ও বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্কের সাবেক উপদেষ্টা। স্থানীয় সময় ১৩ মার্চ মধ্যরাতে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। তাঁর নামাজে জানাজায় যেভাবে মানুষ অংশ নিয়েছেন, দলমত-নির্বিশেষ সবাই যেভাবে তাঁকে স্মরণ করেছেন, সেটাতে অনেকেই বলছেন, ‘মান্নান ভাই, এ লাইফ ওয়েল স্পেন্ট’।
নিউইয়র্কের আইনজীবী ও অভিবাসন মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ এন মজুমদার তাঁর ফেসবুক দেয়ালে প্রয়াত মান্নানের জানাজার ছবি দিয়ে লিখেছেন ‘এ লাইফ ওয়েল স্পেন্ট।’
সাপ্তাহিক বাঙালি পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ লিখেছেন, নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইট্‌সে ৭৩ স্ট্রিটের বাংলাদেশি বাজার প্রতিষ্ঠার রূপকার সাঈদ রহমান মান্নান চলে গেলেন না ফেরার দেশে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের জন্য তিনি ছিলেন অনেক অনুপ্রেরণা। কমিউনিটির একজন ভালো মানুষকে হারালাম আমরা। মান্নান ভাই ভালো থাকুন।’

সাঈদ রহমান মান্নানের মৃত্যুর খবর শুনে জ্যাকসন হাইট্‌সের ৭৩ স্ট্রিটে দলমত-নির্বিশেষ অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান।  ছবি: পুলক মাহমুদ
সাঈদ রহমান মান্নানের মৃত্যুর খবর শুনে জ্যাকসন হাইট্‌সের ৭৩ স্ট্রিটে দলমত-নির্বিশেষ অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান। ছবি: পুলক মাহমুদ

ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি সাবেক সাংসদ এম এম শাহীন লিখেছেন, হালাল ফুডের মাধ্যমে কমিউনিটির সেবায় একের পর এক গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সফল ব্যবসায়ী জনপ্রিয় মান্নান ভাই। প্রবাসীসহ ঠিকানা পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
নিউইয়র্কে স্পেশালাইজড স্কুলে শিক্ষার্থীদের টিউটোরিয়াল প্রতিষ্ঠান খান’স টিউটোরিয়ালের প্রধান নির্বাহী ইভান খান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘মান্নান চাচা ছিলেন আমাদের কমিউনিটির একজন সত্যিকারের আইকন। ’৮০-৯০-এর দশকে একজন বাংলাদেশি হিসেবে যখন আমি বড় হচ্ছিলাম, তখন তার পণ্য দ্রব্য আমাদের কাছে একটি ব্রান্ডের মতোই মনে হত, যা ঈদ এবং অন্যান্য খুশির দিনের উপলক্ষ হত। ২০০২ সালে যখন আমার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত হন, মান্নান চাচা প্রতি মাসে আমার বাবার জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করতেন। সে কারণেই হয়তো বাবা ১২ বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচেছিলেন। আমি দোয়া করি তারা পরজীবনে যেন আবার একত্রিত হতে পারেন।’
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইট্‌স কেন্দ্রিক বাংলাদেশি বণিক সমিতির বিকাশের পেছনের কারিগর ছিলেন সাঈদ রহমান মান্নান। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন। সর্বশেষ মাস দেড়েক আগে যখন আমার সঙ্গে মান্নানের কথা হয়, তখন তাঁকে বলেছিলাম—তাঁর জীবনী নিয়ে একটি ভিজুয়াল বায়োগ্রাফি নির্মাণ করতে চাই। তিনি জানিয়েছিলেন, আমি একটু সুস্থ হই বাবা, আমার জন্য দোয়া কর। পরে অনেক কথা বলব।

সাঈদ রহমান মান্নানের জানাজায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসী অংশ নেন
সাঈদ রহমান মান্নানের জানাজায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসী অংশ নেন

সাঈদ মান্নান জ্যাকসন হাইট্‌সে মান্নান গ্রোসারি স্টোরসহ নিউইয়র্কে মান্নান ব্র্যান্ডে সাতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। নিউইয়র্কে ক্রম বিকাশমান বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী একজন উদ্যোক্তা। নিজে এক সময় অন্যের প্রতিষ্ঠানে মাংস কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরে আস্তে আস্তে নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন, সর্বশেষ প্রায় আড়াই শ মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন তিনি।
১৪ মার্চ বাদ জোহর যখন জানাজার জন্য মরহুম সাঈদ মান্নানের মরদেহ জ্যাকসন হাইট্‌সের মান্নান স্টোরের সামনে আনা হয়, তখন শত শত প্রবাসী জড়ো হয়েছিলেন, তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য। যেই প্রবাসে
ঘণ্টা হিসাব করে মানুষ শ্রম দেয়, ট্যাক্সি চালায়, যেখানে সময়ের মূল্য অনেক
বেশি সেখানে অর্থের চেয়ে মান্নান রহমানের জন্য তাঁদের শ্রদ্ধা গচ্ছিত ছিল অনেক বেশি।