বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ
সার্বিক সূচক বলছে, নিউইয়র্ক গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো আইনশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে অন্তত এটাই প্রতিফলিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলিতে বা অন্যভাবে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২৭৮ জনের, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ ভাগ কম। ২০১৬ সালে আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে মৃত্যু হয়েছিল ৩২৫ জন মানুষের। ১৯৯০ এর দশকে গড়ে প্রতি বছর দুই হাজার হত্যাকাণ্ড ঘটত। সেই হিসাবে বলা হচ্ছে, প্রতিবছরই হত্যাকাণ্ডের হার কমতে কমতে নিউইয়র্ক এখন গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো আইনশৃঙ্খলা অবস্থায় আছে। তবে সব
জায়গায় পরিস্থিতি সমান নয়।
সম্প্রতি দুটি ঘটনা ঘটেছে দুজন বাংলাদেশির ক্ষেত্রে। এস্টোরিয়ার ব্যবসায়ী মুহিবুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন গত ২১ ডিসেম্বর। আর ২৬ ডিসেম্বর জ্যামাইকায় বাংলাদেশিদের ব্যস্ত এলাকা স্টার কাবাবের ভেতরেই ক্যাশবাক্স (টিপস) ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গেলে মারাত্মক আহত হন সাপ্তাহিক দেশকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক দর্পণ কবির। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। তিনি সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন সবাইকে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দর্পণ কবির বলেন, জ্যামাইকায় একটি রেস্টুরেন্টে দুর্বৃত্তরা টাকার বাক্স ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজনকে আটকে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। দুর্বৃত্তরা আকস্মিক হামলা চালিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিক শিবলী ভাইকে বেধড়ক ঘুষি মারতে থাকে। এরপর তিনি এক দুর্বৃত্তকে ঝাপটে ধরেন। কিন্তু সজোরে ধাক্কা মেরে তাঁকে ফেলে দেয় ওই দুর্বৃত্ত। এতে তাঁর ডান পায়ের পেশিতে আঘাত লাগে। হাসপাতালে যেতে হয়। তবে তেমন ক্ষতি হয়নি।
আকায়েদকাণ্ডের পর বাংলাদেশিদের টার্গেট করে এ আক্রমণ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে দর্পণ কবির বলেন, তেমন কিছু নয়, এরা কিশোর সন্ত্রাসী। এদের আক্রমণের শিকার যে কেউ হতে পারে।
আকায়েদের সন্ত্রাসী আক্রমণের চেষ্টার খবরে বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে এত সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে হেইট ক্রাইম বেড়ে যায় কিনা, বর্তমানে এমন শংসয়ে আছেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে এস্টোরিয়ায় মহিবুল ইসলামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দেখা যায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে তা ঘটেছে। অবশ্য সামগ্রিকভাবে এখন কমিউনিটির সবাই সবাইকে চোখ কান খোলা রাখার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
হেইট ক্রাইম বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কোথাও কিছু দেখলে নিজে তার সমাধান না করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোটাই ভালো এবং নিরাপদ কাজ এটিই। সিএনএন বা এবিসিতে যেন বাংলাদেশিদের নাম না আসে, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেন, ‘আমাদের কেউ টার্গেট করেছে বলে বিশ্বাস করি না আমি। তবে সতর্কতা সব সময় থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা হোমোজিনাস কমিউনিটি না। এটার প্লাস পয়েন্ট আছে, নেগেটিভ পয়েন্টও আছে। কালচারাল দ্বন্দ্ব আছে আমাদের মধ্যে। ধর্মীয় দ্বন্দ্ব হতে পারে কমিউনিটির মধ্যে। অনেক বৈচিত্র্যের শহরের কারণে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে একটি অসম্ভব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের আরও বেশি সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।’