বাইডেনের অভিবাসন আইন প্রস্তাবে কম বাংলাদেশিই সুবিধা পাবেন

হোয়াইট হাউসে প্রথম দিনের কাজে ব্যস্ত জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিবাসন নিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসননীতি থেকে বেরিয়ে আশার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নতুন নির্বাহী আদেশে আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বৈধ কাগজপত্রহীন লোকজনকে বিতাড়ন করা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

ধসে পড়া মার্কিন অভিবাসন খাতের বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অভিবাসীদের মূল সমস্যা এখনো নজরে আনা হয়নি। অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন—এমন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা মনে করছেন, দ্রুতই অভিবাসন নিয়ে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন অভিবাসন সমস্যায় জর্জরিত লোকজনকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে।

নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে অভিবাসনবিষয়ক অ্যাটর্নি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন মঈন চৌধুরী প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার যে ঘোষণা বাইডেন দিয়েছেন, তা ঐতিহাসিক। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাইডেন তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অভিবাসন–সম্পর্কিত কয়েকটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এটি সেগুলোর একটি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় তরুণ অভিবাসীদের জন্য নেওয়া ও ট্রাম্প প্রশাসনের সময় স্থবির হয়ে পড়া ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং এর পরিসর বাড়ানো হবে বাইডেনের আমলে। এরই মধ্যে কর্মসূচিটি চালুর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে স্মারকে সই করেছেন বাইডেন।

তবে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর কিছুটা শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে উল্লেখ আছে, যুক্তরাষ্ট্রে যাঁদের অভিবাসনসংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র নেই, তাঁরাই কেবল নতুন আদেশের আওতায় পড়বেন। যাঁদের অভিবাসন বিষয়ে আবেদন বিবেচনার অপেক্ষায় আছে, তাঁরা কোনো সুবিধা পাবেন না। কংগ্রেসে যে আইন প্রস্তাব (ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ২০২১) উত্থাপনের কথা হচ্ছে, সেখানেও অপেক্ষমাণ লোকজনের বিষয়ে কিছু বলা নেই।

কাজের অনুমতি, স্টুডেন্ট ভিসা, এমনকি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গ্রিনকার্ডের কয়েক লাখ আবেদন অভিবাসন বিভাগের বিবেচনার অপেক্ষায় রয়েছে। যাঁদের কোনো না কোনো নথিপত্র আছে, তাঁদের কথা ওই নতুন আইন প্রস্তাবে নেই। শুধু যাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে বা সীমান্ত অতিক্রম করার পর কোনো কর্মসূচিতে আবেদন করেননি, তেমন কাগজপত্রহীন লোকজনকে এ আইনে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অ্যাটর্নি মঈন বলেন, ওই প্রস্তাবের সুবিধাভোগী হিসেবে অন্যদেরও যুক্ত করতে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে অভিবাসন গ্রুপগুলো যোগাযোগ করছে। এ নিয়ে ২১ জানুয়ারি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ও নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমারের অফিসে টেলিফোন করার কথা জানান মঈন চৌধুরী।

১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার যে ঘোষণা বাইডেন দিয়েছেন, তা ঐতিহাসিক। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাইডেন তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অভিবাসন–সম্পর্কিত কয়েকটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।
মঈন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে অভিবাসনবিষয়ক অ্যাটর্নি

শুধু কাগজপত্রহীনদের জন্য গ্রিনকার্ডের ব্যবস্থা হলে মেক্সিকোসহ মধ্য আমেরিকার অধিবাসীরাই এর পুরো সুবিধা পাবে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি অভিবাসীই এতে কোনো সুবিধা পাবেন না। মঈন চৌধুরী বলেন, তাঁরা চাইছেন, যাঁদের অভিবাসনসংক্রান্ত মামলা বিবেচনাধীন, তাঁদের আগের আবেদন প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচিতে আবেদন করার সুযোগ যেন থাকে। তিনি জানান, দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে।

অভিবাসন নিয়ে নতুন আইন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি বা এর আগে থেকে নথিপত্রহীন অবস্থায় থাকা অভিবাসীরা পাঁচ বছরের জন্য কাজের অনুমতি পাবেন। তাঁরা পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রিনকার্ড ও এর তিন বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

অভিবাসন বিভাগের কাছে যাঁদের অভিবাসনসংক্রান্ত মামলা বিবেচনার অপেক্ষায় আছে, তাঁরা শঙ্কার মধ্যে আছেন। নতুন অভিবাসন আইন পাস হলে তাঁরা সরাসরি কোনো সুবিধা পাবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এসব অভিবাসীকে অভিবাসনের আবেদন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালতের মনোভাব আগের চেয়ে নমনীয় থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট খাতের আইনজীবীরা মনে করেন।

কাজের অনুমতি, স্টুডেন্ট ভিসা, এমনকি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গ্রিনকার্ডের কয়েক লাখ আবেদন অভিবাসন বিভাগের বিবেচনার অপেক্ষায় রয়েছে। যাঁদের কোনো না কোনো নথিপত্র আছে, তাঁদের কথা ওই নতুন আইন প্রস্তাবে নেই। শুধু যাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে বা সীমান্ত অতিক্রম করার পর কোনো কর্মসূচিতে আবেদন করেননি, তেমন কাগজপত্রহীন লোকজনকে এ আইনে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নতুন অভিবাসন আইন প্রস্তাব অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় আসা ব্যক্তিরাও কোনো সুবিধা পাবেন না। সিএসএস-লুলাক কর্মসূচিতে গ্রিনকার্ড না পাওয়া ব্যক্তিরাও নথিপত্রহীন হিসেবে সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া, যাঁরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার পর শুধু কাজের অনুমতি পেয়েছেন, তাঁরা বহিষ্কারের আদেশের বাইরে থাকলেও এই বিলের (ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ২০২১) সম্পূর্ণ সুবিধা পাবেন কি না, তা বিলটি পাস হলে জানা যাবে। কংগ্রেসে ওই বিল পাস হলেও গুরুতর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরাও সুবিধা পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন কত মানুষ আছে, তার সঠিক তথ্য কারও কাছেই নেই। ধারণা করা হয়, শুধু কাজের অনুমতি নিয়ে দেশটিতে আছেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাংলাদেশি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় তরুণ অভিবাসীদের জন্য নেওয়া ও ট্রাম্প প্রশাসনের সময় স্থবির হয়ে পড়া ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং এর পরিসর বাড়ানো হবে বাইডেনের আমলে। এরই মধ্যে কর্মসূচিটি চালুর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে স্মারকে সই করেছেন বাইডেন।