বাইডেনের শপথ: নানা আয়োজনে প্রস্তুত ক্যাপিটল

মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল বিল্ডিংছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। তবে তাঁর শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে মার্কিন ইতিহাসের কোনো প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন।

এনবিসি নিউজের খবরে বলা হয়, কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ওয়েস্ট ফ্রন্টে আয়োজিত নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান হবে জাঁকজমকপূর্ণ। উপস্থিত থাকবেন সাবেক প্রেসিডেন্টরা। থাকবেন কংগ্রেসের নেতা ও খ্যাতনামা শিল্পীরা। হবে কুচকাওয়াজ। জানানো হবে নিহত বীরসেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা।

কিন্তু আয়োজনগুলো হচ্ছে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে, যখন দুই হুমকিতে রীতিমতো লকডাউনে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। এর একটি করোনা মহামারির সংক্রমণ, অন্যটি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের সম্ভাব্য সহিংস আচরণ। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে মারা গেছেন চার লাখের বেশি মানুষ। আর সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী হামলা-সহিংসতায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন, আহত কয়েক শ।

হয়তো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান স্ক্রিনে দেখবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ। যদিও করোনার সংক্রমণ ও ট্রাম্প সমর্থকদের সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় অভিষেক অনুষ্ঠানের স্থান ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলে লোকজনের উপস্থিতিটা হবে সবচেয়ে কম। তার মানে অধিকাংশ মানুষ অনুষ্ঠান দেখবেন নিজ বাড়িতে বসে টেলিভিশনের পর্দায়।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়ে বাইডেনের অনুষ্ঠানটি হবে অনেক তারকাসমৃদ্ধ। উপস্থিত থাকবেন টবি কিথ, লি গ্রিনউড, লেডি গাগা, জেনিফার লোপেজ, ব্রুস স্প্রিং স্টিন ও সুপারস্টার গার্থ ব্রুকস প্রমুখ।

বিবিসি বলছে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। পরে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বাইডেন। রাতে ‘সেলিব্রেটিং আমেরিকা’ নামে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।

অন্যান্য প্রেসিডেন্টের অভিষেকের মতো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানেও দর্শক-শ্রোতার সারিতে থাকবেন কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ সদস্য। থাকবেন সাবেক কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি। যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, লরা বুশ ও হিলারি ক্লিনটন। তবে সবচেয়ে বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার (৯৬) ও সাবেক ফার্স্ট লেডি রোজালিন কার্টার উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তাঁরা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে তাঁদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন।

ক্যাপিটল ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার প্রেক্ষাপটে আজকের অনুষ্ঠানকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। অভিষেক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় ডাকা হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে।

অনুপস্থিত থাকবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৮৬৯ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের পর থেকে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর উত্তরসূরির অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না। তবে বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স উপস্থিত থাকবেন।

এনবিসি নিউজের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়া সংগীতশিল্পী লেডি গাগা আজকের অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাইবেন। রীতি অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর ১২টায় বাইডেনকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন তিনি। বাইডেন তাঁর পরিবারে রক্ষিত ১২৭ বছরের পুরোনো বাইবেলের একটি কপি হাতে শপথবাক্য পাঠ করবেন। এটি ধরে রাখবেন তাঁর স্ত্রী জিল বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে শপথ পড়াবেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র। ২০১৩ সালে বাইডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ পড়িয়েছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের দেওয়া ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য ‘আমেরিকা ইউনাইটেড’ (যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ)। এটিকে সামনে রেখেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি : রয়টার্স

ভাষণেও এ বিষয়বস্তুর ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ভাষণ নিয়ে সপ্তাহান্তেও পরিবারের সদস্যরা ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাইক ডনিলনের সঙ্গে কাজ করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণজনিত কারণে পুরো আয়োজন ঘিরে নেওয়া হবে নিরাপত্তামূলক নানা পদক্ষেপ, যা এবারের অভিষেক অনুষ্ঠানকে অন্যান্যবারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা করে তুলে ধরবে। উপস্থিত ব্যক্তিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরতে হবে মাস্কও।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কমলা হ্যারিস
ফাইল ছবি: এএফপি

করোনা সংক্রমণের কারণে পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অতিথির সংখ্যাও এবার অনেক কম রাখা হয়েছে, যাতে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ক্যাপিটল অভিমুখে একসঙ্গে ভ্রমণে বের হতে না হয়। অন্যান্যবার কংগ্রেস সদস্যদের জন্য প্রায় দুই লাখ টিকিট বরাদ্দ রাখা হলেও এ বছর তাঁরা দুটি করে টিকিট পেয়েছেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটি বলেছে, বাইডেন যত মানুষের উপস্থিতিতে ক্যাপিটলের ভেতর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দেবেন, ঠিক তত, অর্থাৎ এক হাজারের মতো লোক অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

প্রেসিডেন্টের অভিষেকের পর প্রতিবার মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করার রীতি থাকলেও এবার তা বাতিল করা হয়েছে।

অভিষেকে অনুপস্থিত থাকা মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ন্যাশনাল মলে প্রদর্শন করা হবে বিভিন্ন আকারের প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ মার্কিন পতাকা। সেখানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী পতাকাও থাকবে। এ ছাড়া সব অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে থাকবে ৫৬টি ‘পিলার অব লাইট’ (আলোকস্তম্ভ)।

স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বাইডেনকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। বাইডেন তাঁর পরিবারে রক্ষিত ১২৭ বছরের পুরোনো বাইবেলের একটি কপি হাতে শপথবাক্য পাঠ করবেন।

ক্যাপিটল ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার প্রেক্ষাপটে আজকের অনুষ্ঠানকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। অভিষেক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় ডাকা হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে। ক্যাপিটলের কাছে স্থাপন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তাবেষ্টনী। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বহু রাস্তা।

বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স
ফাইল ছবি: রয়টার্স

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সেকেন্ড জেন্টেলম্যান হিসেবে হোয়াইট হাউস অভিমুখে রওনা দেবেন বাইডেন ও তাঁর স্ত্রী এবং হ্যারিস ও তাঁর স্বামী।