বিতর্কে ট্রাম্প–বাইডেনের কাদা ছোড়াছুড়ি

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক চলে।ছবি: রয়টার্স

বিদ্রূপ আর চেঁচামেচির মধ্য দিয়ে বিতর্ক চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ৯০ মিনিটের বিতর্কে পরিস্থিতি ছিল যথেষ্ট উত্তপ্ত। তবে এর মধ্যেও দুই প্রার্থী ভোটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ইস্যুতে কথা বলেছেন।

এএফপির খবরে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধের কারণে বিতর্কমঞ্চে ওঠার পর ট্রাম্প ও বাইডেন পরস্পর হাত মেলাননি। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প ও বাইডেন বিশ্বাসযোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করেন।

মঞ্চে ওঠার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের শূন্যস্থান থেকে শুরু করে মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় করোনারভাইরাস মহামারী ইস্যু নিয়ে বিতর্কটি ব্যক্তিগত কোন্দলে রূপ নেয়।

ট্রাম্পের করফাঁকির অভিযোগ

নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে জানা যায়, ট্রাম্প ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার করে কর দিয়েছেন। আরও অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর মোটেও কোনো আয়কর দেননি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ ট্রাম্প নিজের কোম্পানিগুলোর বারবার লোকসান দেখিয়েছেন এবং বছরের পর বছর ধরে আয়কর এড়িয়েছেন।’ তবে ট্রাম্প এই ইস্যুতে জানান তিনি লাখ লাখ ডলার আয়কর দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই দাবির প্রমাণ দেখতে চান বাইডেন। তাঁকে আয়কর রিটার্ন দেখাতে বলেন। ক্লিভল্যান্ডে বিতর্কের আগে বাইডেন ২০১৯ সালে তাঁর কর দেওয়ার তথ্যপ্রকাশ করেন। সেখানে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ৩ লাখ ডলার কর দিয়েছেন বলে জানানো হয়। বাইডেনকে আয়কর রিটার্ন দেখাবেন বলে জানান ট্রাম্প। তবে কখন দেখাবেন তা বলেননি।

সন্তানদের টেনে বিতর্ক

ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের ছেলের হান্টারের ইউক্রেন ও চীনের ব্যবসা আলোচিত। ট্রাম্প বারবার এটিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের ভুল কাজ বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। বাইডেন পাল্টা জবাবে বলেন, ট্রাম্পের পরিবার নিয়ে তিনি সারারাত কথা বলতে পারেন। ট্রাম্প বলেন, তাঁর পরিবার মার্কিন সরকারের কাজে সহায়তা করছে।

ট্রাম্প অভিযোগ করেন, মাদক নেওয়ায় হান্টার বাইডেনকে সেনাবাহিনী থেকে অসম্মানজনকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাইডেন ছেলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, অনেক সাধারণ পরিবারের সন্তানের মতো তাঁর ছেলেরও মাদক নিয়ে সমস্যা ছিল। তবে ছেলে তা কাটিয়ে উঠেছে।

পাল্টাপাল্টি বিদ্রূপ

ট্রাম্পকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘পোষা কুকুরছানা’ বলেছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের প্রতি অভিযোগ ছুড়ে বলেন, ‘তিনি যা কিছু বলছেন তা নির্জলা মিথ্যা। সবাই জানে তিনি মিথ্যাবাদী।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে বাইডেন আরও বলেন, ‘আপনি কি চুপ করবেন?’একপর্যায়ে বলেন, ‘এই জোকারের কাছ থেকে কোনো কথা আদায় করা শক্ত।’

যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় এ পর্যন্ত ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু বেশি। মৃত্যুর এই হার নিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন বাইডেন। তিনি ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘করোনায় মারা যাওয়ায় রান্নাঘরের টেবিলে কতজনের চেয়ার খালি পেয়েছেন?’

পাল্টা জবাবে ট্রাম্প বলেন, কখনও আমার সঙ্গে বেশি চালাকির চেষ্টা করবেন না। তিনি করোনারোধে মাস্ক পরায় বাইডেনের উৎসাহ নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মাস্ক রয়েছে। যখন প্রয়োজন হয় তখন আমি মাস্ক পরি। বাইডেনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর মতো মাস্ক পরি না। যখনই তাঁর দিকে তাকাবেন দেখবেন মাস্ক পরে আছেন।’

শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ

বিতর্কের সঞ্চালক ওয়ালস পুলিশের হাতে একের পর এক আফ্রিকান আমেরিকানদের মৃত্যু ইস্যুতে দুই প্রার্থীকে কথা বলতে বলেন। তিনি ট্রাম্পের কাছে জানতে চান শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের নিন্দা জানাবেন কি না বা তাঁদের সরে দাঁড়াতে বলবেন কি না। উত্তরে ট্রাম্প জানান এতে তিনি রাজি।

নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়া

নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন কি না দুই প্রার্থীর কাছে জানতে চান সঞ্চালক। ট্রাম্প বলেন, ‘নির্বাচনের ফল আমরা কয়েক মাসে নাও জানতে পারি। তিনি বলেন, এটা ভালোভাবে শেষ নাও হতে পারে।’ট্রাম্প সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে এবং সতর্কতার সঙ্গে নজরদারি করতে আহ্বান জানান।

বাইডেন অবশ্য উল্টো কথা বলেন। ভোট গণনা শেষে ফলাফল মেনে নেবেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘যদি আমি জিতি তাহলে ভালো। আমি না জিতলেও ফলাফল মেনে নেব।’

আরও পড়ুন