বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

মার্কিন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের কাছে পতাকা ওড়াতে দেখা যাচ্ছে একজনকে । ৪ নভেম্বর
ছবি: রয়টার্স

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জয় ঘোষিত হয়নি। মিনিটে মিনিটে চলছে ভোটের নতুন হিসাব। অ্যারিজোনার ভোট গণনা শেষ হয়নি। একাধিক গণমাধ্যম অ্যারিজোনাকে বাইডেনের পক্ষে দিয়ে দিয়েছে। ফলে তাঁর পক্ষে ২৬৪ ইলেক্টোরাল ভোট দেখানো হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসসহ অন্য প্রধান সংবাদ মাধ্যমে অ্যারিজোনা ছাড়া বাইডেনের পক্ষে ২৫৩ ইলেক্টোরেট ভোট দেখানো হচ্ছে। রাত নয়টা পর্যন্ত অ্যারিজোনার ৮৬ শতাংশ ভোট গণনায় বাইডেন এগিয়ে আছেন ৫১-৪৭.৬ শতাংশ ব্যবধানে।  

যেকোনো সময়ে এ রাজ্যের গণনা শেষ হলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। সে ক্ষেত্রে নাভাদার ছয়টি ইলেক্টোরেট ভোট পেলেই জো বাইডেন আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম ঘোষিত হবে।

সব বিবেচনায় জো বাইডেনকে নিয়ে এখনো আশাবাদ জোরালো। এর মধ্যেই ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির থেকে উইসকনসিনে ভোট আবারও গণনার আবেদন জানানো হয়েছে। রাজ্যের নির্বাচনী আইনে যেকোনো পরাজিত পার্থী এমন পুনঃ গণনার আবেদন জানাতে পারে। আবেদন গৃহীত হলেও ফলাফলের কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে না।

পেনসিলভেনিয়া এবং মিশিগানের ভোট গণনা বন্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ট্রাম্প। ভোট গণনা বন্ধের এমন আবেদন নিয়ে আদালতে খুব সুবিধা পাবেন বলেও মনে হচ্ছে না। যদিও মনে করা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টে গেলে রক্ষণশীল প্রাধান্যের সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে সুবিধা দেবে। ডেমোক্রেটিক দলের আইনজীবীদের দল আদালতকে মোকাবিলা করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত আছে। প্রতিটি রাজ্যের আইন বিশ্লেষণ করে ভোট গণনার ওপর নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের পক্ষে পাওয়া যাবে বলেও কেউ জোরালোভাবে মনে করছেন না।

ব্যক্তি ট্রাম্পের পরাজয় হলেও রিপাবলিকান দলের সাধারণ সমর্থকেরা মনে করছেন, তাঁদের অনেক ক্ষেত্রেই জয় হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ সালের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। সব ধরনের বৈরিতা মোকাবিলা করে ট্রাম্পের এমন ব্যাপক ভোট প্রাপ্তি এবং জয়–পরাজয়ের একদম কাছাকাছি অবস্থান ডেমোক্র্যাটদেরও হতবাক করেছে।

প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দল সাতজন ডেমোক্র্যাটকে পরাজিত করতে পেরেছে। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারলেও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এর মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হলে ডেমোক্রেটিক দলে স্পিকার পরিবর্তনের আলাপ এখনই শুরু হয়ে গেছে।

এবারের নির্বাচনে ২০১৬ সালের মতো আবারও আমেরিকার জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিশ্চিত পরাজয় ঘটেছে। উভয় দলের সমর্থকেরাই আমেরিকার জরিপ প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতাকে এখন তুলাধোনা করছেন।

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমেরিকার সমাজ যে তীব্রভাবে বিভক্ত, তা আবার সামনে চলে এসেছে। প্রেসিডেন্ট পদে শেষ পর্যন্ত জো বাইডেন নির্বাচিত হলেও বিভক্ত আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাঁকে হিমশিম খেতে হবে। ওয়াশিংটনের রাজনীতিতেও ট্রাম্পের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অস্থিরতার অবসান ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে না। এসব কথা বলার জন্যও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় বা জো বাইডেনের জয় ঘোষণা পর্যন্ত আমদের অপেক্ষা করতে হবে।