বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদী আচরণ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের

মিশেল ব্যাচেলেট

যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর সৃষ্ট জনরোষের পুনরাবৃত্তি এড়াতে সারা বিশ্বে কৃষ্ণকায় মানুষের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত বর্ণবাদী আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। সোমবার এ আহ্বান জানান তিনি। এএফপির খবর।

যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার নিষ্ঠুর নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্লয়েড নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রস্তুত করা একটি প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত লোকজনকে অবজ্ঞার চোখে দেখার বিষয়টি বর্ণবাদী বৈষম্য ও সহিংসতাকে গা সওয়ার সংস্কৃতিতে পরিণত করে তুলেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে (এইচআরসি) ২৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন তিনি।

বর্ণবাদী বিচারব্যবস্থা ও সমতার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে মিশেল ব্যাচেলেট চার দফা অ্যাজেন্ডাও তুলে ধরেন। বিভিন্ন দেশকে এসব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান তিনি। ঐতিহাসিক বর্ণবাদের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দান ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন মূল্যবান) মতো আন্দোলনে অর্থায়ন ইত্যাদি তাঁর সুপারিশগুলোর অন্যতম।

চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট ব্যাচেলেট বলেন, বর্ণবাদী ব্যবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘পদ্ধতিগত বর্ণবাদ রুখতে পদ্ধতিগত সাড়া প্রদান দরকার। না হলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা বৈষম্য ও সহিংসতার অবসান ঘটানো সম্ভব নয়। ফ্লয়েড নিহত হওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা এড়াতে হলে আমাদের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।’

২০২০ সালের মে মাসে মিনিয়াপোলিসে ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডে দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিন। তাঁকে ২২ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এ সাজা ঘোষণার তিন দিন পর বর্ণবাদ নিয়ে ওই প্রতিবেদন জমা দিলেন মিশেল ব্যাচেলেট।

ফ্লয়েডকে আটকের পর প্রায় ১০ মিনিট ধরে তাঁর ঘাড় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে ছিলেন তৎকালীন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পরে মারা যান ফ্লয়েড। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে মিছিল করেন হাজার হাজার মানুষ। একপর্যায়ে তা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার নামে নতুন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এ আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে।

জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার পর পদ্ধতিগত বর্ণবাদ, কৃষ্ণকায় মানুষের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শান্তিপূর্ণ বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে সরকারের সাড়াদান বিষয়ে একটি সমন্বিত প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসকে। প্রতিবেদনে সরকারের জবাবদিহি ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের প্রতিকার পাওয়ার বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে।