বিশ্বে এক দিনে ৪ হাজার ৭৩১টি ফ্লাইট বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি বিমানবন্দর
ফাইল ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনের কারণে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার জেরে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বাতিল অব্যাহত রয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে ফ্লাইট বাতিলের প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েছে। গত শনিবার ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা নতুন শিখরে পৌঁছেছে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানায়, ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইট এওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার সারা বিশ্বে ৪ হাজার ৭৩১টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, যা বড়দিনের পর থেকে এক দিনে সর্বোচ্চ ফ্লাইট বাতিলের রেকর্ড।

এর মধ্যে ২ হাজার ৭৩৯টি ফ্লাইট অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া শনিবার সারা বিশ্বে ১১ হাজার ৪৩টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলে বিলম্ব হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯৯৩টি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট। দেশটির এয়ারলাইনস কোম্পানি সাউথ ওয়েস্টের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইটের ১৩ শতাংশ বাতিল করতে হয়েছে তাদের।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিকাগো অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে বড়দিনের ছুটিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন এয়ারলাইনস কোম্পানির প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল। সিএনএন জানিয়েছে, রোববার সাধারণত এয়ারলাইনসগুলোর জন্য ব্যস্ততম দিন। গতকালও ১ হাজার ৮২৭টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

করোনার অতি সংক্রামক ধরন অমিক্রনের প্রকোপ যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রভাব এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোর ওপর পড়েছে। বিভিন্ন এয়ারলাইনের অনেক পাইলট, ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ও কর্মী ছুটিতে আছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। কাউকে আবার করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার কারণে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাঁরাও কাজে যোগ দিতে পারছেন না। করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণেও যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বিশ্বে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। ইউরোপে ১০ কোটির বেশি করোনা শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোট সংক্রমণের এক–তৃতীয়াংশের বেশি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপ আবারও মহামারির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। দ্রুত সংক্রমণশীল করোনার অমিক্রন ধরনের বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় গোটা ইউরোপ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে। আটলান্টিক উপকূল থেকে আজারবাইজান ও রাশিয়া পর্যন্ত ইউরোপের ৫২টি দেশে গত দুই বছরে ১০ কোটি ৭৪ হাজার ৭৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ২৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপে শনাক্ত হয়েছে এক–তৃতীয়াংশের বেশি।

শুধু গত এক সপ্তাহে ৫০ লাখের বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপের ৫২টি দেশের মধ্যে ১৭টিতে গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্তের এই সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ে এক সপ্তাহে আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

এর মধ্যে শুধু ফ্রান্সেই গত সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড করেছে। বিশ্বে প্রতি ১ লাখ বাসিন্দার মধ্যে সংক্রমণের অনুপাত সবচেয়ে বেশি ছিল ইউরোপে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ডেনমার্ক। দেশটিতে প্রতি ১ লাখে ২ হাজার ৪৫ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অপর দিকে সাইপ্রাসে এই সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৯ এবং আয়ারল্যান্ডে ১ হাজার ৯৬৪।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ষষ্ঠ দেশ হিসেবে ফ্রান্সে এক কোটির বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনিবার দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়। সরকারি তথ্য অনুসারে, মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে।

ফ্রান্সের আগে এক কোটি করোনা রোগী শনাক্তের ক্লাবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া নাম লেখায়।

যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫৮ লাখের বেশি, ভারতে ৩ কোটি ৪৮ লাখের বেশি, ব্রাজিলে শনাক্ত ২ কোটি ২২ লাখের বেশি, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ১ কোটি ৩১ লাখের বেশি এবং রাশিয়ায় শনাক্ত ১ কোটি ৫ লাখের বেশি।

ফ্রান্সের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করেন বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ কঠিন হবে। ফ্রান্সে ইতিমধ্যে ঘোষণা করা বিধিনিষেধের চেয়ে আরও বেশি বিধিনিষেধের প্রয়োজনের কথা নববর্ষের প্রাক্কালে দেওয়া ভাষণে উল্লেখ করেননি মাখোঁ।

তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেন, সরকারের উচিত ব্যক্তিস্বাধীনতাকে আরও সীমিত করা থেকে বিরত থাকা।