বেছে বেছে অভিবাসী অধিকার কর্মী আটক
আমেরিকার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ৮ মার্চ আলেহান্দ্রে পাবলো (৩২) নামে একজন নারী অভিবাসী অধিকার কর্মীকে আটক করেছে। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে আমেরিকায় বেশ কিছু অভিবাসী অধিকার কর্মী আটক হলেন। হিউম্যান রাইট ওয়াচ এ নিয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার কন্ঠগুলো বন্ধে নেতৃস্থানীয়দের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করছে আমেরিকার সরকার। এ ক্ষেত্রে অভিবাসন আইনের ধুয়া তোলা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আইসিই বেশ কিছু অভিবাসী অধিকার কর্মীকে হয় আটক করেছে, নয়তো দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে, আর নয়তো বহিষ্কার করার পদক্ষেপ নিয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে একজন গ্রিনকার্ড ধারী ও একজন ‘ড্রিমার’ (ডাকা অভিবাসনের আওতাধীন) রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আলেহান্দ্রে পাবলো আমেরিকার ন্যাশনাল লাতিনা ইনস্টিটিউট ফর রিপ্রোডাক্টিভ হেলথের মাঠ সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অ্যারিজোনাতে স্থানীয় আইসিই অফিসে পাবলোকে আটক করা হয় বলে জানা যায়।
ম্যাক্সিকান বংশোদ্ভূত পাবলো অল্প বয়স থেকেই আমেরিকায় বসবাস করে আসছেন। পাবলোর মা সহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই আমেরিকার নাগরিকত্ব প্রাপ্ত। আইসিই আটক করার পর পাবলোর পক্ষে আইনজীবীরা তাঁকে উদ্বাস্তু হিসেবে দেখিয়ে আদালতে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। যুক্তি হিসেবে বলা
হয়েছে, আমেরিকায় পাবলো লাতিন সমাজে সংস্কারমুখী কাজ পরিচালনা করে আসছিলেন। এ ধরনের সংস্কারমুখী কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক সংবেদনশীল। মেক্সিকোতে ফেরত পাঠালে তাঁর জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে।
পাবলো অভিবাসীদের অধিকার আদায়ে একজন শীর্ষ সারির সোচ্চার কর্মী ছিলেন। এ ছাড়া লাতিন নারীদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে পাবলো র্যাডিক্যাল কর্মী ছিলেন। সন্তান জন্মদানে নারী নিজস্ব পছন্দ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জন্মবিরতি করণ ওষুধ গ্রহণের সিদ্ধান্তে নারীর স্বাধীনতা তৈরিতে রাষ্ট্রীয় নীতি তৈরি করার আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন পাবলো।
স্বাভাবিক নিয়মে পাবলো হয়তো আর কিছুদিন পরই নাগরিকত্ব পেতেন। এখন তাঁর নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে পড়ল বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। এর আগে ২০১২ সালে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর মামলায় পাবলো দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কিছুদিন জেলেও থাকতে হয় সেবার। সেবারের মতো মুক্তি পেলে আদালত থেকে পাবলোকে শর্ত দেওয়া হয়, প্রতি তিন মাস অন্তর আইসিই অফিসে হাজিরা দিতে হবে। এবারও আইসিই অফিসে পাবলো গিয়েছিলেন তাঁর নিয়মিত হাজিরা দিতে। কিন্তু কোনো কারণ না দর্শিয়ে এবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত কয়েক মাসের আইসিইর কার্যক্রম দেখলে এটা পরিষ্কার হয় যে, অভিবাসী অধিকার কর্মী হওয়াতেই পাবলোকে আটক করা হয়েছে। আমেরিকায় দীর্ঘকাল বসবাসের নথিপত্র এবং পরিবারের লোকজনের আমেরিকার নাগরিকত্ব থাকার পরও আটককেন্দ্রে প্রেরণ করায় আন্দোলন কর্মীদের মনে আশঙ্কা দানা বাঁধছে। পাবলোকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। আর তা হলে পাবলো কোথায় যাবেন তা কেবল দুর্ভাগ্যই নির্ধারণ করে দেবে।
আমেরিকার অভিবাসন আইন বলে, পরিবারের কেউ আমেরিকার নাগরিক না হলে সাধারণত যে কোনো অনিবন্ধিত অভিবাসীকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। কিন্তু পাবলোর ক্ষেত্রে সে সমস্যা ছিল না। ফলে এখন তাঁর মুক্তির জন্য গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালানো হচ্ছে।
এদিকে, কয়েক মাস আগেই গ্রিন কার্ড থাকার পরও রবি রাগবির নামে ত্রিনিদাদের একজন অভিবাসীকে আটক করেছে আইসিই। নিউ স্যাংচুয়ারী কোয়ালিশনের (এনএসসি) প্রধান নেতা ছিলেন রবি। এনএসসি সারা আমেরিকায় ডিটেনশন ও অভিবাসী প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এনএসসির কর্মী হাইতির অভিবাসী জ্যঁ মন্ট্রিলকে সম্প্রতি আমেরিকা থেকে
বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ মন্ট্রিলও তিন দশক ধরে আমেরিকায় বসবাস করে আসছিলেন। মন্ট্রিলের চারটি সন্তানই আবার আমেরিকার নাগরিক।
আর্জেন্টিনার বংশোদ্ভূত দানিয়েলা ভেগাস আমেরিকায় এসেছিলেন কত ছোট থাকতে সে কথা এখন মনেও করতে পারেন না। ডাকা অভিবাসনের আওতায় ভেগাস ছিলেন একজন ‘ড্রিমার’। বাস করছিলেন মিসিসিপিতে। ড্রিমারদের আন্দোলনের সামনের সারির নেতা ছিলেন ভেগাস। ড্রিমারদের একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার কয়েক মিনিটের মধ্যে আইসিই গ্রেপ্তার করে ভেগাসকে আটককেন্দ্রে পাঠায়।
মেক্সিকোর একজন অনিবন্ধিত অভিবাসী মারু মোরা ভিল্লালপাণ্ডো। অনেক উঁচু পদে কর্মরত ছিলেন আমেরিকায়। অভিবাসী আন্দোলন কর্মী ছিলেন। গত ডিসেম্বরে আমেরিকা থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইমিগ্রান্ট রাইটস ক্লিনিক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, ফেডারেল ইমিগ্রেশন অথোরিটি সোচ্চার অভিবাসন অধিকার কর্মীদের বেছে বেছে হেনস্তার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের কণ্ঠ রোধ করার জন্য তাদের আটককেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে বা আমেরিকা থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
এই অধিকার সংগঠনটি আদালতকে আইসিইর অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ বন্ধে আশু পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।