মধ্যবিত্তের ওপর কর বাড়তে পারে
ট্রাম্প প্রশাসনের কর পুনর্গঠনের কারণে কোনো মধ্যবিত্তকেই বাড়তি কর গুনতে হবে না বলে কয় দিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককোনেল। কিন্তু নিজের এই বক্তব্যকে ‘ভ্রান্তি’ উল্লেখ করে এখন তিনি বলছেন, কর পুনর্গঠনের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কিছু অংশের ওপর বর্ধিত কর আরোপ হতে পারে।
১০ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে আলাপকালে কেন্টাকির এই রিপাবলিকান সিনেটর বলেন, ‘ভুল বলেছিলাম আমি। কারও ওপরই বর্ধিত কর আরোপ হবে না, এটা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি আয়ের শ্রেণিবিন্যাস করতে। প্রতিটি অংশে একটি গড় মান পর্যন্ত কর রেয়াত দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কর পুনর্গঠনে সিনেটে আনা আইনটি গৃহীত হলে লাখো মধ্যবিত্ত পরিবার করহার বৃদ্ধির মুখে পড়বে। একই সঙ্গে উচ্চ আয়ের ব্যক্তি ও করপোরেশনগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন সুবিধা দেবে এই পরিকল্পনা। তবে প্রতিনিধি পরিষদের তুলনায় সিনেট মধ্যবিত্তদের প্রতি এখন পর্যন্ত কিছুটা সংবেদনশীল। কিন্তু সিনেটের আর্থিক কমিটি আয়ের প্রতিটি স্তরেই কর ধার্যের প্রস্তাব করেছে। তবে ম্যাককোনেলের ভাষ্যমতে এর কর রেয়াত এবং এর হার প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে। তবে হিসাব যা-ই হোক না কেন, নতুন প্রস্তাবে অনেককেই কর বাবদ আগের চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে কর পুনর্গঠনই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি সফলভাবে করতে পারলে নতুন এ প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন হবে এটি। কর পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন মূলত দুটি লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়েছে। মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মধ্যবিত্তের ওপর কর কমানো এর প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু প্রস্তাবে ব্যক্তি ও ব্যবসা খাতের ওপর কর কমানোর কথা বলা হলেও কর রেয়াতের কিছু শ্রেণি তুলে দেওয়া হয়েছে। মূলত রাজস্ব ঘাটতি পোষাতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সিনেট আইনে কর কমানোর যে প্রস্তাব করেছে, তার এক-পঞ্চমাংশই ভোগ করবে ১ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি আয় করা পরিবারগুলো। আর অন্তত ২ লাখ ডলার আয় করে এমন পরিবারগুলো পাবে হ্রাসকৃত করা সুবিধার অর্ধেক। অথচ ১ লাখ ডলারের কম আয় করে এমন ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন পরিবারের ঘাড়ে চাপবে বর্ধিত করের বোঝা।
প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট করপোরেট কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনার প্রস্তাব করেছে। উন্মুক্ত সফটওয়্যার ট্যাক্সব্রেইনের মাধ্যমে নিউইয়র্ক টাইমস-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার ২০১৮ সালে বর্ধিত করের সম্মুখীন হবে, যার পরিমাণ গড়ে ১ হাজার ডলার হতে পারে। ২০২৬ সাল নাগাদ এটি আরও বাড়বে। সে সময় নাগাদ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মধ্যবিত্ত পরিবার বর্ধিত কর কাঠামোর আওতায় আসবে, পরিবারপ্রতি যার পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৬০০ ডলার করে। আর কর রেয়াত পাওয়া মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো গড়ে বার্ষিক মাত্র ১ হাজার ৩০০ ডলার সঞ্চয় করতে পারবে। ২০২৬ সাল নাগাদ এ সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে গড়ে ১ হাজার ৭০০ ডলার করে। এর বিপরীতে উচ্চ আয় করেন এমন প্রতি পাঁচজনের চারজনই পাবেন কর রেয়াতের সুবিধা।
নতুন করকাঠামোয় সবচেয়ে বড় অসাম্যটি সামনে আসে রেয়াত পাওয়া পরিবারগুলোর সম্ভাব্য বার্ষিক সঞ্চয়ের হিসাবে। এ কাঠামোয় বার্ষিক ৩০ হাজার ডলারের নিচে আয় করে এমন পরিবারগুলো বার্ষিক মাত্র ১৮০ ডলার সঞ্চয় করতে পারবে। ৩০ থেকে ৫০ হাজার ডলার আয় করা পরিবারগুলো পারবে ৬০০ ডলার সঞ্চয় করতে। ৫০ থেকে ৭৫ হাজার ডলার আয়ের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৯৭৬ ডলার। ৭৫ থেকে ১ লাখ ডলার আয়ের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১ হাজার ২৭৭ ডলার। আর ৫ লাখ ডলারের বেশি আয়ের ক্ষেত্রে বার্ষিক সম্ভাব্য সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৩১৩ ডলার।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর হিসাবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার বার্ষিক আয় রয়েছে এমন তিন সদস্যের পরিবারগুলোকে মধ্যবিত্ত ধরা হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবে এসব পরিবারকে ২০২৬ সালে বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে কর দিতে হবে। এ হিসাবে করপোরেট কর হ্রাস ও রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের প্রাপ্ত সুবিধাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
১০ নভেম্বর স্বাধীন ট্যাক্স ফাউন্ডেশন প্রবৃদ্ধির ওপর নতুন পরিকল্পনার প্রভাব সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ হাজির করে। সংস্থাটির তথ্যমতে, সিনেটের প্রস্তাব গৃহীত হলে মোট দেশজ উৎপাদন ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে। একই সঙ্গে অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে শ্রম মজুরি বাড়বে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। উচ্চবিত্তদের জন্য সিনেটের প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদের প্রস্তাবের চেয়ে বেশি নমনীয়। প্রতিনিধি পরিষদ উচ্চবিত্তদের ওপর বাড়তি করারোপের প্রস্তাব করেছিল। এ ছাড়া করপোরেশন নয় এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকও কিছুটা সুবিধা পাবেন।