মার্কিন অভিবাসনে ট্রাম্প আরোপিত কড়াকড়ির অবসান হচ্ছে

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

অভিবাসনের জন্য অর্থনৈতিক সামর্থ্যসংক্রান্ত একটি মামলা মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে, এ-সংক্রান্ত কড়াকড়ির অবসান হচ্ছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ‘পাবলিক চার্জ’ নামের একটি অভিবাসন বিধির কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এই বিধির ফলে আমেরিকায় অভিবাসনের পর সরকারি সাহায্য গ্রহণ করতে হবে—এমন লোকজনকে গ্রিন কার্ড না দেওয়ার নীতি আরোপ করা হয়। এমন নীতির ফলে পারিবারিক অভিবাসনে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য আগ্রহী লোকজন বিপদে পড়ে। আমেরিকায় থাকা অভিবাসীদের অনেকে ভীত হয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।

বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘পাবলিক চার্জ’ বিধিমালা জরুরি ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্পের অভিবাসন সংকোচনের নীতি হিসেবে ‘পাবলিক চার্জ’ বিধিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। মার্কিন অভিবাসনের শত বছরের পুরোনো আইনে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প চেয়েছিলেন অনগ্রসর দেশ থেকে আসা পারিবারিক অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে।

‘পাবলিক চার্জ’ বিধিকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা দায়ের করা হয়। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট তাঁর রায়ে ট্রাম্পের আরোপ করা বিধিমালা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এই রায়ের বিপক্ষে মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে প্রশাসন ও লিগ্যাল এইডের সঙ্গে সমঝোতা হয়। আদালতে দায়ের করা মামলাটি কোনো পক্ষই আর এগিয়ে না যাওয়ার পক্ষে সম্মত হয়।

বাইডেন প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত সলিসিটার জেনারেল এলিজাবেথ প্রেলগার ৯ মার্চ এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। তিনি বলেন, সব পক্ষের সম্মতির কারণে মামলাটি যেন বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরে মামলাটি বাতিল করে দেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।

মার্কিন অভিবাসনকে কঠিন করার কালাকানুন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

লিগ্যাল এইড সোসাইটির আইনজীবী সুজান উয়েলবার বলেছেন, প্রশাসন ও আদালতের এই পদক্ষেপ অভিবাসীদের জন্য স্বস্তি এনে দেবে।

বাইডেন প্রশাসনের বিধিমালার পুনর্মূল্যায়ন পর্যন্ত ট্রাম্প আরোপিত বিধিমালা স্থগিত থাকবে বলে লিগ্যাল এইডের এই আইনজীবী সিএনএনকে জানিয়েছেন।

বাইডেন ‘পাবলিক চার্জ’ নীতিমালা অবিলম্বে পুনর্মূল্যায়ন ও বিবেচনা করে স্পষ্টভাবে জনগণের কাছে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘পাবলিক চার্জ’ নীতিমালায় উদ্বিগ্ন লোকজনের মধ্যে যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে, তার জন্য পরিষ্কার করে তা ব্যাখ্যা করতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

লিগ্যাল এইড সোসাইটি ও অন্যান্য নাগরিক অধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের আরোপিত ‘পাবলিক চার্জ’ নীতিমালা ছিল বৈষম্যমূলক। আমেরিকায় অভিবাসনের জন্য স্বাবলম্বিতার পরীক্ষা একটি বৈষম্যের দেয়াল তুলে দিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পদক্ষেপ এ নিয়ে অভিবাসীদের উৎকণ্ঠা দূর করবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

২০১৯ সালে ট্রাম্পের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনার পর থেকেই অভিবাসীদের মধ্যে অজানা ভীতি কাজ করছিল। এমনকি করোনা মহামারিতে বহু অভিবাসী স্বাস্থ্যসুবিধা, ফুড স্ট্যাম্প, আবাসন সহযোগিতা গ্রহণে পর্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন।

১৮৮২ সালে প্রণীত মার্কিন অভিবাসন আইনে পাবলিক চার্জের কথা বলা আছে। তখনকার আইনপ্রণেতারা অভিবাসনের ক্ষেত্রে স্বাবলম্বিতার ওপর জোর দিতে আইনটি করেছিলেন। তবে এ নিয়ে আগে কখনো কোনো কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর অভিবাসীরা আমেরিকায় আসার পর বরং পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

আমেরিকায় অভিবাসন হওয়ার আগেই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করে ট্রাম্প অনগ্রসর দেশ থেকে অভিবাসনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে পাবলিক চার্জকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। এই সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, কোনো ব্যক্তিবিশেষ তাঁর জীবন নির্বাহের জন্য মোট ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি সরকারি সহযোগিতা গ্রহণ করাকে ‘পাবলিক চার্জ’ বলা হবে।

আরবান ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসীদের মধ্যে অনেকেই পাবলিক চার্জসংক্রান্ত ভীতির কারণে শিশুদের অভুক্ত রাখছে। নিজে সরকারি খাদ্যসুবিধা বা স্বাস্থ্যসুবিধা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছে। আবাসনসুবিধা গ্রহণ না করার ফলে লোকজন গৃহহীন হয়ে পড়ছে। এসবের কারণে জনজীবনে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসে মানবিক অভিবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি এ নিয়ে কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন। কংগ্রেসে অভিবাসন সংস্কার নিয়ে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও অভিবাসনবিরোধী রক্ষণশীলদের বিরোধিতা বাইডেনকে মোকাবিলা করতে হবে। গত চার বছরে ট্রাম্পের নেওয়া নানা পদক্ষেপ মোকাবিলা করে বাইডেন প্রশাসন অভিবাসনের ক্ষেত্রে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে, তা দেখার অপেক্ষায় অভিবাসী গোষ্ঠীগুলো।